পরিশেষে তারা অনুষ্ঠানের মাত্র এক পক্ষকাল আগে প্রেসিডেন্টের প্রতি যথাযোগ্য মন্তব্য করার বিলম্বিত আমন্ত্রণ জানায়। তাদের আমন্ত্রণের বিষয়টি ছিল ”যথাযোগ্য মন্তব্য” যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রতি এই অমন্ত্রণ।
আমন্ত্রণ প্রাপ্তির পর লিংকন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তিনি এডওয়ার্ড এভারেস্ট কে লিখে তিনি যে বক্তৃতা পেশ করবেন তার একটা অনুলিপি সংগ্রহ করেন। এর দুই একদিন পর ফটো তোলার জন্য একটি স্টুডিওতে গমন করেন। তথায় অবস্থান কালে প্রাপ্ত অবসর সময়ে তিনি এভারেটের বক্তৃতার অনুলিপি পড়ে ফেলেন, অতঃপর তিনি কয়েক দিন ধরে তাঁর বক্তব্য সম্পর্কে চিন্তা করেন।
হোয়াইট হাউস ও যুদ্ধ অফিসে গমন কালে চিন্তা করেন এই বক্তৃতা সম্পর্কে, চিন্তা করেন যুদ্ধ অফিসের কৌচে বসে গভীরভাবে। অফিসে সর্বশেষ তারবার্তার জন্য অপেক্ষা কালে তিনি চিন্তা করেন ধ্যান মগ্ন হয়ে। তিনি তার চিন্তা লিপিবদ্ধ করেন একটি ফুলস্কেপ কাগজের একটি টুকরায়, এটি রাখেন তার উঁচু টুপির মধ্যে। তিনি নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এই বিষয়টির ওপর চিন্তা করতে থাকেন, ফলে নতুন নতুন পয়েন্ট তার মনে আসতে থাকে। নির্দিষ্ট তারিখের পূর্ববর্তী রোববার তিনি নোয়া ব্রকসকে বলেন”এটা সঠিকভাবে লেখা হয় নি। এটা এখনো শেষ করাও যায় নি। আমি এটি দু’তিন বারের বেশি লিখেছি, তবে এটা সম্পর্কে আমি নিজে আজো সন্তুষ্ট হতে পারি নি, তাই এখানেনা এটা সম্পর্কে ভাবছি, ভাবছি আত্মসন্তুষ্টির জন্য।
অনুষ্ঠানের আগের রাত্রে প্রেসিডেন্ট লিংকন গেটিসবার্গ পৌঁছেন। ক্ষুদ্র শহরটি তখন জনসমাগমে পূর্ণ। মাত্র তের শো লোকের শহরে তখন ১৪ হাজার লোক উপস্থিত হয়েছে। নারী পুরুষের উপস্থিতিতে সারা শহর গগম্ করছে। লোকের ভিড়ে রাস্তায় চলাচল অসম্ভব। চারিদিকে ব্যান্ড বাজছে, জনতা ‘জন ব্রাউনের, নামের গান গাইছে। মি. উইলসের বাড়িতে লিংকন আতিথ্য গ্রহণ করেন। জনতা তথায় ভিড় করে তাকে কিছু বলতে অনুরোধ জানান! প্রত্যুত্তরে তিনি নিতান্ত সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন। তার এই বক্তব্য হতে এটা স্পষ্ট হয়ে পড়ে যে তিনি নির্দিষ্ট অনুষ্ঠানের আগে মুখ খুলতে চান না। শেষ রাতেও তিনি তাঁর বক্তব্যটি সংশোধন, সংযোজন করেন, যেন লেহন করেন। নিকটবর্তী যে ঘরে পররাষ্ট্র সচিব সিওয়ার্ড অবস্থান করেছিলেন, সে গৃহে গিয়ে তিনি তার বক্তব্য তার কাছে পেশ করে সমালোচনা করতে বলেন। পরদিন সকালে প্রাতভোজের পরও তিনি বক্তব্যটি পাঠ করতে থাকেন, যতক্ষণ না তাঁকে জানানো হয় যে শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে এবং তাতে তার অংশ নেয়ার সময় সমুপস্থিত। প্রেসিডেন্টকে অনুসরণকারী কর্নেল কার বলেছেন, শোভাযাত্রায় প্রেসিডেন্ট ঘোড়ায় চড়ে অংশ নেন এবং বাহিনী চলার দিকে লক্ষ্য রাখেন। কিন্তু শোভাযাত্রা চলতে শুরু করলে দেখা যায় যে, তার শরীর সামনের দিকে ঝুঁকেছে বাহু শিথিল হয়ে পড়েছে এবং মস্তক অবনত হয়ে গেছে, মনে হল, তিনি তন্ময় হয়ে কিছু ভাবছেন?
এটা হতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি তখন তার মাত্র দশটি বাক্যের অবিস্মরণীয় বক্তব্য নিয়ে ভাবছিলেন অর্থাৎ শেষ বারের মতো তিনি তার বক্তব্য চেটে নিচ্ছেলেন।
আধ্যাত্মিক বিষয়ে লিংকন প্রদত্ত অনেক বক্তব্যই ব্যর্থ বলে প্রমাণিত, কিন্তু দাসত্ব এবং রাষ্ট্রনীতি তার সকল বক্তব্যই অবিস্মরণীয়। এ সব বিষয়ে বক্তৃতা প্রদানে তার ক্ষমতা অতুলনীয়। কেন? কারণ তিনি সব সময় এসব বিষয় নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চিন্তা করতেন এবং এগুলি গভীর ভাবে অনুভব করতেন। ইলিয়েসের একটি কক্ষে জনৈক বন্ধু রাতে তার সাথে ঘুমান, পরদিন সকালে তিনি জেগে ওঠে দেখতে পান যে লিংকন দেওয়ালের দিকে মুখ করে বিছানায় বসে গভীর চিন্তার সাথে বলেছেন, “অর্ধ দাস অর্ধ মুক্ত এই সরকার দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারে না।”
যিশুখ্রিস্ট কীভাবে বক্তৃতা প্রস্তুত করতেন? তিনি নিজেকে জনতা হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতেন, চিন্তা করতেন, ধ্যানমগ্ন হতেন। ভাবতেন, তিনি একাকী নির্জন স্থানে চলে যেতেন, ধ্যান করতেন এবং চল্লিশদিন চলিশ রাত ধরে উপবাহ্রত পালন করতেন।” এই সময়ের পর, বলেছেন সেন্টম্যাথু, যিশু ধর্মপ্রচার শুরু করেন। এই ঘটনার অনতিকাল পরে তিনি একটি বক্তৃতা করেন যা বিশ্ব ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই বক্তৃতা ”সারমন অন দি মাউন্ট” নামে পরিচিত।
‘আমার এই বক্তব্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় তবুও আপনি প্রতিবাদ করতে পারেন কিন্তু অমর বক্তা হবার কোনো আকাঙ্ক্ষা আমার নেই। আমি সময়-সময় জনকল্যাণমূলক কিছু বক্তব্য আপনাদের সামনে পেশ করতে চাই।’
আপনি কী চান তা আমরা উপলব্ধি করি। আপনাদের সে আকাঙ্ক্ষা এবং আপনার মতে যারা চিন্তা করছেন তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যেই এই বই। অতীতে খ্যাতনামা বক্তারা যে-ভাবে বক্তৃতা শিখেছেন, বক্তৃতা অভ্যাস করেছেন সে পথ অনুরসণ করে আপনিও উপকৃত হতে পারেন।
কীভাবে আপনার বক্তৃতা প্রস্তুত করবেন :
কী বিষয় নিয়ে আপনি প্রস্তুতি শুরু করবেন? যে কোনো বিষয় যার প্রতি আপনার আগ্রহ জন্মে। একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বেশি সংখ্যক গুরুত্ব পূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করবেন। শুধুমাত্র একটি বা দুটি পয়েন্ট নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় এক বা দুটি পয়েন্ট সঠিকভাবে ও খোলাখুলি ব্যাখ্যা করা সম্ভব ও সহজতর। শ্রোতাও তা বুঝতে পারে, আকৃষ্ট হয়।