“‘ওই যে কালো ডোরা লেজওয়ালা সাদা হাঁসটা। পালের মধ্যে ঘুরছে।’
“‘ঠিক আছে, মেরে নিয়ে যা।’
“তারপর, মিস্টার হোমস, আমার বোন যেমনটা বলল, তেমনটাই করলাম। একটা হাঁস নিয়ে গেলাম কিলবার্নে। আমার বন্ধুকে আমার ফন্দির কথা বললাম। ওই লোকটাকেই একমাত্র সব কথা খুলে বলা যেত। আমরা খুব হাসলাম। তারপর একটা ছুরি নিয়ে হাঁসটা কাটলাম। কিন্তু পাথরটা সেখানে ছিল না। আমার তো মাথায় বজ্রাঘাত। নিশ্চয় কোনো ভুল হয়েছে। হাঁসটা ফেলে বোনের বাড়ি ছুটে এলাম। পিছনের উঠোনে গেলাম। কিন্তু সেখানে একটা হাঁসও ছিল না।
“বোনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হাঁসগুলো কোথায় গেল, ম্যাগি?’
“‘দোকানে গেছে, দাদা।’
“‘কোন দোকানে?’
“‘কভেন্ট গার্ডেনের ব্রেকিনরিজের দোকানে।’
“আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা আমি যে হাঁসটা নিয়েছি, ওই রকম দেখতে আরও একটা হাঁস আছে কী?’
“‘হ্যাঁ, দাদা। ওই রকম লেজওয়ালা দুটো হাঁস আছে। একই রকম দেখতে। আমি দুটোকে আলাদা করে চিনতে পারতাম না।’
“তখনই ব্যাপারটা জলের মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। দৌড়ে গেলাম ওই ব্রেকিনরিজ লোকটার কাছে। কিন্তু ততক্ষণে সে সব হাঁস বেচে দিয়েছে। আমাকে বললও না, কার কাছে বেচেছে। আপনারা তার কথাই শুনেছেন আজ রাতে। সবসময় ওইরকমভাবেই আমার সঙ্গে কথা বলেছে ও। আমার বোন ভাবছে, আমি বোধহয় পাগল হয়ে গেছি। আমার নিজেরই মনে হচ্ছে, আমি পাগল হয়ে গেছি। আর এখন… এখন আমি দাগি চোর! যেটা চুরি করে চোর হলাম, সেটাই হারালাম। ভগবান আমাকে রক্ষা করুন! ভগবান আমাকে রক্ষা করুন।’ লোকটা দুই হাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল।
অনেকক্ষণ কারো মুখে কোনো কথা ফুটল না। শুধু দীর্ঘশ্বাসের শব্দ। আর টেবিলের কানায় হোমসের আঙুল চালানোর টিপ টিপ শব্দ। তারপর হোমস উঠে দরজাটা খুলল।
বলল, “বেরিয়ে যাও!”
“অ্যাঁ, মশায়? ও! ঈশ্বর আপনার ভাল করুন!”
“একটাও কথা নয়। বেরিয়ে যাও!”
কোনো কথার দরকারও পড়ল না। লোকটা ছুটে বেরিয়ে গেল। দুড়দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দড়াম করে দরজাটা বন্ধ করে রাস্তায় গিয়ে পড়ল। তারপর শুনলাম রাস্তা দিয়ে তার ছুটে পালানোর পায়ের শব্দ।
পাইপটা টেনে নিয়ে হোমস বলল, “কথা হল, ওয়াটসন, পুলিশ আমাকে তাদের খামতি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য রাখেনি। হরনারের বিপদ থাকলে সে ব্যাপার আলাদা। তবে এই লোকটা তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে না। মামলাটাও আর টিকবে না। আমি যেটা করলাম, সেটা বেআইনি। কিন্তু এতে একটা লোককে বাঁচানো গেল। লোকটা আর চুরিচামারি করবে না। সাংঘাতিক ভয় পেয়েছে। এই লোকটাকে জেলে পাঠালে এ শেষটায় দাগি অপরাধীতে পরিণত হত। তাছাড়া এই উৎসব ক্ষমার উৎসব। কাকতালীয়ভাবে আমাদের দরজায় একটা রহস্য এসে পড়েছিল। সেটার সমাধান করতে পারাটাই আমার পুরস্কার। খাবার ঘণ্টাটা বাজাও, ডাক্তার, এবার অন্য একটা রহস্যের সমাধান করি। অবশ্য সেটাও এক পক্ষীরহস্য।”
–
রচনা-পরিচিতি
অনূদিত নাম: নীল পদ্মরাগ
মূল নাম: ‘দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য ব্লু কারবাঙ্কল’
মূল রচনা: স্যার আর্থার কোনান ডয়েল
অনুবাদ: অর্ণব দত্ত
অলংকরণ: সিডনি পেজেট
‘দি অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য ব্লু কারবাঙ্কল’ ব্রিটিশ লেখক স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস গল্প-সংকলন দি অ্যাডভেঞ্চার অফ শার্লক হোমস-এর বারোটি গল্পের মধ্যে সপ্তম গল্প। এটি ১৮৯২ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রথম প্রকাশিত হয় স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন-এ।
————————————————————–
পাদটীকা:
[*] কমিশনেয়ার (Commissionaire) – উর্দিপরা দারোয়ান
[†] ট্যালো (Tallow) – চর্বি দিয়ে তৈরি মোমবাতি।
[‡] অ্যাসিজেস (Assizes) – ইংল্যান্ডের কাউন্টি আদালত, ১৯৭১ সালে এই আদালত উঠে গিয়ে ক্রাউন আদালত চালু হয়।
[§] স্ট্রং বক্স (Strong Box) – মূল্যবান জিনিসপত্র রাখার দুর্ভেদ্য বাক্স।
[**] উডকক (Woodcock) – স্নাইপ-জাতীয় বড়ো পাখিবিশেষ।
[††] ফ্যানলাইট (Fanlight) – দরজার উপরকার ছোটো জানলা।
[‡‡] আলস্টার (ulster) –মোটা কাপড়ে নির্মিত লম্বা ঢোলা ওভারকোট, সাধারণত বেল্ট দেওয়া থাকে।
[§§] সভারেন (sovereign) – যুক্তরাজ্যে প্রচলিত এক পাউন্ড মূল্যের স্বর্ণমুদ্রা।
[***] ক্যাব (Cab) – ছোটো ঘোড়ার গাড়ি।
[†††] ম্যান্টলপিস (Mantelpiece) – ফায়ারপ্লেসের উপরের তাক।