হোমস বলল, ‘লক্ষ্মী ছেলে।’ টেবিলের টানা থেকে একজোড়া স্টীলের হাত-কড়া বের করে সে আর বলল, ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে এই ব্যবস্থাটা চালু কর না কেন? দেখ না, এর স্প্রিংটা কী সুন্দর কাজ করবে। মুহূর্তের মধ্যে আটকে ধরবে।’
লেস্ট্রেড মন্তব্য করল, ‘হাত-কড়া’ পরাবার লোকটিকে খুঁজে বের করতে পারলে পুরনো ব্যবস্থাও মন্দ কাজ করবে না।”
হোমস হেসে বলল, ‘খুব ভাল, খুব ভাল। গাড়োয়ান আমার বাক্সগুলো নামাতে নিশ্চয়ই সাহায্য করবে। উইগিন্স, তাকে উপরে আসতে বল।’
আমার সঙ্গী এমনভাবে কথা বলল যেন সে কোথাও ভ্রমণে বের হবে। এতে আমি বিস্মিত হলাম, কারণ এ সম্পর্কে সে তো আমাকে কিছুই বলে নি। ঘরের মধ্যে একটা ছোট পোর্টম্যান্টো ছিল। সেটাকে টেনে বের করে সে তাতে পটি আটকাতে লাগল। সেই সময় গাড়োয়ান ঘরে ঢুকল
সে তখন হাঁটু ভেঙে বসে পটি আঁটছিল। মুখ না ঘুরিয়ে বলল, ‘গাড়োয়ান, এই বকলসটা আটতে একটু সাহায্য কর তো।’
রুষ্ট, উদ্ধত ভঙ্গীতে এগিয়ে গিয়ে লোকটি কাজে হাত লাগাল। ঠিক সেই মুহূর্তে ক্লিক করে একটা শব্দ হল, ধাতুর কর্কশ আওয়াজ শোনা গেল এবং শার্লক হোমস লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল।
‘ভদ্রমহোদয়গণ’ ঝকঝকে চোখ মেলে সে চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ‘মিঃ জেফারসন হোপের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দি,–ইনিই এনক ড্রেবার এবং জোসেফ স্যাঙ্গারসনের হত্যাকারী।’
মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ব্যাপারটা ঘটে গেল। এতদ্রুত ঘটল যে কোন কিছু বুঝবার সময়ই পেলাম না। সেই মুহূতের স্মৃতি এখনও আমার মনে স্পষ্ট হয়ে আছে। হোমসের সগৌরব ঘোষণা, তার কন্ঠস্বর, গাড়োয়ানের বিহ্বল বিকৃত মুখ, ইন্দ্রজালের মত তার কণ্ঠস্বর, গাড়োয়ারনের বিহ্বল বিকৃত মুখ, ইন্দ্রজালের মত তার কজ্বিতে আটকে থাকা চকচকে হাত-কড়ার প্রতি তার চোখের দৃষ্টি-সব। দু’এক সেকেন্ডের মত আমরা সবাই যেন পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছিলাম। তারপরই একটা ক্রুদ্ধ দুর্বোধ্য গর্জন করে বন্দী হোমসের মুঠো থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জানালার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। তার ধাক্কায় কাঠের ফ্রেম ও কাঁচ ভেঙে গেল। কিন্তু সে সম্পূর্ণ বেরিয়ে যাবার আগেই গ্রেগসন, লেস্ট্রেড এবং হোমস শিকারী কুকুরের মত তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তাকে টেনে আনা হল ঘরের মধ্যে। তারপর শুরু হল এক প্রচন্ড সংঘর্ষ। লোকটি এতই শক্তিশালী ও হিংস্র যে আমাদের চারজনকে সে বারবার ছিটকে ফেলে দিতে লাগল। মনে হচ্ছিল সে যেন মুগীরোগক্রান্ত রুগীর মত অমিত বলশালী । কাঁচের ভিতর দিয়ে বের হবার চেষ্টার তার মুখ এবং হাত ভয়ংকর ভাবে কেটে গেছে। কিন্তু সে রক্তক্ষয়ের ফলে তার প্রতিরোধশক্তি হ্রাস পায় নি। একসময়ে লেস্ট্রেড যখন তার গলা-বন্ধনীর মধ্যে হাত ঢুকিয়ে তার গলায় ফাঁস আটকাবার উদ্যেগ করে ফেলল, তখন সে বুঝতে পারল আর লড়াই করে কোন লাভ নেই। তৎসত্ত্বেও যতক্ষণ তার হাত আর পা কসে একসঙ্গে বাঁধা না হল ততক্ষণ আমরা নিরাপদ বোধ করছিলাম না। সেটা হয়ে গেলে আমরা হাঁপাতে হাঁপাতে উঠে দাঁড়ালাম।
শার্লক হোমস বলল, ‘ওর গাড়িটা আছে। তাতে চড়িয়েই ওকে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া যাবে।’ তারপর স্মিত হেসে সে বলল, ‘ভদ্রমহোদয়গণ, আমাদের এই ছোট্ট রহস্যের সমাপ্তি ঘটল। এইবার আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে আমাকে জানান। এখন আর এমন কোন বিপদ নেই যার জন্য আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি অস্বীকার করব।