বাঞ্চ এবার ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা চিন্তা করার চেষ্টা করলেন। তিনি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন, তারপর ধীর পায়ে হেঁটে গেলেন তার একান্ত স্টাডিতে। যখনই তার মাথায় নানা চিন্তার মেঘ জমে, তিনি তখন স্টাডিতে বসে সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। ওখানে রেভারেন্ড জুলিয়ান হারমন বসেছিলেন। তিনি বোধহয় শান্তভাবে কোনো একটা ব্যাপার নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছিলেন। আসলে তিনি একটি নীতিবাক্য রচনা করছিলেন। সময় ও সুযোগ পেলে এমন ভাবেই তিনি ছন্দের তালে তালে নীতিবাক্য লিখতে ভালোবাসেন। তাঁর মনে হল এবার বোধহয় তার ভাবনায় ছেদ পড়ে যাবে। কারণ তিনি যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছিলেন, সেটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জুডিকা এবং পথদর্শনের মধ্যে রাজনৈতিক টানা পোড়েন, যেটা ঘটে গিয়েছিল মাইনাসের রাজত্বকালে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে গেল।
তিনি বললেন–প্রিয়তমা?
বাঞ্চ বললেন–জুলিয়ান স্যাংচুয়ারি শব্দটির আসল অর্থ কী, তুমি কি তা জানো?
জুলিয়ান অবাক চোখে স্ত্রীর দিলে তাকালেন। বেশ বুঝতে পারা যাচ্ছে, অভাবিত এই ঘটনাটা তাকে কতটা মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে। আসলে তিনি শান্ত জীবনযাপন করতেই ভালোবাসেন।
ভদ্রলোক বললেন–ঠিক আছে, আমি তোমাকে ওই শব্দটার আসল মানে বুঝিয়ে দিচ্ছি। রোমান এবং গ্রিক মন্দিরগুলোতে একটা ছোটো কুঠুরি থাকে, যেখানে কোনো এক দেবতার মূর্তি বসানো থাকে, তুমি বলতে পারো এটা হল দেবী এই শব্দটির ল্যাটিন পরিশব্দ, আজ এর মধ্যে আরেকটা ব্যাপার লুকিয়ে আছে যাকে আমরা নিরাপত্তা বলতে পারি।
যে কোনো বিষয়ে ভদ্রলোকের অসীম জ্ঞান। আসলে একেবারে ছোট বয়স থেকে তিনি গভীর ভাবে পড়াশোনা করেছেন বলেই বোধ হয় এই জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। তিনি গড়গড়িয়ে বলে চললেন–৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই শব্দটার একটা আলাদা গুরুত্ব ছিল। তখনকার দিনের খ্রিস্টিয় চার্চে এই শব্দটি একটি অতিরিক্ত মর্যাদা পেত। এখান থেকেই জনগণের প্রতি নানা নির্দেশ উচ্চারিত হত। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সব থেকে পুরোনো যে স্যাংচুয়ারিটির অস্তিত্ব আমরা দেখতে পাচ্ছি, সেটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দের এথেলবাট থেকে। তখন কিছু নির্দেশ জারি হয়েছিল, জনগণ এই নির্দেশনামা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে বাধ্য থাকত।
উনি হয়তো আরও কিছু কথা বলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতটা শোনার মতো ধৈর্য শ্ৰীমতীর নেই। মাঝে মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে থাকে। এবার এই কথোপকথনে ইতি টানতে হবে। শ্রীমতী বলে উঠলেন–প্রিয়তম, সত্যি তুমি কত জানো সব কিছু। তোমার জন্য আমার বেশ অহঙ্কার হয়।
উনি ঝুঁকে পড়ে স্বামীর নাকের ডগায় চুমুর চিহ্ন এঁকে দিলেন। হঠাৎ এই পট পরিবর্তনে জুলিয়ান কেমন যেন হয়ে গেলেন। মনে হল তিনি বোধহয় একটা কুকুরছানা, দারুন একটা খেলা দেখিয়ে মনিব পত্নীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
বাঞ্চ বলে উঠলেন–একলেস দম্পতি এখানে এসেছিলেন।
এবার ভাইকারের অবাক হওয়ার পালা। আসলে তিনি গভীর জ্ঞান সাগরে সাঁতার কাটতে ভালোবাসেন। তাঁর স্র ভঙ্গিতে জেগে উঠল ঔৎসুক্য। তিনি বললেন একলেস? আমার তো ঠিক মনে পড়ছে না……
–সেকি তুমি এর মধ্যেই তাদের ভুলে গেলে? চার্চে যে মানুষটি মারা গিয়েছিলেন, তাঁর বোন এবং বোনের স্বামী।
প্রিয়তমা তোমার উচিত ছিল আমাকে ডেকে পাঠানো।
বাঞ্চ কঠিন কণ্ঠস্বরে বললেন–আমি তার কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না, তারা তো শোক সংবরণের জন্য এখানে আসেননি, তারা এসেছিলেন সম্পূর্ণ অন্য কাজে। আমি যদি কালকের খাবারটা ক্যাসারোলে তুলে রাখি তাহলে তুমি কি সেটা খেয়ে নিতে পারবে, জুলিয়ান?
আমার মনে হচ্ছে, আমাকে লন্ডনে যেতে হবে, সেখানে সেল শুরু হয়ে যাবে।
রেভারেন্ড আবার অবাক হয়ে গেলেন। তিনি শূন্য চোখে স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন–সেলস মানে জাহাজ? সেটা কি ইয়ট, নাকি একটা নৌকা, অথবা এমন কিছু?
এবার বোধহয় বাঞ্চের রেগে যাবার পালা। তার পরিবর্তে তিনি খিল খিলিয়ে হেসে উঠে বললেন–না, ডার্লিং বাঘোস অ্যান্ড কোটম্যানের সাদা জিনিস পত্রের সেল শুরু হয়ে গিয়েছে। তুমি তো জান, এখন আমার বেডশিটের কত দরকার। টেবিল কভারটা নোংরা হয়ে গেছে। তোয়ালেগুলোও পালটাতে হবে। আরও কত কিছু টুকিটাকি জিনিস করতে হবে। আমি জানি না গ্লাসক্লথগুলো কী অবস্থা। কেচে কেচে সেগুলো তো প্রায় ছিঁড়েই গেছে। এছাড়া গভীর ভাবে চিন্তা করে তিনি বললেন-আমার মনে হয় একবার আন্টগ্র্যানের সঙ্গে দেখা করাটা খুবই জরুরী।
.
০২.
এবার আমরা ওই সুন্দর স্বভাবের বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা মিস মার্পল সম্পর্কে দুচার কথা শুনে নিই। এই মুহূর্তে তিনি তার মেট্রোপলিসে বসে ছুটির দিনগুলি উপভোগ করছিলেন। দেখতে দেখতে পনেরোটি দিন কেটে গেছে আহা, ভাইপোর কেনা এই স্টুডিও টাইপের ব্যালকনিতে থাকতে বেশ ভালোই লাগে। এখানে জীবনের সমস্ত উন্মাদনা জমা হয়েছে, জীবনটা এখানে বেশ অলসভাবেই কেটে যায়।
উনি বললেন–প্রিয়তম রেমন্ড, আমার ভাইপো আর জোয়ান আমেরিকাতে গেছে। দিন পনেরোর জন্য। তারা বলেছে আমি যেন এখানে এসে ফ্ল্যাটে দিন কাটাই। ডিয়ার বাঞ্চ, দেখি, তোমার চোখে মুখে এমন অস্বস্তিকর ছাপ পড়েছে কেন? তুমি কি কোনো ব্যাপার নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করছ?