অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠে–হ্যাঁ পুতুলটা বেশ ভালই আছে তাই না? আমি কী এখানে এসেছি বলে ওর কাছে মাফ চেয়ে নিতে হবে।
সাইবিল বলে–চলো আমরা বাইরে বেরিয়ে যাই।
তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে আসে। দরজাটা তালা বন্ধ করে দেয়। মহিলা দুজন পরস্পরকে পর্যবেক্ষণ করে।
অ্যালিসিয়া কোম্বে মন্তব্য করে–আমি জানি না এই ব্যাপারটা শেষ হবে কী করে। তুমি ঠিকই বলেছ, আমরা কী সত্যি সত্যি একটা পুতুলের ভয়ে ঘরটা ছেড়ে দেব?
শেষ অবধি কী হবে বল তো? পুতুলটা আমাদের সমস্ত সত্তাকে গ্রাস করে নেবে? ওটা কি একটা জীবন্ত পুতুল হয়ে উঠবে?
–আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে।
–কী ব্যাপার বলতো। এটা কী পুতুলটার বিষয়ে? তুমি কী জান ওই পুতুলটা সত্যি সত্যি কোথা থেকে এসেছে?
এই ব্যাপারটা একদম আমার মনে নেই। অ্যালিসিয়া বলে এ বিষয় নিয়ে আমি যত চিন্তা করি মাথাটা একেবারে গোলমাল হয়ে যায়। তবে যে ওকে আমি কিনিনি। এ ব্যাপারে আমি সুনিশ্চিত। আমার মনে হয় ওটা বোধ হয় কেউ উপহার হিসেবে আমাকে–দিয়েছে। অথবা ও নিজেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।
–উপহার হবে কী করে?
–তুমি এমন বোকার মত কথা বল না?
অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–হ্যাঁ, আমার কথার ভেতর যুক্তি নেই। আমি নিজেই বুঝতে পারছি না যুক্তি আসবে কোথা থেকে? দেখছে না পুতুলটা কেমন আচরণ করছে।
মনে হল ওরা বোধ হয় পুতুলটাকে নিয়ে এখন আলোচনা করবে। সাইবিল শোরুমে গেল, সে নানাকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারপর তারা আবার ফিরে এল ওয়ার্করুমে।–মিস কোম্বে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসুন।
-কী হয়েছে?
অ্যালিসিয়া কোম্বে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী করে। তার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ দেখা পড়েছে। গতকাল তার ঠিক মত ঘুম হয়নি। সাইবিল কী হয়েছে বল তো?
-দেখ দেখ, কী হয়েছে।
ওরা দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। আমার এটা হল শোরুমে। পুতুলটা বসে আছে সোফার ওপর। হাত পা ছড়িয়ে মুখে মিষ্টি হাসি। সাইবিল বলে দেখেছ! পুতুলটা বন্ধ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখানে এই ঘরটার উপর নিজের দখলদারি কায়েম করতে চাইছে।
অ্যালিসিয়া এবার চিৎকার করে বলেন, এবার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে, পুতুলটা বোধ হয় গোটা দোকানটা কিনতে চাইছে।
সাইবিল বলে তুমি ঠিকই বলেছ। অ্যালিসিয়া বলে ওঠে। চুপ চুপ শয়তানি পুতুলটা রয়েছে তাই না?
–এইভাবে আমার সবকিছু গ্রাস করবে? আমরা ওকে আর চাইছি না।
সাইবিলের কথাগুলো কেমন যেন শোনায়, পুতুলটা নড়ে চড়ে বসে। মনে হয় তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি সতেজ হয়ে উঠেছে। একটা হাত বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে, মুখটা ঢাকা থাকে। মনে হয় সে বোধ হয় পিট পিট করে তাকাচ্ছে তার আচরণের মধ্যে লাজুক শব্দটা ফুটে উঠেছে।
অ্যালিসিয়া বলে ওঠে–এতটা শয়তান আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তুই আমার চোখের সামনে থেকে বেরিয়ে যা।
হঠাৎ সাইবিলকে অবাক করে দিয়ে অ্যালিসিয়া ঘরের এক কোণে চলে যায়। পুতুলটাকে তুলে নেয়। জানলার কাছে চলে যায়। জানলাটা খুলে দেয়। তারপর পুতুলটাকে ছুঁড়ে দেয় রাস্তার দিকে। সাইবিলের মুখ থেকে ভয়ঙ্কর আর্তনাদ বেরিয়ে আসে। তখন সে অবাক হয়ে যায় বাধা দেবার সামান্যতম সুযোগ পায়নি।
–ও অ্যালিসিয়া, তুমি এমন করলে কেন?
এটা করা তোমার কখনো উচিত হয়নি। অ্যালিসিয়া কোম্বে জ্বলে ওঠে। এই প্রথম আমি বোধ হয় ভয়ের কাজকে জয় করতে পারলাম। আমি জানি ও আর কখনো এসে আমাদের জ্বালাতন করবে না।
সাইবিল অতিদ্রুত জানালার দিকে এগিয়ে যায়। তখন পুতুলটা শোয়ানো আছে। রাস্তার উপর, হাত পা গুলো ছিঁড়ে গেছে।
সাইবিল বলে ওঠে-তুমি ওকে মেরে ফেললে?
অ্যালিসিয়া বলল–বাজে কথা বলে না। যার মধ্যে জীবন নেই তাকে আমি হত্যা করব কী করে? ওখানে কী আছে বলতো?
ওখানে আছে ভেলভেট, চুল-ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো বা রঙিন চামড়া, ওটা কী একটা জীবন্ত পুতুল?
সাইবিল বলে ওঠে–হ্যাঁ, তুমি দেখনি, পুতুলটার মধ্যে প্রাণ স্থাপিত হয়েছিল।
অ্যালিসিয়া কথা বলতে পারে না। আমার মনে হয় কে যেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে। হায় ওই ছোট্ট মেয়েটা ছুটে আসছে না। পরেই পোশাক পরা একটি মেয়ে দ্রুত চলে আসে। তাকিয়ে থাকে সে এক দৃষ্টিতে পড়ে থাকা পুতুলটার দিকে। অনেকবার এপাশ-ওপাশ তাকায়। যখন দেখে কেউ তাকে দেখছে না, সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। বাড়ির পাঁচিল ডিঙিয়ে যায়। তখন সে নিচু হয় তারপর সে পুতুলটাকে কোলে তুলে নেয়। রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে।
চীৎকার করে অ্যালিসিয়া বলে-থাম থাম। সে সাইবিলের দিকে তাকায়।
তারপর বলে ওঠে–ওই পুতুলটাকে কেউ যেন ওখানে থেকে নিয়ে যেতে না পারে। ওই পুতুলটা সাংঘাতিক। ওটা একটা শয়তান। চলো আমরা বেরিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে আটকাই।
তারা খুব তাড়াতাড়ি বাইরে এগিয়ে যায়। কিন্তু সামনে তখন অনেকগুলো গাড়ি চলে এসেছে। তিনটে ট্যাক্সি একে অপরকে পথ করতে চাইছে না। তাদের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বেঁধে গেছে। তখনও গাড়িটাকে দেখা যাচ্ছে। সে একটা আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে আছে। সাইবিল ওকি। মৃত্যু পুতুলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
অ্যালিসিয়া কোম্বে তাকে শোনার চেষ্টা করছে না। একটা বড় ভ্যান এসে পথ আটকে দিয়েছে। সাইবিল বলে ওঠে কী করছ? সাইবিল আর অ্যালিসিয়া কোম্বেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছিল। তারা আস্তে আস্তে সেই আইল্যান্ডের দিকে এগিয়ে আসে।