এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন চিৎকার করে বললেন
কৌলিন আর বোকার মত আচরণ করো না, আমি কি তোমাকে জোর করে টেনে আনব নাকি?
তিনি এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে। কোনদিন মুখ দিয়ে একটা কড়াকড়া শব্দ করে তার বিরক্তি প্রকাশ করলেন।
শুরু হয়ে গেল কৌলিন্যের সাথে তার! মনিব পত্নীর লুকোচুরি খেলা। কৌলিন এখানে সেখানে ছুটে পালাবার চেষ্টা করছে। শেষ অবধি তাকে ধরা দিতেই হল।
শ্ৰীমতী গোমস বললেন–এই তো পুতুলটা এটাকে এখানে রাখ না। কোথাও দিয়ে আসতে হবে?
–কিন্তু কী করে?
মিসেস গোমস এবার ঘর পরিস্কার করবেন। তাকে এই কাজটা যত্নের সঙ্গে করতে হবে। ধীরে ধীরে সে ঘরে সবকিছু গুছিয়ে রাখল। ডাস্টার দিয়ে ঝাড়পোছ করতে লাগল।
মিসেস গোমস বলে ওঠেন–
–গতকাল কি পুতুলটা এখানে ছিল?
–এটা কবে এখানে নিয়ে এসেছ?
বললেন–তুমি কি এটা পছন্দ করছ না?
আমি বলতে পারি মিসেস ব্রাউন এই পুতুলটা মোটেই ভালো নয়। এটা কিন্তু অদ্ভুত স্বভাবের। আমি কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছেন তো?
–এ কেমনভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। একে দেখে মোটেই ভালো কিছু মনে হয় না।
এবার সাইবিলের রেগে যাওয়ার কথা। তুমি কিন্তু এই ব্যাপারে আগে আমাকে বিরক্তিকর কথা কখনোই বল নি।
-হ্যাঁ, বলেছি। আপনারা ব্যাপারটা পাত্তা দেন নি। আজ সকালের আগে পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আপনারা ভাবনা চিন্তা করেননি। আমি এই পুতুলটাকে এখানে বসে থাকতে দেখেছি।
এবার বোধ হয় তার অবাক হবার পালা, এই রাত্রিবেলায় আমি একটা স্বপ্ন দেখি, মনে হয় সে বোধ হয় কোনও রহস্য কথা চুপি চুপি বলতে চাইছে। ধীরে ধীরে সে শুটিং রুমে চলে গেল। তারপর তার এখন অনেক কাজ পড়ে আছে। এই হবে টুকিটাকি জিনিসপত্র সাজাতে হবে।
সাইবিল ওই পুতুলটার দিকে তাকাল। পুতুলটার মুখের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত উৎসুকের ছাপ লেগে আছে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে উঠল।
সাইবিল তার দিকে তাকাল,
মিস কোম্বের এই পুতুলটা আছে এখানে কতদিন ধরে?
এই পুতুলটা জিজ্ঞাসা প্রিয়। আমায় ক্ষমা কর। আমার তো মনে পড়ছে। গতকালকে পুতুলটা এখানে ছিল কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি তো বাইরে গিয়েছিলাম বক্তৃতা শুনব বলে।
দরকারী কথা মনে পড়ে যাওয়ার সুযোগে ফিরে আসি।
–আমি কোথায় যাচ্ছিলাম তাও আমার মনে নেই। আমার মনে হয় আমি বোধ হয় স্পটনামস্টে যাচ্ছিলাম। সেখানে গিয়ে কী করব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে। ওই লেকচারটার কথা আমার আর মনে পড়ছে না, সেখানে যে কী বকর বকর করা হয় তা আমি জানি না।
–একি হল আমার?
স্মৃতির থেকে আবেদন।
–আমি আমার চশমা কোথায় রেখেছি? আমার হ্যান্ডব্যাগের মধ্যে কি?
হ্যাঁ কি?
ঠিক খুঁজে পাচ্ছি না। আমি একটু তখন পত্রিকা পড়ছিলাম।
সাইবিল বলে উঠল-ম্যান্টলাপিসের ওপরে চশমাটা আছে। কিভাবে তুমি পুতুলটা পেয়েছ বললে না তো? একি? এটা কেউ তোমায় উপহার হিসাবে দিয়েছে?
অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না, এটা কেউ পাঠিয়েছিল, কি মনে পড়ছে না। তবে এখন বুঝতে পারছি পুতুলটা ঘরের পক্ষে নেহাতই বেমানান। কিন্তু কারোর উপহার তো দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া যায় না।
সাইবিল বলে উঠল–এটাকে এখানে রাখার কোনও দরকার নেই। আমি একে কোথায় রাখি বল তো!
-একটু সময় দাও আমি ভেবে চিন্তে বলব। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন-না। আমিও এখন একেবারে গোলমেলে অবস্থায় মধ্যে আছি।
-তোমার মাথাটা একটু পরিষ্কার থাকার দরকার। তোমার বয়স আমার থেকে অনেক কম।
কিন্তু
-সত্যি বলছি মিস কোম্বে, আমি একেবারে মনে করতে পারছি না। গতকালও আমি এটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এর মধ্যে একটা আশ্চর্য জিনিস লুকিয়ে আছে।
শ্রীমতী ফেলোস কিন্তু ঠিক কথাই বলেছেন। কি একটা অদ্ভুত রহস্য! আমার মনে হচ্ছে পুতুলটার মধ্যে একটা প্রাণ আছে। বা আমি সেই প্রাণের ব্যাপারটা বেশ উপলব্ধি করতে পারছি। আর কিছু আমার মনে নেই। পুতুল তো এমন আচরণ করে না।
–আজকে ওর আচরণের মধ্যে একটা পরিবর্তন এটা কি তোমাদের কারোর নজরে পড়ছে না?
-হতেও পারে।
–না, ও বোধ হয় বঁটার ওপর বসে জানলা দিয়ে ঢুকে পড়েছে একটু। মিস পুরো ব্যাপারটাকে তরল করার চেষ্টা করে।
ওটা আমাদের সম্পত্তির চারপাশে থাকবে বলে এসেছে। তারপর বলে–এই পুতুলটার কথা বাদ দিয়ে ঘরটার কথা ভাবতে পার না? একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখ তো!
সাইবিল বলে কাঁপতে কাঁপতে–তুমি ঠিকই বলেছ। এই পুতুলটা এখন এই ঘরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত হয়েছে।
-তাহলে?
–একবার ভাবত?
–একবার ভাববার চেষ্টা করলে আমার সমস্ত শরীরে কাঁপুনি দেখা দেবে।
–তাহলে আমরা পুতুলটা নিয়ে কী করব?
অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন–এই বেচারী পুতুলের মধ্যে এমনকি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে আছে?
মনে হচ্ছে সেটা যেন একটা পরিত্যক্ত আবর্জনার মত, অথচ এর প্রাণ আছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমি কি এর সাথে কথা বলব?
সে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেল। তারপর পুতুলটার দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই। তুমি এমন আচরণ করছ কেন? তোমার চোখে বিষণ্ণতার ছায়া, থিকথিক করে কাঁপছ কেন? তুমি কি কিছু বলতে চাও?
-তুমি এত লাজুক কেন?
–বল কি বলতে চাও?
বলে ওঠে সে শ্রীমতি ফেলোস ব্রাউন বোধ হয়–এইজন্য পুতুলটাকে দূরে ঠেলে সরিয়ে দেবার কথা বলছিলেন।