মিসেস ফেলোস-ব্রাউন বললেন–না না। অথচ রোগা আমি হই নি। এটা বেশ ভালো হয়েছে তো, তোমাদের কাট্টিয়ের মধ্যে একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। এটা আমার শরীরটাকে একটুখানি রোগা করে দিয়েছে।
মনে হয়, আমি যতটা সুন্দরী এটা পরে তার থেকে আরো বেশী সুন্দরী হয়ে উঠছি।
ছোট একটা জিজ্ঞাসা চাপার চেষ্টা করলেন ভদ্রমহিলা। এবার তাকে বোধ হয় চলে যেতে হবে। তিনি বললেন–একটু। ট্রায়াল দিলে ভালো হত।
কয়েক বছর ধরেই তো আমি তোমাদের তৈরী করা জিনিসপত্র ব্যবহার করছি। মনে হয় কাল তার দরকার হয়ত হত না।
–ঠিক আছে। ভবিষ্যতে আবার দেখা হবে। অ্যালিশিয়া কোম্বে বলে ওঠে–আমাদের আর কিছু হাতের কাজ দেখবেন নাকি?
মিসেস ফেলোস-ব্রাউন ঈষৎ চিন্তা করে হাটাহাটি করতে থাকেন।
তিনি বলে উঠলেন–এই কাজটাও সুন্দর হয়েছে মানতেই হবে। কি মনে হয় তোমাদের। তোমরা কোন্ ধরনের খদ্দের বেশি পছন্দ কর বল? তোমরা কি তোমাদের মহিলা খদ্দেরের পেটের দিকে তাকিয়ে দেখেছ? অনেকের পেটই বেঢপ হয়ে গেছে।
–তাতে কী সহযোগিতা হতে পারে?
–আমার দিকে দেখো না, আমি কত রোগা ছিপছিপে ছিলাম এখন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মুটিয়ে গিয়েছি।
নিজেকে ভালো করে দেখলেন তিনি আয়নার প্রতিফলনের মাধ্যমে। তারপর হঠাৎ বলে ওঠেন–বাঃ এই পুতুলটা তো ভারী সুন্দর।
–এটা এখানে কতদিন ধরে আছে? সাইবিল অ্যালিসিয়া অর্থপূর্ণ চোখে তাকাল। এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে একটু থমকে গেল। আসলে উত্তরটা দেবে কিনা ভাবছে?
তারপর আমতা আমতা করে শুরু করলেন। আমার ঠিক মনে পড়ছে না। আসলে সময়টা আমি ভুলে গেছি। আসলে এখন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আর মনে পড়ে না। আমার কি হয়েছে, আমার স্মৃতিলোপ ঘটে গেছে বোধ হয়। সাইবিল, আমরা পুতুলটা কবে এনেছিলাম বলো তো?
সাইবিল সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেয় আমারও ঠিক মনে পড়ছে না। এবার শ্রীমতি ব্রাউন বললেন ঠিক আছে। ও যেন আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে–বস্তুত ওর চোখের চাউনির মধ্যে কেমন একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। মনে হচ্ছে বোধহয় ও পোশাক সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। ওকি আমাদের বিদ্রূপ করছে নাকি? যদি ওই পুতুলটা আমার হত তাহলে আমি ওটাকে ভ্যানিস করে দূরে সরিয়ে দিতাম। ওর চাউনির মধ্যে একটা অশুভ সংকেত আছে। তোমরা কি তা বুঝতে পারছ না?
–কি আশ্চর্য, তারপর তিনি ওটা ভাবতে শুরু করলেন, তারপর পোশাক সম্পর্কে খুঁটিনাটি আলোচনার মেতে উঠলেন। মাঝে মধ্যেই পুতুলটার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছেন।
-তারপর বলে উঠলেন স্লিভটা ইঞ্চিখানেক ছোট করলে কি ভালো হত না? লম্বা ঝুলটা কেমন হয়েছে?
এই ব্যাপারগুলোর একটা মীমাংসা হওয়া দরকার। আসলে পোশাক সম্পর্কে শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন-এর খুবই খুতখুতানি।
উনি মনে করেন ওনার শরীর ঈশ্বরের একটা আশ্চর্য অবদান। সেটাকে সবসময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখতে হয়। উনি হাঁটতে হাঁটতে পুতুলটার দিকে আরো একবার তাকালেন। ওনার মনে হলো পুতুলটা ওনার দিকে তাকিয়ে আছে।
উনি বললেন-না, আমার আচার-আচরণ-এ পছন্দ হচ্ছে না। এটা এখানে কেন এনেছেন? এটা অস্বস্তিকর, এটাকে যদি বিদায় করে দাও।
এবার রেগে যাওয়ার ফলাফল সাইবিল বললেন–আপনি এসব কথা বলে কী বলতে চান?
মিসেস ফেলোস ব্রাউন তখন ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছেন নিচের দিকে, অ্যালিসিয়া কোম্বে উত্তর দেওয়ার আগেই, মিসেস ফেলোস ব্রাউন ঘাড় বেঁকিয়ে তাকালেন দরজার দিকে দৃষ্টি গেল তার। তিনি বললেন, ঠিক আছে। আমি অগ্রিম সম্পর্কে সবকিছু ভুলেই গেছি। ঠিক আছে। আমি কখনই এই বিষয়ে আর কথা বলব না।
তারা পরস্পর চোখাচুখি করল, পুতুলটা ওই সবুজ ভেলভেট আচ্ছাদিত চেয়ারের ওপর বসে আছে মনে হয় সে বুঝি পুতুলটাকে নিরীক্ষণ করছে চোখের মধ্যে। কোন ছাপ নেই। আগে এখানে কত কৌতুক খেলা করত।
এখন সেখানে শুধু অসহায়তা ফুটে ওঠে।
শ্ৰীমতী ফেলোস ব্রাউন বললেন–এসো এসো আমার ছোট্ট সোনামণি, এসো,
কিন্তু এই ছোট্ট সোনামনি তার, এই আকুল আহ্বানে কান দিল না, যেখানে ছিল সেখানেই বসে থাকল। তাই মিসেস ফেলোস ব্রাউন এবার এগিয়ে গিয়ে বললেন-তুমি দিন দিন দুষ্টু হয়ে উঠছ কিন্তু এরকম করলে আমি কিন্তু তোমাকে আর ভালোবাসব না। এসো এসো, দিন দিন।
কেঠালিন এবার তার মাকে এদিক ওদিক করল, তাকাল তার দিকে। কিন্তু বোঝ গেল এখন থেকে চলে আসার সময় সামান্যতম ইচ্ছে বা অভিপ্রায় তার নেই। সে সবকিছু গভীর দৃষ্টিতে পুতুলটাকে কন্ট্রিবিট করতে লাগল। মিসেস ফেলোস ব্রাউন বললেন, আমি তো এরকম আচরণ করতে ওকে কখনো বলিনি।
–একি?
–আমি এখানে শেষ কবে এসেছিলাম। আমি এখানে পুতুলটাকে দেখেছি?
কখন কি
এই কথা শুনে, বাকি দুই ভদ্রমহিলা অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে চোখাচোখি করল। সাইবিলকে এখন কিছু একটা বলতেই হবে। অ্যালিসিয়া কোম্বে বলে ওঠেন।
-আমার মনে নেই পুতুল টুতুল এখানে কবে থেকে আছে।
–সাইবিল তোমার কিছু মনে পড়ছে?
এবার মিসেস ফেলোস ব্রাউন জানতে চাইলেন–ও এখানে কী করে এল?
ওর কাছে কি আপনারা কিনেছেন?
-না না! অ্যালিসিয়া কোম্বে কোনরকমে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সামলে দেবার চেষ্টা করল–মনে হয় এটা বোধ হয় কেউ….
মনে পড়ছে না!
-আসলে ব্যাপারটা আমাদের স্মৃতির জগৎকে হারিয়ে গেছে। কত জিনিসতো মনে রাখতে হয়, তার মধ্যে একটা ছোট্ট পুতুল কী করে সর্বনাশ ঘটাতে পারে বলুন তো?