ঘরে গ্রিসলডা আর ডেনিসও ছিল। ওরা আমাদের ঘিরে বসল। ব্যাপারটা নিয়ে ওরাও খুব আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
মিস মারপল একসময় বললেন, মিঃ ক্লেমেট, আপনার নিশ্চয়ই অবাক লাগছে, এরকম একটা ঘটনার ব্যাপারে আমি উৎসাহিত হলাম কেন ভেবে।
আমি হেসে বললাম, খানিকটা বেখাপ্পা যে লাগছে না তা নয়। কিন্তু…
–দেখুন, সব মানুষেরই কিছু একটা হবি থাকে। যেমন কেউ উল বোনে, কারুর সমাজসেবামূলক কাজ, এমনি আরো কত। আমার হবিটা মানব প্রকৃতি বিষয়ে। একটু অদ্ভুত সন্দেহ নেই। কিন্তু বিষয়টা এমনই যে বিস্ময়ের অবধি থাকে না।
মিস মারপল সবার দিকেই একপলক তাকিয়ে নিলেন। পরে বললেন, যা হোক, এবারে আসল কথায় আসি। খুনের ঘটনাটা ক্রমশই এমন ভাবে জট পাকিয়ে উঠেছে যে, সবাই মিলে চেষ্টা না করলে শেষ পর্যন্ত এর তলায় পৌঁছনো যাবে না।
–কথাটা ঠিক বলেছেন। আমি বললাম, কিন্তু যা দেখছি, মনে হচ্ছে, প্রত্যেকেই কিছু না কিছু গোপন করে যাচ্ছি। ওটাই আশ্চর্য ঠেকছে আমার কাছে।
এরপর আমি তাকে তিন মহিলার কাছ থেকে ঘুরে আসার কথাটা বললাম।
তাছাড়াও মিসেস প্রথেরোর চিলেকোঠার ছবি আবিষ্কারের কথা, আর ডাক্তার হেডক যে কুড়িয়ে পাওয়া ক্রিস্টালটাকে পিকরিক অ্যাসিড বলেছেন সব কথাই তাকে খুলে জানালাম।
মনোযোগ সহকারে সবকথাই শুনলেন মিস মারপল। পরে বললেন, এর প্রত্যেকটা ঘটনাই গুরুত্বপূর্ণ। তবে খুনের ঘটনার সত্য উদঘাটনে ওগুলো থেকে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না।
আমি জিগ্যেস করলাম, পিকরিক অ্যাসিডের ব্যাপারটা মাথায় ঢুকছে না। ওটা ওই জঙ্গলের ভেতরে এল কি করে?
মিস মারপল গ্রিসলডার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি একটা গোয়েন্দা উপন্যাসে পড়েছিলাম, একটা লোককে ওই অ্যাসিড খাইয়ে মারা হয়েছিল।
–কিন্তু এখানে তো বিষ খাওয়ানোর কোন ঘটনা ঘটেনি।
এরপর খুনের ঘটনা সম্পর্কে আমি যে ছকটা করে রেখেছিলাম, সেটা মিস মারপলের হাতে তুলে দিলাম। বললাম, দেখুন তো চোখ বুলিয়ে, কোন পয়েন্ট বাদ পড়ল কিনা।
আমার ছকটা এই রকম–
বৃহস্পতিবার–কর্নেল প্রথেরোর সঙ্গে আমার কথা বলার সময় সকাল ১২-৩০ থেকে সন্ধ্যা ছটা থেকে ছটা পনেরোতে পরিবর্তন করে।
১২-৪৫ মিঃ–পিস্তলটা যথারীতি বুক সেলফের ওপরেই দেখা গেছে।
৫-৫০ মিঃ-কর্নেল প্রথেরো এবং অ্যানা প্রথেরো গাড়ি করে গ্রামে যান।
৫-৩০-ওল্ডহলের নর্থলজ থেকে আমার কাছে একটা চোরাফোন আসে।
৬-১৫ (দু-এক মিনিট আগে হতে পারে) কর্নেল ভিকারেজে পৌঁছান। আমি ছিলাম না বলে মেরী তাকে পড়ার ঘরে নিয়ে বসায়।
৬-২০ মিঃ–মিসেস প্রথেরোকে পেছনের রাস্তা ধরে একলা ফিরতে দেখা যায়। এরপর বাগান পার হয়ে তিনি পড়ার ঘরের জানালার কাছে যান। কিন্তু কর্নেলকে ঘরে দেখতে পান না। ।
৫-২৯ মিঃ(এক্সচেঞ্জ জানিয়েছে) লরেন্স রেডিং-এর বাড়ি থেকে মিসেস প্রাইস রিডলকে ফোন করা হয়।
৬-৩০–৬-৩৫ মিঃ–বন থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। লরেন্স রেডিং, অ্যানা প্রথেরো এবং মিস প্রাইস রিডলের জবানবন্দি থেকে জানা যায় শব্দটা আর একটু আগে শুনতে পাওয়া গেছে। সম্ভবত সেটাই ঠিক।
৬-৪৫-লরেন্স রেডিং ভিকারেজে আসে এবং মৃতদেহ দেখতে পায়।
৬-৪৮–আমার সঙ্গে লরেন্সের দেখা হয়।
৬-৪৯–আমি মৃতদেহ আবিষ্কার করি।
৬-৫৫-হেডক মৃতদেহ দেখতে আসে।
পুনঃ মিস ক্র্যাম এবং মিস লেসট্রেঞ্জ–এই দুজন মহিলাকে মনে হয় সন্দেহের বাইরে রাখা যায়।
মিস ক্র্যাম বলেছে যে, সে তার কাজের জায়গায় ছিল। অবশ্য তার এই কথার কোন সমর্থন মেলেনি। অবশ্য এর সঙ্গে খুনের ঘটনার কোন যোগ নেই। এই কারণেই তাকে সন্দেহের বাইরে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয়জন মিস লেসট্রেঞ্জ। তিনি কারো সঙ্গে ছটা বাজার পরে দেখা করবার কথা আছে বলে ডাঃ হেডকের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন?
মিস লেসট্রেঞ্জের সেই একজন বিশেষ ভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সেই একজনটি কে? মনে হয় কর্নেল প্রথেরোই সেই ব্যক্তি।
এটা বোঝা যাচ্ছে খুন হবার সময়ে মিস লেসট্রেঞ্জ অকুস্থলের কাছাকাছিই কোথাও ছিলেন।
মিঃ প্রথেরোর খুনের সঙ্গে মিস লেসট্রেঞ্জের কোন রকম যোগাযোগ কল্পনা করা যায় না। তার মৃত্যুতে মিস লেসট্রেঞ্জের লাভবান হবার মত কোন সূত্র নেই।
ইনসপেক্টর ব্ল্যাকমেল করবার যে তত্ত্ব তার সম্পর্কে বলেছিলেন, তা অর্থহীন। মহিলাকে দেখলে সেরকম মনেই হয় না।
আবার লরেন্স রেডিং-এর পিস্তলটা তার ঘর থেকে এই মহিলা সরিয়েছেন, এমন ধারণাও করা যায় না।
খুব মনোযোগ দিয়ে ছকটায় চোখ বোলালেন মিস মারপল। মনে হল খুশি হয়েছেন।
–পর্যালোচনা বেশ ভালই হয়েছে।
আমি জানতে চাইলাম, আশা করি আমার লেখার সঙ্গে আপনি একমত
নীরবে ঘাড় নাড়লেন মিস মারপল।
–নিশ্চয়ই আপনার মনে আছে, একবার আপনি বলেছিলেন, এই ঘটনার ব্যাপারে একসঙ্গে সাতজনকে সন্দেহ করা যায়। ওকথা বলে কি বোঝাতে চেয়েছিলেন তা পরিষ্কার হয়নি। এখন আপনার সন্দেহের আওতায় কে কে রয়েছেন?
মিস মারপল অন্যমনস্কভাবে বললেন, আমি বোঝাতে চেয়েছিলাম, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি লোককেই আমি সন্দেহ করি।
প্রত্যেকে যদি সমস্ত কথা খুলে বলে তাহলে ঘটনার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের ব্যাপারটা অনেকটাই বেরিয়ে আসবে। তখন একটা তত্ত্ব খাড়া করা সম্ভব হবে। কিন্তু সেই সুযোগ তো পাওয়া যাচ্ছে না। আর ওই চিরকূটটা