নিচের দিকে চোখ পড়তে মেঝেয় চেয়ারের একপাশে পিস্তলটা চোখে পড়ল। সেটা তুলে হাতে নিয়েই বুঝতে পারলাম, আমার পিস্তল।
–এরপর তুমি কি করলে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
–এখানে ওই অবস্থায় আমার পিস্তলটা দেখে আমি ঘাবড়ে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় এসে গেল, নিশ্চয়ই মিসেস প্রথেরো কোন সময়ে আমার পিস্তলটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। হয়তো ভেবেছিল, অতিষ্ট হয়ে উঠলে সেটা নিজের ওপরই ব্যবহার করবে। আমার ধারণা হল, আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ও এখানেই এসেছিল। তারপর…উঃ। আমি আর ভাবতে পারছি না মিঃ ক্লেমেন্ট।
বলতে বলতে অসহিষ্ণুভাবে মাথা চেপে ধরল লরেন্স।
স্বাভাবিক। সহানুভূতির সুরে বললাম আমি।
–তারপর তুমি কি করলে? মিঃ মেলচেট জানতে চাইলেন।
–আমি তৎক্ষণাৎ পিস্তলটা পকেটে পুরে ফেললাম। ঘর থেকে বেরিয়ে গেটের মুখে আসতেই মিঃ ক্লেমেন্টের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তিনি কথা প্রসঙ্গে জানালেন প্রথেরোর সঙ্গে তার দেখা করবার কথা আছে।
আমার তখন মানসিক অবস্থা এমন যে কি করছি কি বলছি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
আমার আচরণের অস্বাভাবিকতা দেখে যে ভিকার আশ্চর্য হয়েছে তা বুঝতে পেরেছিলাম।
আমি সেখানে আর দাঁড়াতে পারিনি। ছুটে রাস্তায় এসে উদভ্রান্তের মত রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আমার তখন কেবলই মনে হচ্ছে, অ্যানা যদি এটা করেই থাকে, তাহলে তার জন্য পরোক্ষ ভাবে আমিই দায়ী। শেষে মরীয়া হয়ে পুলিসের কাছে গিয়েছি।
লরেন্সের কথা শেষ হলেও অনেকক্ষণ আমরা কেউই কোন কথা বলতে পারলাম না। তারপর একসময় মিঃ মেলচেট নীরবতা ভঙ্গ করলেন।
বললেন, আচ্ছা রেডিং একটা কথা, টেবিলের ওপরে মৃতদেহের আড়ালে পড়ে থাকা কোন চিরকুট কি তোমার চোখে পড়েছিল?
–না, তেমন কিছু দেখতে পাইনি।
–কোন কারণে ঘড়িটায় কি হাত দিয়েছিলে?
-না, সেটা ধরবার কোন কারণই ঘটেনি। তবে চোখে পড়েছিল টেবিলের ওপর উল্টে পড়ে আছে।
মিঃ মেলচেট একটু নড়েচড়ে বসে বললেন, এবারে মনে করতে পারছ কিনা দেখতে, পিস্তলটা তুমি শেষ কবে দেখেছিলে?
লরেন্স একটু চিন্তা করল। এরপর বলল, এটা ঠিকভাবে বলা শক্ত।
–বেশ, ওটা সাধারণত তুমি কোথায় রাখতে?
-বুককেসের ওপরের তাকেই সাধারণত রাখতাম। তবে খুব যত্নে যে থাকত তা নয়। পিস্তলটার ব্যাপারে আমার তেমন আগ্রহ ছিল না কোন কালেই।
-তাহলে তো দেখছি তোমার বসার ঘরে যে কেউই সেটা দেখতে পেত?
–হ্যাঁ। তা সম্ভব ছিল।
–তাহলে শেষ ওটা কবে দেখেছ, সঠিক বলতে পারছ না?
জবাবে মাথা নাড়ল লরেন্স। পরে কি চিন্তা করে বলল, যতদূর মনে করতে পারছি, গত পরশু পর্যন্ত পিস্তলটা ওই তাকের ওপরেই দেখেছি। ব্যাপারটা মনে আছে এই জন্য যে ওটা সরিয়ে সেদিন একটা পাইপ বার করেছিলাম।
–আর একটা কথা, সম্প্রতি তোমার বাড়িতে কে কে গেছে?
–অনেকেই তো যাচ্ছে আসছে, কার কথা বলব! তবে গত পরশু আমি একটা টি-পার্টি দিয়েছিলাম। সেদিন অনেকেই আমার ওখানে গিয়েছিল।
–বাইরে বেরিয়ে যাবার সময় কি তুমি দরজায় চাবি লাগিয়ে যাও?
–একদম না। দরকারই হয় না। চুরি হবার মত কোন জিনিসই তো আমার ঘরে নেই। তাছাড়া এখানে কেউ তেমন করেও না।
-তোমার ঘরদোর দেখাশোনা করে কে?
-মিসেস আর্চার নামে বৃদ্ধা এক মহিলা। সে পিস্তলের ব্যাপার কিছু বলতে পারবে না। তবে ইচ্ছে করলেই যে-কেউ আমার ঘর থেকে পিস্তলটা সরিয়ে ফেলতে পারে।
ঠিক এমনি সময়ে মিসেস প্রথেরোকে নিয়ে ডাঃ হেডক উপস্থিত হলেন। লরেন্স আর মিসেস প্রথেরো পরস্পরকে দেখে বিস্মিত হলেন।
মিসেস প্রথেরো মিঃ মেলচেটকে জিজ্ঞেস করলেন, একটু আগে ডাঃ হেডকের কাছ থেকে যা শুনলাম তা কি সত্যি?
মেলচেট বললেন, হ্যাঁ, মিসেস প্রথেরো। রেডিং এখন সন্দেহমুক্ত। এখন আমরা আপনার কথা শুনতে চাই।
মিসেস প্রথেরো আমার মুখের দিকে একপলক তাকালেন। তারপর বলতে শুরু করলেন, হা সবই বলছি খুলে। সেদিন সন্ধ্যাবেলা লরেন্স রেডিং-এর সঙ্গে তার স্টুডিও ঘরে আমার দেখা করার কথা ছিল।
সওয়া ছটা নাগাদ আমি আর আমার স্বামী গাড়ি করে গ্রামে যাই। আমার কিছু কেনাকাটার দরকার ছিল।
আমরা যখন পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিই সেই সময়ে তিনি বলেছিলেন যে ভিকারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। শুনে আমার একটু অস্বস্তি হয়েছিল। আমাকেও তো লরেন্সের স্টুডিওতে যেতে হবে। ভিকারেজে স্বামীর উপস্থিতিতে আমাকে যেতে হবে, এটাই ছিল অস্বস্তির কারণ।
-তারপর?
–আমার স্বামী সম্ভবত বেশিক্ষণ ভিকারেজে ছিলেন না। যাই হোক, আমি পেছনের রাস্তাটা দিয়ে বাগানে ঢুকেছিলাম। ভেবেছিলাম, তাহলে কেউ আমাকে দেখতে পাবে না।
কিন্তু আমাকে দেখতে পেয়ে মিস মারপল ডাকল। বাধ্য হয়েই দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে দু-একটা কথা বলতে হল।
মিস মারপলের সঙ্গে কথা বলে ভিকারেজ পার হয়ে পেছনদিক দিয়ে ঘুরে ঘরের জানালার কাছে এসে দাঁড়ালাম।
ভেতরে কোন শব্দ শুনতে পেলাম না। তখন গুঁড়ি মেরে উঁকি মারলাম। কিন্তু দেখলাম, ঘর ফাঁকা–কেউ নেই।
এরপর আমি স্টুডিও ঘরে চলে এলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই লরেন্স এসে হাজির হল।
–পড়ার ঘরটাতে আপনি কাউকেই বসে থাকতে দেখেননি?
–না। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেছিলাম, সেখানে আমার স্বামী ছিলেন না।
চীফ কনস্টেবল মিঃ মেলচেট নীরবে কি ভাবলেন। পরে বললেন। কিছু মনে করবেন না মিসেস প্রথেরো, আপনি কি ভাবে কি করেছিলেন, দয়া করে একবার আমাদের দেখাবেন?