হ্যাঁ, প্রায়? মিস বার্কলি অন্যমনস্ক গলায় উত্তর দেয়।
পোয়ারো দড়িটা দেখতে দেখতে বলে–আগের দড়িটা আছে কি?
নিক অবাক গলায় বলে–একটা ছেঁড়া তার, সেটা রেখে দেওয়া হবে কেন?
পোয়ারো গভীর আক্ষেপের মাথা নাড়ে–মাদাম জোয়েল, তারটা দেখলে বোঝ যেত সেটা সত্যিই ছিঁড়ে গিয়েছিল না কি সেটা কেটে দেওয়া হয়েছিল?
নিক খুবই তাচ্ছিল্যের গলায় বলে-না, না, সেরকম কিছুই নয়। ওটা নিছকই একটা দুর্ঘটনা ছিল। আর কিছুই হতে পারে না।
হ্যাঁ, মাদাম জোয়েল জোর গলায় বলা যায় না যে এটা দুর্ঘটনা নয়। কিন্তু আপনার গাড়ির ব্রেক নট করে দেওয়া বা পিস্তলের গুলি ছোঁড়া, এগুলো কোনভাবেই দুর্ঘটনা হতে পারে না। এমন কি পাথরের চাতাল থেকে পাথরের চাঁই গড়িয়ে পড়া, সেটাও খুবই সন্দেহজনক।
পোয়ারো এবার বাড়িটা ভাল করে ঘুরে ঘুরে দেখল। সারা বাড়িতে আশ্চর্য এক নিঃশব্দ বিরাজমান।
মাদাম, আপনার বন্ধুদের মধ্যে এমন কেউ আছেন যাকে আপনি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেন?
বলতে গেলে ফ্রেডি। কেন বলুন তো?
এখন থেকে আপনার সঙ্গে কারও সর্বক্ষণ থাকা উচিত, পোয়ারো গম্ভীর গলায় বলে।-তবে মিসেস রাইসনয়। অন্য কেউ।
কথাগুলো শুনে নিক এবার যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারপর কি যেন ভাবে কিছুক্ষণ–এবার বলে ম্যাগি, ওর ওপর ভরসা করা যায় অবশ্যই।
ম্যাগি? তিনি কে?
আমার ইয়র্কশায়ারের তুতোদের একজন। একটু থামে নিক। পোয়ারোর মুখের দিকে তাকায়–আমারই সমবয়সী। ওকে দিয়ে আপনার কাজ চলবে?
নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই। আপনার তুতো বোন যখন তিনি নিশ্চয়ই ভরসাযোগ্য।
নিক একটা গভীর শ্বাস ছাড়ে।–বেশ–আমি তাহলে ম্যাগিকে তার পাঠাচ্ছি, কিন্তু ওকে আপনি ঠিক কি করতে বলছেন?
মাদাম জোয়েল বার্কলি, সম্ভব হলে, না না সম্ভব হলে নয়, নিশ্চিত করবেন যেন উনি রাতে আপনার সঙ্গে ঘুমোন।
ঠিক আছে।
কিন্তু এরকম একটা আবদার করলে উনি কিছু মনে করবেন না তো?
না না, ম্যাগি সেরকম মেয়ে নয়। তাছাড়া আমরা খুবই ঘনিষ্ট।
আমরা আবার বসবার ঘরে এসে বসলাম। নিক কিছুটা বিভ্রান্ত গলায় বলে–আপনি কি সব ঘটনা ম্যাগিকে জানাবেন?
না, না, আপনি নিশ্চিত থাকুন ম্যাদাম। আর যাই ঘটুক, সব কিছু সাহসের সঙ্গে মুখোমুখি হবেন। একটু থেমে পোয়ারোর যেন হঠাৎ মনে পড়ল–ওহ, ভাল কথা, আপনি কি কখনও সম্পত্তির ইচ্ছাপত্র করেছিলেন?
হ্যাঁ, অপারেশনের আগে আমি একটা ইচ্ছাপত্র করেছিলাম।
অপারেশন?
হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারো আমার অ্যাপেনডিক্স অপারেশন হয়েছিল মাসছয়েক আগে। তখন আমার মনে হয়েছিল তার আগে একটা উইল করে যাওয়া উচিত।
পোয়ারো আমার দিকে তাকায়। ওর চোখের ভাষা আমার চেনা। তাই অপ্রিয় প্রশ্নটা আমাকেই করতে হল।
মিস বার্কলি যদি কিছু মনে না করেন, সেই উইলের ব্যবস্থাটা কিরকম ছিল?
নিক একটা শ্বাস নেয়। একটু ভেবে নিয়ে বলে–এন্ড হাউসটা চার্লসের নামে লিখে দিয়েছিলাম আমি। এছাড়া আর আমার তেমন কিছু সম্পত্তি নেই।
পোয়ারো অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে। তারপর নিকের দিকে তাকিয়ে বলে–মাদাম জোয়েল এবার আমরা আসব।
একটু থেমে নিকের দিকে তাকায়–মাদাম একটু সাবধানে থাকবেন।
নিক আশঙ্কিত চোখে তাকায়–কি থেকে?
পোয়ারো উদাস গলায় বলে–সেটা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। আশাকরি দিন কয়েকের মধ্যে আসল সত্যটা আমি আবিষ্কার করতে পারব। আপাতত নিজের বিচার বুদ্ধিকে ব্যবহার করে সতর্ক থাকবেন–কোথায় আপনি নিরাপদ, কোন দিক থেকে বিপদ আসতে পারে।
.
০৪.
কিছু ঘটবে, ঘটবেই
পোয়ারো রাস্তায় এসে দাঁড়ানো মাত্র আমি বললাম-একটা কথা তোমার অতি অবশ্যই জেনে রাখা উচিত।
সেটা কি?
আমি আজ দুপুরে কম্যান্ডার শ্যালিঙ্গারের মুখ থেকে শোনা নিকের দুর্ঘটনাগুলো বর্ণনা করলাম।
বেশ মনযোগ দিয়ে পোয়ারো কথাগুলো শুনল। তারপর হাসিমুখে বলে–হ্যাঁ, অবশ্যই এরকম কিছু চরিত্র থাকে যারা এধরনের ভয়ঙ্কর গল্প নিজের সম্পর্কে প্রচার করে সবার কাছে, অন্যদের কাছে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে চায়।
আমি সরাসরি পোয়ারোর মুখের দিকে তাকাই। ওর মনের ভাব পড়বার চেষ্টা করি।
তোমার কি মনে হয় মিস বার্কলি……
পোয়ারো আমার কথা শেষ করতে দেয় না, বাধা দিয়ে বলে ওঠে–না, না, হেস্টিংস, অবশ্যই নয়–তুমি লক্ষ্য করনি, উনি সত্যি সত্যি চরম বিপদের মধ্যে রয়েছেন সেটা ওনাকে বোঝাতে আমার কেমন ঘাম ছুটে গেল?–যদিও বা বোঝানো গেল, তবু মনে হয় না নিজের বিপদের ব্যাপারটা উনি পুরোপুরি বিশ্বাস করেছেন।
তাহলে? অকারণে কেন শ্যালিঙ্কার আমাকে ওইসব কথাগুলো বলল?
নিছক মিথ্যেবাদী প্রতিপন্ন করতে চাইল কেন? সবচেয়ে যেটা বড় হয়ে আমার চোখে এখন ধরা পড়েছে, কম্যান্ডার শ্যালিঙ্কার দুপুরে গায়ে পড়ে আমার সঙ্গে ভাব জমিয়েছিলেন এই কথাগুলো বলবার জন্যেই। সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে টেনে এনেছিলেন ব্যাপারটাকে, কিন্তু কেন? মিস বার্কলিকে মিথ্যেবাদী বানিয়ে ওনার কি লাভ?
পোয়ারোকে কথাগুলো বলতে সেও মৃদু রহস্যময় হাসি হাসল।
তুমি সত্যি খুব ভাল জায়গায় আঙুল ছুঁইয়েছ বন্ধু। কিন্তু সত্যি কথাটা হল আমরা এখনও উত্তরটার দরজায় পা রাখিনি।
কিন্তু পোয়ারো আমি প্রশ্ন করি–তুমি এত তাড়াহুড়ো করে মাদাম জোয়েলের তুত বোনকে ওনার সঙ্গে থাকবার ব্যবস্থা করলে কেন?