নিক থামলেন। কাঁধ ঝাঁকালেন, তারপর আবার বলতে লাগলেন বেশ কিছুটা কৌতুক মিশিয়ে–নিশ্চয়ই বলবেন–আপনি ছবি আঁকেন, আর আমার কাছ সেই ছবি বিক্রি করতে চান?
না, তা হতে পারে না। ওই গোঁফ, তারপর ম্যাজিস্টিকের মত দামি হোটেলে যিনি উঠেছেন–তিনি তো যেরকম কিছু হতে পারেন না।
এরই মধ্যে সেই আগের পরিচারিকা মহিলাটি ককটেলের সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ঢোকে। নিপুন হাতে ককটেল বানায় নিক। আমাদের হাতে গ্লাস তুলে দিয়ে নিজেও একটা গ্লাস তুলে নিয়ে সোফায় গুছিয়ে বসে। তারপর তীক্ষ্ণ চোখে পোয়ারোর দিকে তাকায়। তাহলে………?
পোয়ারো শান্ত ভঙ্গিতে গ্লাসে চুমুক দেয়–আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করে, তার আগে গ্লাস সহ হাত উঁচু করে বলে। মেয়েটি মোটেই বোকা নয়। পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝা যায় তার গলার আওয়াজে-কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার?
অবশ্যই মাদাম জোয়েল। পোয়ারো কয়েকমুহূর্ত থামে, প্রখর চোখে নিককে নিরীক্ষণ করে। তারপর হাতটা মুঠো করে এগোয় হাতটা খুলতেই, তালুর মধ্যে ধরা বুলেটটা।
এটা কি আপনি জানেন?
নিক বিস্ফারিত চোখে বস্তুটার দিকে তাকায়।অবশ্যই। আমি জানি। এটা বুলেট।
ঠিক। সকালে আপনি যেটাকে মৌমাছি বা ভোমরা বলে মনে করেছিলেন–আপনার মুখের পাশ দিয়ে যেটা ছুটে গিয়েছিল, যেটা মোটেই এই ধরনের কিছু ছিল না। বরং ছিল এটা।
নিক বিস্ফারিত চোখে তাকিয়েই থাকে, তারপর আতঙ্কিত গলায় বলে–তার মানে আপনি বলতে চান হোটেলের বাগান থেকে সকালে আমাকে লক্ষ্য করে কেউ গুলি চালিয়েছিল?
তাই তো মনে হচ্ছে।
নিক কয়েকমুহূর্ত থম মেরে বসে থাকে, তারপর থতমত গলায় আতঙ্ক মেশা ভঙ্গিতে বলে,-কয়েক দিনের মধ্যে আমাকে খুনের চতুর্থ চেষ্টা।
আমি বাকি তিনটের ব্যাপারে জানতে চাই আপনার কাছে।
মৃদু হেসে যোগ করে দুঘর্টনা। নিক সোজা স্পষ্ট চোখে পোয়ারোর দিকে তাকায়। বন্ধুবর নিকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে–আমি নিশ্চিত হতে চাই যে ওগুলো কোন দুর্ঘটনা নয়, নিশ্চিতভাবেই খুনের চেষ্টা।
নিশ্চয়ই তাই-ই। অন্য কিছু হতে যাবে কেন? পোয়ারো তার গোঁফে মোচড় দেয়–তাহলে মাদাম জোয়েল, আমার মনে হয় মানসিকভাবে আপনার আরও বেশি বিপদের জন্য তৈরি থাকতে হবে। কে আপনার প্রাণহানি ঘটাতে চাইছে?
এবারে নিক হাসিতে ভেঙ্গে পড়ে–হে ভগবান, আমাকে কে খুন করতে চাইবে? আমি তো কোটিপতির উত্তরাধিকারী নই যে আমার মৃত্যুতে কারও আর্থিক লাভ হতে পারে। না, আমার মনে হয় ব্যাপারটায় কোন বাস্তবতা বা সত্যতা নেই।
পোয়ারো মৃদু হাসে। আপনার কথাই হয়তো সত্যি মাদাম জোয়েল। তবু সব শুনতে চাই।
হ্যাঁ, হ্যাঁ। নিশ্চয়ই। নিক একটু থামে, কি যেন ভাবে–প্রথমটায়, একরাতে আমি যে বিছানায় ঘুমোচ্ছিলাম তার মাথার দিকের দেওয়াল থেকে ভারি একটা ছবি ভেঙ্গে পড়ে। ভাগ্যবশত আমি সে সময় সেটা বন্ধ করতে উঠেছিলাম। বিছানায় থাকলে নিঃসন্দেহে আমার মাথা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেত।
পোয়ারো চুপচাপ শুনে যায়। ওর মুখ গম্ভীর। তারপর? অন্য দুর্ঘটনাগুলো?
আমাদের এই বাড়ি থেকে সমুদ্রে যাবার একটা পাহাড়ি পথ আছে। খুবই তীক্ষ্ণ, আতঙ্কজনক খাদময় সেই পথ। আমি স্নান করতে গিয়েছিলাম। ওখানে সমুদ্রে ঝাঁপ দেবার জন্যে একটা পাথরের চাতাল মত আছে। সেই জায়গায় একদিন আমার মাথার ওপর থেকে একটা বড় পাথরের চাঙড়…….. মনে হয় কাকতালীয়, তাই না?
হুম, তারপর? চালিয়ে যান।
সেই তুলনায় তৃতীয় ঘটনাটা কিন্তু একেবারে ভিন্নতর। আমার গাড়ির ব্রেকটা কেটে গিয়েছিল সদর দরজা পার হয়ে পাহাড়ি পথে বুঝতে পারি। তবে, গাড়িটার ভাগ্য ভাল একটা পাথরের খাঁজে চাকাটা আটকে যায়। গাড়ি তাই থেমে যায়। তা না হলে গাড়িসহ পাহাড়ের যেকোনও বাঁকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে আছড়ে পড়া আমার নিশ্চিত ছিল।
কিন্তু কেন গাড়ির ব্রেক ফেল হয়েছিল?
সেটা আপনাকে মট-এর গ্যারেজ থেকে জেনে নিতে হবে।
আপনার সেই গ্যারেজটা কোথায়? রেডমন্ড রোডে। পাহাড়ের ঠিক নিচেই।
এবার পোয়ারো কি যেন ভেবে নেয়, তারপর বলে–আপনার গাড়িটাকে একটু দেখা যাক মাদাম জোয়েল?
নিজের দু’চোখ প্রসারিত করে বিস্ময়চকিত গলায় বলে নিক।
ওহ, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। বাড়ির অন্যদিকেই আমাদের গ্যারেজ ঘর।
সেটা কি সবসময় তালা দিয়ে বন্ধ করা থাকে?
পোয়ারো চিন্তামগ্ন ভঙ্গিতে বলে–তার মানে কেউ যদি গাড়িতে কোনও কারসাজি করার চেষ্টা করে, খুব সহজেই সেটা করতে পারবে?
পোয়ারোর কথায় এতক্ষণে সে বুঝতে পারে–হ্যাঁ, তা নিশ্চয়ই পারে।
কিন্তু আমার যথেষ্ট বোকা বোকা লাগছে চিন্তাটা। নিক অবিশ্বাসের গলায় বলে।
পোয়ারো মাথা নাড়ে, না মাদাম জোয়েল, এর মধ্যে কোন বোকা বোকা ব্যাপার নেই। পুরোটাই বাস্তব আর সত্যি। আর সেই সত্যিটা হল অতি ভয়ঙ্কর। আপনার প্রাণের ওপর হামলা হয়েছে। একবার নয়, বেশ কয়েকবার। আপনি ভয়ঙ্কর বিপদের মধ্যে রয়েছেন মাদাম। আপনি জানেন আমি কে?
নিক অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়ে না।
আমি এরকুল পোয়ারো।
মুহূর্তে নিকের দু’চোখ বিস্ময়ে বিস্ফারিত হয়ে ওঠে–হে ভগবান, সত্যি?
পোয়ারো মৃদু হাসে-আপনি আমার নাম শুনেছিলেন, তাই না?
বিস্ময় ভরা চোখে হাসি চেপে নিক বলে-ওহ হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। কিন্তু ওর কথা বলার মধ্যে একটা অপ্রস্তুত ভাব পোয়ারোর চোখ এড়ায় না।