প্রশ্নটা আপনার মনে জাগাটা স্বাভাবিক। আচ্ছা মাদাম, আপনি একটা কথা বলুন তো আমাকে। আপনার মনে কখনও এই ব্যাপারটা এসেছে যে মাদাম জোয়েল আপনাকে আর ততটা পছন্দ করেন না ইদানীং? পোয়ারোর প্রশ্নটা শুনে ফ্রেডরিকা দৃঢ় গলায় বলে, না, এরকম তো কখনও মনে হয়নি। বরং ও আমাকে পছন্দ করে বলেই মনে হত।
পোয়ারো এবার ঘুরে তাকায় মিঃ লাজারুম, একটা কথা সত্যি সত্যি বলুন। সভাবে বললেন। মাদাম জোয়েল নিকের সঙ্গে আপনার কোন সম্পর্ক রয়েছে, মানে ছিল?
লাজারুম মাথা নাড়ে, নাহ, অস্বীকার করব না, একটা সময় নিকের প্রতি আমার কিছুটা দুর্বলতা ছিল কিন্তু অল্প সময়েই তা কাটিয়ে উঠি। ফ্রেডির প্রতি আমি তারপর থেকেই নিবেদিত।
আহ্, এটাই ওনার ট্রাজেডি। উনি মানুষ (পুরুষ) কে আকর্ষণ করতেন। আর তারপর তারা ওকে ছেড়ে অন্য কোন নারীতে সরে যেতেন, যাইহোক, মাদাম রাইস, আপনার প্রশ্নের উত্তরটা আশা করি পেয়ে গেলেন? হ্যাঁ, উনি মিঃ লাজারুমকে ভালবাসতেন, এখনও ভালবাসেন। আপনাক সরিয়ে দিয়ে উনি মিঃ লাজারুমকে পেতে চেয়েছিলেন। লাজারুমকে কেড়ে নেবার সময়টা, তারপর থেকেই উনি আপনাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। অসম্ভব ঘৃণা। অবশ্য, তার প্রকাশ উনি ঘটতে দেননি কোনদিনও।
কিন্তু মিঃ পোয়ারো, নিক যে অপরাধী সেটা কখন, কিভাবে আপনার মনে হল? এবার শ্যালিঙ্গার প্রশ্ন করেন।
পোয়ারো বিনীতভঙ্গিতে হাসে প্রশ্নটা শুনে, খুব লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করব, ব্যাপারটা আমার মাথায় আরও আগে আসা উচিত ছিল। অনেক আগে। কিন্তু মাদাম জোয়েল নিককে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। উনি যা বলতেন অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম। কিন্তু তারপর আচমকা আমার চোখে একটা ব্যাপার ধরা পড়ে। উনি অত্যন্ত চতুর মহিলা ঠিকই। কিন্তু উনি একটা ছোট্ট ভুল করে ফেলেছিলেন। সৌভাগ্যবশত শেষ পর্যন্ত যা আমার নজর এড়ায়নি। আমি যখন ওনাকে বললাম কোন বন্ধু বা আত্মীয়াকে ওনার কাছে এনে সঙ্গী হিসাবে রাখতে, উনি নিমরাজি হবার ভান করলেন। অথচ ততদিনে উনি ম্যাগিকে এখানে আসবার জন্যে টেলিগ্রাম করে দিয়েছিলেন। এই ছোট্ট ভুলটা যখন ধরতে পারলাম ওনার, আমার প্রথম টনক নড়ল। ম্যাগি এখানে পৌঁছে ওর বাবা মাকে পৌঁছানোর খবর জানিয়ে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। প্রথমে না ধরতে পারলেও, শেষ পর্যন্ত চিঠির একটা নিরীহ অংশই আমার চোখ খুলে দিয়েছিল। ম্যাগি লিখেছিলেন আমি সত্যি বুঝতে পারছি না নিক আমাকে এভাবে তড়িঘড়ি চলে আসবার জন্যে কেন তার করল। মঙ্গলবারের পরে আসলেও তো ক্ষতি ছিল না। এই মঙ্গলবার শব্দটা আমার মস্তিষ্কে গেঁথে যায়। নিক এভাবে কেন আগেভাগেই তার করেছিলেন? মঙ্গলবার কথাটা কেন উল্লেখ করেছিলেন? তড়িঘড়ি তার আগে কেন ম্যাগিকে ডেকে আনলেন?
পোয়ারো থামে। একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে। তার একটাই কারণ, মাদাম জোয়েল চেয়েছিলেন মঙ্গলবার রাতটা মাদাম ম্যাগি এন্ড হাউসে হাজির থাকুন। কিন্তু কেন তার সেই তীব্র আকুতি? আমার চোখ খুলে গেল। এবার মাদাম জোয়েল নিককে আমি ভিন্ন আলোয় দেখা শুরু করলাম। ওর বক্তব্যগুলোকে অন্ধের মত বিশ্বাস না করে কাটাছেঁড়া করা শুরু করলাম। যার ফলে উঠে এল এক একটা নির্মম সত্য। মাদাম ম্যাগিকে সাত তাড়াতাড়ি মঙ্গলবারের বাজি পোড়ানোর রাতে এন্ড হাউসে ডেকে আনা হয়েছিল খুন করার জন্যেই। কিন্তু কেন? এই রহস্য সমাধানে আমার অবশ্য ভীষণরকম সাহায্য করেছে। বন্ধুবর হেস্টিংস। এক সন্ধ্যায় ও ম্যাগি নামটা নিয়ে বিশ্লেষণে বসেছিল হঠাৎ করেই। ম্যাগি নামটা কি কি হতে পারে পুরো আকারে ম্যাগগি। মার্গারেট। ঝলসে উঠেছিল। মাদাম ম্যাগি-র পুরো নামটা ম্যাগডেলা নয়তো? এবং ……… খোঁজ নিয়ে জানলাম আমার অনুমানই ঠিক। রহস্যের ঘোর জটের মাঝে দুই ম্যাগডেলা বার্কলির উপস্থিতি জানতে পারার পরই ব্যাপারটা আমার কাছে অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। বাকিটা এরকুল পোয়ারোর সেই বিখ্যাত ধূসর মস্তিষ্কের কামাল।
আমার প্রথম খটকাটা অবশ্য লেগেছিল মাত্র কয়টি প্রেমপত্র দেখে। একজন প্রেমিকা তো তার প্রেমিকের সবগুলো প্রেমপত্রই রেখে দেবে। মাদাম জোয়েল বার্কলির কাছে মাত্র ওই কয়টি চিঠি কেন? তার উত্তর মাদাম জোয়েল ম্যাগির কাছ থেকে তার কাজে লাগবে এরকম কয়েকটা চিঠি বেছে নিয়েছিলেন। আর সেই চিঠিগুলোরই একটা কিন্তু আমার কাছে, সমস্ত জট খুলে দিল। পোয়ারো এবার একটু থামে। ও সেই ট্রিপিক্যাল ভঙ্গিতে গোঁফে মোচড় দেয়। কম্যান্ডার শ্যালিঙ্গার উৎসুক গলায় প্রশ্ন করেন সেটা কি?
পোয়ারো বিনীত ভঙ্গিতে হাসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২৭ তারিখ মাদাম জোয়েল নিকের অ্যাপেনডিক্স অপারেশান হয়। অথচ, মাইকেল সেটনের মার্চ-২ তারিখের চিঠিতে সে বিষয়ে কোন উল্লেখ নেই। কোন উদ্বেগ বা দুশিন্তা নেই। কুশল প্রশ্ন নেই। ওই চিঠিটাই নিশ্চিত করে দেয়, আমাকে প্রায় চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় চিঠিগুলো মাদাম জোয়েল নিক-কে লেখা হতেই পারে না। অন্য কাউকে লেখা। অন্য কারো জন্যে লেখা। কে? সেটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার দরকার হয় না। এরপর পুরো মামলাটা আমার কাছে জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায়।
ফ্রেডরিকা সজল চোখে তাকায় একটা মিষ্টি, ছোট্ট মেয়ে………..