আরও একজন অচেনা, ব্যক্তি? রহস্যময় চরিত্র? ভ্যাইস কিছুটা প্রচ্ছন্ন কৌতুকের গলায় বলে।
টানা কথা বলে পোয়ারো থামে। আমাদের সবার মুখের ওপর দিয়ে ঠাণ্ডা, অনুত্তেজিত চোখ বুলিয়ে নেয়, না। ঠিক সেরকম নয়। পোয়ারো মগ্ন গলায় বলে চলে ত’ সম্পূর্ণ এক ভিন্ন তাৎপর্যময় ব্যক্তি কথাটা বলে সে ফ্রেডরিকার দিকে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে সামলান মাদাম জোয়েল। আপনার স্বামী খুনী নন। মাদাম জোয়েল ম্যাগিকে গুলি করেছিলেন আমাদের এই ত’ ব্যক্তিটি।
ফ্রেডি তীব্র চোখে তাকায় সে কে?
পোয়ারো জেপের দিকে দিকে তাকায়। সে এগিয়ে আসে এবং ঠিক সেইরকম প্রবল কর্তৃত্বব্যঞ্জক গলায় কথা বলতে শুরু করে দেয়, যে ভঙ্গীতে পুলিশ আদালতে অপরাধীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় আমি মিঃ পোয়ারোর সাহায্যে সন্ধ্যেবেলার অনেকটা আগে গোপনে এ বাড়িতে ঢুকে পড়েছিলাম। বসবার ঘরের ভারী পর্দার আড়ালে লুকিয়ে বসেছিলাম। একজন যুবতী মেয়ে সেসময় ঘরে ঢুকে আলোটা জ্বালান। তারপর ফায়ার প্লেসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তিনি কিছু একটা চাপ দিয়ে, সম্ভবত কোন স্প্রিং-এর সাহায্যে একটা প্যানেল সরিয়ে ফেলেন। সেখান থেকে তিনি একটা পিস্তল বের করে নেন এবং ঘর ছেড়ে বের হয়ে যান। আমি ওকে অনুসরণ করি। তিনি একটা রুমাল দিয়ে সযত্নে পিস্তলটাকে মুছে একটা পোশাকের মধ্যে সন্তর্পনে সেটা ঢুকিয়ে দেন। পোষাকটা মিসেস রাইসের।
মুহূর্তের মধ্যে নিক তীক্ষ্ণ গলায় চীৎকার করে ওঠে, মিথ্যে, পুরোটাই এসব মিথ্যে।
VOLTA’ পোয়ারো আঙুল তোলে, এই হচ্ছেন সেই ত। যিনি ম্যাগি বার্কলি, নিজের বোনকে গুলি করে খুন করেছেন।
আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? ক্ষিপ্ত গলায় চীৎকার করে ওঠে নিক, আমি কেন ম্যাগিকে খুন করতে যাব?
কারণটা খুব সহজ। মাইকেল সেটনের সম্পত্তির উত্তরাধিকার দখল করা। মাইকেল সেটন ম্যাগডেলা বার্কলির সঙ্গে বাগদানে আবদ্ধ হয়েছিলেন। সেটা ম্যাগি, আপনি নন মাদাম জোয়েল নিক।
আপনি আপনি………. নিক কথা খুঁজে পায়না। ওকে কেমন খেই হারানো, অথৈ জলে পড়া মানুষ মনে হয়। বাক্যহারা। থরথর করে কাঁপতে থাকে। পোয়ারো ইন্সপেক্টর জেপের দিকে তাকায়। পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে? জেপ মাথা হেলিয়ে সায় দেয় হ্যাঁ। ওরা সদলবলে বাইরে অপেক্ষা করছে।
তাহলে? এখন আমরা একটা পুরোপুরি হাস্যকর অবাস্তব নাটকের সাক্ষী হতে চলেছি?
নিক ফেস করে ওঠে তা বলতে পারেন।
পোয়ারো মৃদু হাসে গত কয়েক মাস ধরে আপনি এন্ড হাউসে যে নাটকটা অভিনয় করে চলেছেন। তবে এসবের মধ্যে আমাকে টেনে আনাটা আপনার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল মাদাম জোয়েল। এরকুল পোয়ারো থাকলে আর কেউ নাটকের প্রধান চরিত্র-নায়ক হতে পারে না। কখনো না। আপনার কবর আপনিই নিজের হাতে খুঁড়েছিলেন।
.
২২.
নটে গাছটি মুড়োলো
আপনারা পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা চান? পোয়ারো তৃপ্ত ভঙ্গিতে চারপাশে সবার মুখের দিকে তাকায়। আমি জানি অপরাধীকে হারাবার গর্ব এটা। আমরা সবাই এবার বাইরে বাগানে ঘরের গুমোট ছেড়ে মুক্ত আবহাওয়াতে এসে বসলাম। ইতিমধ্যে আমাদের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। নিক-এর সঙ্গে ক্রফট দম্পতিকেও পুলিশ নিয়ে গেছে।
আমি, ফ্রেডরিকা, শ্যালিঙ্গার, লাজারুম, ভ্যাইস পোয়ারোকে ঘিরে বসলাম।
Eh bien, প্রথমেই স্বীকার করে নিই, আমি বেশ বোকা বনতে বাধ্য হয়েছিলাম। পুরোপুরি, সম্পূর্ণভাবে। একটা বাচ্চা মেয়ে যে নাকি নিজেই আমাকে চেয়েছিল। তদন্তের ৯০ শতাংশ অংশ ওনাকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনিনি। মাদাম রাইস, আপনি যখন বলেছিলেন আপনার বান্ধবী একজন চতুর মিথ্যেবাদী, আমি আমলই দিইনি। কিন্তু কি সত্যি কথাটাই বলেছিলেন আপনি। ভীষণ সত্যি।
নিক সবসময়ই ভীষণরকম মিথ্যে কথা বলত। ফ্রেডরিকা বলে। সেই কারণেই বারবার অলৌকিকভাবে মৃত্যুর হাত থেকে ওর রেহাই পেয়ে যাবার কাহিনীগুলো আমি মোটেই বিশ্বাস করিনি।
অথচ আশ্চর্যভাবে, অবিশ্বাস্যভাবে আমি করেছিলাম।
ওগুলো কি তাহলে সত্যি ঘটেনি? আমি প্রশ্ন করি, সত্যি বলতে কি, আমি যে রীতিমত সংশয়গ্রস্থ, স্বীকার করে নিতে বাধ্য হই।
খুব চালাকির সঙ্গে ব্যাপারগুলো যে ঘটেছে তার ভান করা হয়েছিল। পোয়ারো আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে আবার বলতে শুরু করে, আর সেই বানানো সাজানো ঘটনাগুলো সবার মনে ছাপ ফেলতে শুরু করে, মাদাম জোয়েল নিকের জীবন সত্যিই বিপদগ্রস্থ। কিন্তু ঘটনার শুরু তারও অনেক আগে। মূল প্রসঙ্গে ঢুকবার আগে সেগুলো ছুঁয়ে যাওয়া দরকার। আপনাদের জানা প্রয়োজন।
সামান্য থেমে পোয়ারো আবার শেষ করা কথার সূত্র ধরে বলতে থাকে, প্রথম থেকে আমরা জানি, সুন্দরী, প্রাণচঞ্চল নিক বার্কলি বাড়িটাকে আশ্লেষময়, পাগলের মত ভালবাসেন। কিন্তু তার হাতে সেরকম টাকা পয়সা ছিল না। বাড়িটা বন্ধক দেওয়া ছিল। তিনি টাকা খুঁজছিলেন, প্রচণ্ডভাবে মরিয়া হয়ে। টাকার প্রয়োজন ছিল তার, অথচ তিনি সেটা পাচ্ছিলেন না! লে-টকেততে যুবক মাইকেল সেটনের সঙ্গে তার পরিচয় হল। সেটন তার সৌন্দর্যে আকর্ষিত হয়। নিক জানতেন সেটন কোটিপতি কাকার বিশাল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী। উনি ভাবলেন ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন। কার্যক্ষেত্রে কিন্তু দেখা গেল সেটন মোটেই সেরকম তীব্রভাবে বা সিরিয়াসভাবে নিকের প্রতি আকর্ষিত হয়নি। ওর সঙ্গ আনন্দদায়ক লাগত সেটনের, ব্যস এইটুকুই ছিল ওর তরফের আকর্ষণ। স্কারবরোঘোতে আবার দেখা হল দুজনের। আর এখানেই পুরো উল্টে পাল্টে গেল ব্যাপারটা। ম্যাগির সঙ্গে আলাপ হল সেটনের, নিকের মাধ্যমেই। আর পাগলের মত, দুর্বারভাবে উনি প্রেমে পড়লেন ম্যাগির সঙ্গে প্রথম দর্শনেই। নিক প্রায় বজ্রাহত হল। ম্যাগিকে কোনদিনই উনি সুন্দরী বলে ভাবেননি। কিন্তু যুবক সেটনের কাছে উনি অন্যরকম। তার জন্যে পৃথিবীর একমাত্র মেয়ে। গোপনে দুজনে বাগদানে আবদ্ধ হলেন। একজনেই মাত্র জানলেন পুরো ব্যাপারটা। মাদাম জোয়েল নিক। বেচারা ম্যাগি, সে খুশি ছিল যে একজনের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে সে কথা বলতে পারত। প্রেমিক বা বাগদত্তার চিঠিগুলোও বোনকে পড়ে শোনাতেন তিনি। আর ঐ ভাবেই উইলের কথাটা মাদাম জোয়েল নিক জানতে পেরেছিলেন। ব্যাপারটা ওর মাথায় গেঁথে গিয়েছিল।