একটা ব্যাপার দেখেছ? পোয়ারো হঠাৎ পড়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকায়। মাদাম রাইস সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো পুরোপুরি অস্পষ্ট, এক একটি প্রহেলিকা যেন। যে কারণে, নিশ্চিতভাবেই, উনি সব কিছু জানেন। কথাগুলো বলে পোয়ারো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর আবার ওর লেখা পাতাটায় চোখ রাখে, পড়তে শুরু করে।
(ছ) মিঃ লাজারুম ওনাকে এই অপরাধে যুক্ত করার মতো সেরকম কোন প্রশ্ন নেই। শুধুমাত্র উনি বিষাক্ত চকোলেটের বাক্সটা বদলে দিয়েছিলেন। তাছাড়া, আর একটাই মাত্র ছোট্ট খটকা। উনি একটা প্রায় মূল্যহীন ছবি কেনবার জন্যে কেন এত চড়া দাম দিয়েছিলেন?
উনি হয়তো নিক-কে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। আমার উত্তরটা শুনে পোয়ারো মাথা নাড়ে। নাহ, ভুলে যেওনা বন্ধু, উনি ব্যবসায়ী। কোন জিনিস ক্ষতিতে কিনে বিক্রি করতে চাইবেন না। বন্ধুকে সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলে গোপনে কোনভাবে টাকা ধার দিয়েও সাহায্য করতেন।
কিন্তু এই অপরাধের সঙ্গে ওই ঘটনার কোন যোগ নেই। পোয়ারো কথাটা শুনে সায় দেবার ভঙ্গিতে মাথা নাড়ে।সেটা সত্যি, তবে এই খটকাটার উত্তর আমি অবশ্যই জানতে চাইব। নিশ্চিতভাবেই জানতে চাইব।
পোয়ারো এক মুহূর্ত থামে, তারপর বলে–এবার, জ’।
(জ) এখানে একটা প্রশ্ন চিহ্ন ছাড়া আপাতত আমার হাতে কিছু নেই। সত্যিই কি কেউ আছে এই জ’ চরিত্রে? যদি থাকে…..
তখনি পোয়ারোর নজর পড়ে আমার ওপর, কি ব্যাপার? কি হয়েছে হেস্টিংস? আমি এতক্ষণে পোয়ারোর নজর ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছি। আমার গলা চিরে একটা তীক্ষ্ণ আর্তচিৎকার বের হসে আসে। আমার কাঁপা কাঁপা হাতের আঙুল নির্দেশ অনুসরণ করে পোয়ারো জানালার দিকে তাকায়।
একটা মুখ পোয়ারো, ভয়ঙ্কর একটা মুখ, জানালার কাঁচের ওপর………
যদিও এ মুহূর্তে সেখানে কিছু নেই। পোয়ারো জানালাটার কাছে গিয়ে সেটাকে ঠেলে দেয়, ঝুঁকে বাইরেটা দেখে।
কেউ নেই এখন। পোয়ারো চিন্তিত গলায় বলে, তুমি নিশ্চিত হেস্টিংস যে তুমি কাউকে সত্যি দেখেছ? মনের ভুল নয়তো?
না, আমি নিশ্চিত, বীভৎস একটা মুখ।
হুম, ওপাশে একটা ব্যালকনি আছে। আমাদের কথা শুনবে ঠিক করে থাকলে অবশ্যই ওখানে উঠে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। বীভৎস মুখ বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছ হেস্টিংস?
ফ্যাকাশে, কঠিন চোখে নির্মমভাবে তাকিয়েছিল। প্রায় ভৌতিক একটা মুখ।
হুম। পোয়ারো কাগজগুলো গুছোতে-গুছোতে চিন্তিত মুখে বলে এটাই আশার কথা, এই বীভৎস মুখের মালিক যদি আমাদের কথা শুনেও থাকে, মাদাম জোয়েল নিক যে বেঁচে আছেন সেই বিষয়ে আমরা কোন কথা আলোচনা করছিলাম না, শোনেনি।
কিন্তু পোয়ারো, নিককে মৃত বানিয়ে তোমার কি লাভ হল? তোমার পরিকল্পনা মত সেরকম কিছু নাটকীয় ব্যাপার তো ঘটল না।
নাহ্, এত তাড়াতাড়ি সেরকম কিছু ঘটবে আশা করছি না। ২৪ ঘণ্টা অন্তত কাটুক। আগামীকাল, আমার গোয়েন্দাগিরি যদি ভুল না হয় তাহলে আগামীকাল অবশ্যই কিছু একটা ঘটবে। পোয়ারো একটু থামে, তারপর উদাস গলায় বলে, আর তা যদি না ঘটে, ধরে নিতে হবে আমার প্রথম থেকে এ পর্যন্ত সম্পূর্ণ থিয়োরিটাই ভুল।
পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গল বেশ বেলাতে। সামান্য দুর্বল লাগছিল। জ্বরটা কমে গেছে অবশ্য পুরোপুরি। আমরা প্রাতরাশ খাবার পর পোয়ারো সেদিনের ডাকে আসা চিঠিগুলো নিয়ে বাছতে বসল। আহ, এই যে।
পোয়ারোর ছোট্ট মন্তব্য শুনে আমি আমার চিঠির দঙ্গল থেকে মুখ তুলে বললাম কি ব্যাপার হে?।
এই চিঠিটা পড় পোয়ারো আমার দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দেয়। আমি হাতে নিয়ে চিঠিটার দিকে তাকাই। ম্যাগি বার্কলির মা, মিসেস বার্কলির লেখা চিঠিটার বয়ান এই রকম
প্রিয় মঁসিয়ে পোয়োনরা,
বাড়ি ফিরে এসে আমার হতভাগ্য মেয়ের একটা চিঠি পেলাম। সেন্ট লু-তে পৌঁছানোর পর সে চিঠিটা পাঠিয়েছিল। চিঠিটা পড়বার পর কেন জানি না মনে হচ্ছে আপনার কাজে হয়ত সাহায্য করতে পারে চিঠিটা। অন্তত একবার পড়ে দেখতে চাইতে পারেন। তাই চিঠিটা পাঠালাম।
আপনার সহৃদয় সাহায্যের জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা জানবেন।
—মিসেস জিন বার্কলি
পোয়ারো ততক্ষণে ম্যাগির চিঠিটা পড়া শেষ করেছে। এবার সে চিঠিটা আমার দিকে এগিয়ে দেয়।
প্রিয় মা,
আমি নিরাপদেই পৌঁছেছি। বেশ আরামদায়ক সফর ছিল। এখানকার আবহাওয়াও এখন খুব ভাল। নিক ভালই আছে। তবে মাঝে মাঝে ওকে দেখে একটু অস্থির মনে হচ্ছে। তবে, আমি এখনও বুঝতে পারছি না ও কেন এত তাড়াহুড়ো করে আমাকে টেলিগ্রাম করে এখানে ডেকে পাঠাল।
আজ আর লিখছি না। আমি আর নিক এখন প্রতিবেশীর বাড়িতে চা খেতে যাব। ওরা অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি। নিকের ভাড়াটে। নিক বলেছে ওরা এমনিতে দয়ালু হলেও, মানুষ হিসাবে খুব বিশ্রী, ভয়ানক।
—তোমার ম্যাগি।
পুঃ–নিক বলেছে ওর দুর্ভাবনা, উদ্বেগের কারণ আছে। পরে আমাকে সব বলবে। এই বাড়ি থেকে চায়ের নিমন্ত্রণ থেকে ফিরে ওর কথা শুনব।
মৃতের কণ্ঠস্বর পোয়ারো শান্তভাবে বলে এবং যা আমাদের কিছুই জানাল না পোয়ারোর কথাটা শুনে আমি প্রশ্ন করি তোমার অন্য চিঠিগুলো, ওগুলো থেকেও কিছু জানতে পারলে না?
না হেস্টিংস, আমি খুবই হতাশ। যে তিমিরে ছিলাম সেখানেই থেকে গেলাম। প্রাপ্তিযোগের ঘর শূন্য।