পোয়ারো এবার মাথা নাড়ে, ঠিক আছে, ধন্যবাদ। তুমি এখন আসতে পার।
পাহারাদারটি বের হয়ে যাবার পর পোয়ারো মেট্রনের দিকে তাকিয়ে বলে, এবার একটু নার্সটির সঙ্গে কথা বলতে চাই আমি।
নার্স মেয়েটি খুব সহজেই সন্ধ্যে নাগাদ পার্সেলটা নিয়ে যাবার কথা মনে করতে পারল।
পোয়ারো বিড়বিড় করে বলে, তার মানে পার্সেলটা নীচের টেবিলে বেশ কিছু সময় পড়েছিল নজরবিহীন অবস্থায়।
এই বাক্সটা ছাড়াও আরও দুটো বাক্স ছিল। একটা ফুলের। অন্যটা ডাক মারফত এসেছিল। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, সেটাও এক বাক্স চকোলেট।
কথাটা শোনামাত্র পোয়ারো কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করে, আরও একটা অন্য বাক্স? কে পাঠিয়ে ছিল সেটা?
না, ওই বাক্সটার ভেতর কোন কার্ড বা প্রেরকের নাম ছিল না। মিস বার্কলি দুটো বাক্সই খুলেছিলেন। তারপর আক্ষেপের ভঙ্গিতে বলেছিলেন–কি দুর্ভাগ্য, এত লোভনীয় চকোলেট অথচ আমার খাওয়া বারণ। তারপর তিনি ওই বাক্সটা আমাকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বলে অন্য বাক্সটা থেকে তুলে একটা চকোলেট খেয়েছিলেন।
হাসপাতালের বাইরে বের হয়ে এসে পোয়ারো প্রবল চিন্তান্বিত ভঙ্গিতে বলে। সংশয়ের ওপর আবার নতুন সংশয় যোগ হচ্ছে। ওর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে অন্তত একটা ব্যাপার তো বুঝতে বা জানতে পারা গেল, বাক্সটা লাজারুম এনেছিলেন।
ব্যাপারটা আমার কাছে খুব আশ্চর্যের লাগছে।
তুমি কি ওনাকে এব্যাপারে কিছু বলবে?
অবশ্যই। নিশ্চিতভাবেই। মাদামজোয়েলের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন সেটা ওনাকে জানানো আমাদের কর্তব্য। মাদাম মৃত্যুর দোরগোড়ায় রয়েছেন, হয়ত বাঁচাবেন না, শুনলে ওনার মানসিক অবস্থাটা ঠিক কি রকম হয় জানতে খুব ইচ্ছে করছে। তুমি খুব খুঁটিয়ে এই কথাটা শোনামাত্র ওনার মুখের অভিব্যক্তিটা ঠিক ঠিক নজর করবে। অবশ্যই বুঝে নেবে।
লাজারুসকে খুঁজে পেতে অসুবিধা হল না। সৌভাগ্যবশত হোটেলের বাইরে গাড়ির গেট খুলে ঝুঁকে পড়ে তিনি কি যেন পরীক্ষা করছিলেন।
পোয়ারো বিনা কালক্ষেপে সোজা ওর কাছে চলে গেল, মঁসিয়ে লাজারুম, কাল সন্ধ্যেবেলা আপনি মাদাম জোয়েল নিকের জন্য একটা চকোলেটের বাক্স রেখে এসেছিলেন।
দৃঢ় গলায় বলে হ্যা। বেশ একটু অবাক হয়েই পোয়ারোর দিকে তাকায় সে। এরকম একটা সামান্য ব্যাপারে পোয়ারোকে মাথা ঘামাতে দেখে যেন কিছুটা বিরক্ত গলাতেই এরপর সে বলে, আসলে ওটা পাঠিয়েছিলেন ফ্রেডি, মানে, মিসেস রাইস। উনিই আমাকে বলেছিলেন, অনুরোধ করেছিলেন ওটা পৌঁছে দিয়ে আসতে।
ওহ, তাই বুঝি? কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে তারপর পোয়ারো প্রশ্ন করে, মিসেস রাইস এখন কোথায়?
একতলার লাউঞ্জে পেয়ে যাবেন।
আমরা ভেতরে ঢুকে দেখলাম তিনি এক কাপ চা নিয়ে বসে আছেন। আমাদের দেখামাত্র উদ্বিগ্ন, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখে তিনি প্রশ্ন করলেন, নিক নাকি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে?
হ্যাঁ। খুব রহস্যজনক ব্যাপার মাদাম জোয়েল, আচ্ছা, আপনি কাল বিকেলে মাদাম নিককে একবাক্স চকোলেট পাঠিয়েছিলেন তো?
হ্যাঁ, নিকই আমাকে বলেছিল সেগুলো পাঠাতে।
মাদাম জোয়েল নিক আপনাকে চলোলেট পাঠাতে অনুরোধ করেছিল? পোয়ায়োর ভঙ্গিতে বিস্ময় চাপা থাকে না।
অবশ্যই, ফ্রেডরিকা দৃঢ় গলায় বলেন।
কিন্তু ওনার সঙ্গে আপনার দেখা হল কি ভাবে? কারও সঙ্গে ওনার দেখা করা তো বারণ।
না দেখা হয়নি। নিক আমাকে টেলিফোন করেছিল।
কথাটা শুনে পোয়ারোকে কিছুটা চমকিত দেখায়, আচ্ছা কথাগুলো বলার সময় ওনার গলা বা কথা বলার ভঙ্গি কি দুর্বল ক্লান্ত মনে হয়েছিল?
না, একেবারে না। বরং বেশ দৃঢ় গলায় কথা বলছিল। বেশ কিছুটা অন্যরকমই লেগেছিল ওর গলা এবং কথা বলার ভঙ্গিটা। প্রথমটা আমি তো বুঝতেই পারিনি নিকই যে কথা বলছে।
তবু আপনি নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে এটা আপনার বান্ধবীই বলছেন।
ফ্রেডরিকা এবার কিছুটা চমকিত চোখে তাকায়। পোয়ারোর কথার অর্থটা যেন সঠিকভাবে ওর বোধগম্য হয় না।
তার মানে? নিক না হলে কে হবে?
পোয়ারো মৃদু হাসে, অথচ গম্ভীর মুখে বলে, খুব কৌতূহল-উদ্দীপক প্রশ্ন। একটু থেমে কি যেন ভেবে নেয় পোয়ারো, আপনি দিব্যি করে বলতে পারবেন ওটা আপনার বান্ধবীরই কণ্ঠস্বর ছিল?
না। ধীর কণ্ঠে অনিশ্চিত ভঙ্গিতে বলে ফ্রেডরিকা। নিকের কণ্ঠ ওটা, আমি নিশ্চিত বলতে পারব না, ওর কণ্ঠ ভিন্নরকম। তবে সেই সময় আমার মনে হয়েছিল হয়ত ফোনে শুনতে ওইরকম লাগছে। অথবা অসুস্থতার কারণে………..
পোয়ারো মাথা হেলিয়ে ফ্রেডরিকার বক্তব্যে সায় দেয়।
প্রায় হতভম্ব গলায় ফ্রেডি এবার বলে, কে? তাহলে ওটা কে ফোন করেছিল?
আমি সেটাই তো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি মাদাম। পোয়ারোর গলার গাম্ভীর্যে এবার ফ্রেডির মুখে ধীরে ধীরে তীব্র আতঙ্ক ফুটে ওঠে। কি যেন একটা বুঝে নেবার ভঙ্গিতে সে বলে, নিক কেমন আছে মিঃ পোয়ারো? ওর কিছু হয়েছে কি?
পোয়ারো সায় দেবার ভঙ্গিতে মাথা দোলায়, আপনার বান্ধবী ভয়ঙ্কর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আপনার পাঠান চকোলেটগুলোর মধ্যে তীব্র বিষ মেশান ছিল। পোয়ারোর কথাগুলো শুনতে শুনতে ফ্রেডি শিউরে ওঠে। ভয়ঙ্কর আতঙ্কে দুহাতে মুখ ঢাকে, না, না, তা হতে পারে না। বিষ? হে ভগবান তা কি করে সম্ভব? আমি আর জিম ছাড়া চকোলেটগুলোর বাক্সটা কেউ স্পর্শ করেনি। আপনাদের নিশ্চয়ই কোথাও ভুল হচ্ছে মিঃ পোয়ারো। ভুল হচ্ছে। এ হতে পারে না।