তার মানে তুমি বলতে চাও এটা টাকার জন্যে নয়?
না, না, অবশ্যই নয়। ওই ব্যাপারটায় আমি একশো শতাংশ ঠিক। ওহ হ্যাঁ। কিন্তু ওই দুটো……. খুবই সহজ………. অত্যন্তই সহজ। তবে হ্যাঁ একটা নাটকীয় মোড় অবশ্যই অপেক্ষা করছে, হ্যাঁ, অবশ্যই কিছু একটা। তারপর হঠাৎ ক্ষিপ্ত ভঙ্গিতে প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে আচমকা। আমি ওনাকে বলেছিলাম। বলেছিলাম কিনা? Ettee petite, বাইরে থেকে আসা কোন কিছু স্পর্শ করবেন না। আমায় অমান্য করেছেন উনি। এরকুল পোয়ারোকে অমান্য করেছেন। চার-চারটে মৃত্যুর ছোবলও কি ওনার জন্যে যথেষ্ট নয়? পঞ্চম সুযোগটাও নিতেই হবে?
আমি কোন কথা বলিনা। বলতে পারিনা। নিশব্দে ওর উত্তেজনার পারদটাকে ছুঁতে চেষ্টা করে চলি। তারপর একসময় আমরা ফিরে চলি। সামান্য অপেক্ষার পর আমাদের ডাক পড়ে। বিছানায় বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া নিক। অস্থিরভাবে হাত দুটো নড়ে চলেছে, এপাশ ওপাশ করছে। মুখে চোখে জ্বরের ভাব। আবার। বিড়বিড় করে বলে সে।
পোয়ারো নিককে দেখা মাত্র বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়ে। ওর হাতটাকে নিজের হাতের মধ্যে চেপে ধরে।
তাহলে আপনার এই নার্সিংহোমও আটকাতে পারল না। তীক্ষ্ণ গলায় বলে নিক।
আপনি যদি আমার নির্দেশ মানতেন তাহলে অবশ্যই সব ঠিকঠাকই চলত।
নিক বিস্ময়ভরা চোখে তাকায়, কিন্তু আমি তো তাই করেছি।
পোয়ারো অস্থিরভাবে মাথা নাড়ে মাদাম জোয়েল আমি আপনাকে বলেছিলাম বাইরের কোন খাবার খাওয়া তো দূরের কথা, স্পর্শও না করতে। কোন কিছু নয়।
কিন্তু, আমি তো সেরকম কিছু করিনি।
কিন্তু ওই চকোলেটগুলো?
ওহ, ওগুলো তো আপনি পাঠিয়েছিলেন।
মানে?
ওগুলো তো আপনার পাঠান। ওগুলো কেন খাব না?
পোয়ারো এবার তড়িতাহতের মত চমকে ওঠে, কিন্তু আমি তো সেরকম কিছু পাঠাইনি।
তা কি করে হতে পারে? বাক্সের ভেতর আপনার স্বহস্তে লেখা কার্ড ছিল।
কি? পোয়ারো বিমূঢ় মুখে তাকিয়ে থাকে।
নিক হতবাক ভঙ্গিতে পোয়ারোকে লক্ষ্য করে। তারপর নার্স মেয়েটিকে ইঙ্গিতে কাছে ডাকে। সে এলে তাকে চকোলেটের বাক্সের ভেতর যে কার্ডটা ছিল সেটা আনতে বলে। যুবতীটি কাঁচের জানালাটার পাশে টেবিলটার দিকে এগিয়ে যায়। কার্ডটা হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে। নিক কার্ডটা পোয়ারোর দিকে এগিয়ে দেয়। পোয়ারো কার্ডটা হাতে নিয়ে কে গেলে। আমি বিস্ফারিত চোখে দেখি, ফুলের দোকানের কার্ডটাতে পোয়ারো যে কথাগুলো লিখেছিল, এই কার্ডটাতেও স্পষ্ট স্বচ্ছন্দ হাতের লেখায় হুবহু সেই কথাগুলোই লেখা।
Sacritonnere’ পোয়ারোর হতবাক মুখ দিয়ে শব্দদুটো ছিটকে বের হয়।
দেখলেন তো? নিক অভিযোগের গলায় বলে।
আমি এটা লিখিনি।
কি? নিক তীব্র চোখে তাকিয়ে থাকে।
যদিও এটা হুবহু আমার হাতের লেখার মতই।
পোয়ারোর কথাটা শুনে নিক সায় দেবার মত করে বলে হ্যাঁ। কমলা রঙের কারনেশান ফুলগুলোতে তো একই রকম হাতের লেখা ছিল।
পোয়ারো তীব্র চোখে কার্ডটা হাতে নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
আর তাই ওই চকোলেটের বাক্সটা পেয়ে আমি কোনরকম সন্দেহ করিনি।
কি করে বা সন্দেহ করবেন? কি করে সন্দেহ করা সম্ভব। ওহ্, জিনিয়াস, এক জিনিয়াস শয়তানের মুখোমুখি হয়েছি আমরা। অসাধারণ।
নিক অস্থিরভাবে নড়েচড়ে বসে।
নিজেকে দোষী ভাববেন না মাদাম জোয়েল। দোষ যদি কেউ করে থাকে, সে আমি। হ্যাঁ আমি। এই সম্ভাবনায় কথাটা আমার আগেই ভাবা উচিত ছিল। অবশ্যই ভাবা উচিত ছিল। না ম্যাডাম না। চিন্তা করবেন না। সাহস আনুন মনে। সাহস। এরপর থেকে এরকুল পোয়ারো আর এরকম কোন কিছু হতে দেবে না। দিব্যি দিচ্ছি। এটাই ছিল আমার শেষ ভুল।
এরপর এরকুল পোয়ারো ঘর থেকে বের হয়ে এল। আমরা গিয়ে মেট্রনের ঘরে ঢুকলাম। গোটা ব্যাপারটায় মহিলা বেশ বিব্রত এবং হতচকিত, বিমর্ষও।
পোয়ারো তাকে যথাসম্ভব সান্ত্বনা দেবার পর বলল, কাল পাহারাদার যে ছিল আমি একটু তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
মেট্রন সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডেকে পাঠালেন। রোগাটে চেহারার, সরল মুখশ্রীর এক যুবক। চকোলেটের বাক্সটা কাল কখন এসেছিল প্রশ্ন করায় সে অসহায় মুখে উত্তর দেয়, সারাদিন কত মানুষ কত কিছুর জন্যে আসছে যাচ্ছে, সবার কথা, সবকিছুর কথা মনে রাখা মুশকিল।
পোয়ারো তাকে বলে নার্স মেয়েটি বলেছে এটা সবার শেষে এসেছিল। সন্ধ্যে ছটা নাগাদ।
সঙ্গে সঙ্গে যুবকটির মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, হা, হা ঠিক। এক ভদ্রলোক বাক্সটা নিয়ে এসেছিলেন।
রোগা চেহারা, পাতলা চুল? পোয়ারো আগ্রহী গলায় প্রশ্ন করে।
চুল পাতলা খেয়াল আছে। চেহারাটা রোগাটে, কিনা মনে করতে পারছি না।
তোমার কি মনে হয় চার্লস ভ্যাইস নিজেই বাক্সটা নিয়ে এসেছিলেন? বিড়বিড় করে পোয়ারোকে বলি। আমার খেয়াল ছিল না স্থানীয় মানুষ হিসাবে ওকে অনেকেই চেনে।
না, না, যিনি এসেছিলেন তিনি মিঃ ভ্যাইস নন। পাহারাদার যুবকটি বলে উনি লম্বায় বেশ কিছুটা বেশি ছিলেন। অনেক বেশি সুপুরুষও। একটু ভেবে নিয়ে সে যোগ করে।
লাজারুম। আমার মুখ থেকে শব্দটা বের হওয়া মাত্র পোয়ারো তীব্র ভৎর্সনার চোখে। আমার দিকে তাকায়। আমি মাথা হেলিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করি।
তারপর? পোয়ারো পাহারাদারটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
আমি ভদ্রলোকের হাত থেকে পার্সেলের বাক্সটা নিয়ে ভেতরের ঘরের টেবিলে রাখি। যত জিনিস আসে সব ওখানে জমা করাটাই নিয়ম। তারপর যে রোগীর জিনিস সেই ঘরের নার্স এসে সেটা নিয়ে যায়।