না মাদাম, সেরকম করে বলবার মত কিছু এখনও ঘটেনি। পোয়ারো প্রতিশ্রুতিহীন জবাব দেয়।
কিন্তু আপনি নিশ্চিতভাবেই একটা ধারণা নিশ্চয়ই করতে পেরেছেন তাই না?
হ্যাঁ, সেটা করেছি ঠিকই। তবে এখনও প্রচুর প্রমাণ জোগাড় করতে বাকি রয়েছে।
এবার ওনাকে যেন কিছুটা অনিশ্চিত দেখায়। তারপর উনি উঠে দাঁড়ালেন, এবার আমি চলি। উনি ঘর ছেড়ে হঠাৎ করেই দ্রুত বের হয়ে যান।
শ্যালিঙ্গার সেদিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা লম্বা শ্বাস ছাড়েন, নারী, এরা যে কখন কি চায় হয়ত ভগবানও জানে না। নিক হয়ত ওই মহিলাকে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু এই মহিলাটি যে নিককে সত্যি সত্যি কতটা পছন্দ করেন তাতে আমার সন্দেহ আছে গভীর ভাবে। একটু থেমে তিনি আবার বলে উঠলেন, যাকে প্রিয়তম….প্রিয়তম…….সম্বোধন করছে এক মুহূর্ত পরই তাকে হয়ত নিকুচি করেছে বলে ছুঁড়ে ফেলবে। এইসব মেয়েদের মতিগতি বোঝা সত্যিই ভার। তারপরই ওনার নজর পড়ে পোয়ারোর দিকে, আপনি কি কোথাও
পোয়ারো ততক্ষণে উঠে দাঁড়িয়েছে। সযত্নে টুপিটাকে ঝাড়ছে। কম্যান্ডার-এর মুখের দিকে তাকিয়ে সে বিনয়ী হাসে। হ্যাঁ, আমি একটু শহরে যাব।
কম্যান্ডার একঝলক কি যেন ভাবলেন, আমার হাতে এখন কোন কাজ নেই। আমি কি আপনার সঙ্গে আসতে পারি?
অবশ্যই, অবশ্যই। আমি খুশিই হব তাহলে। অতএব অবশেষে কম্যান্ডার আমাদের সঙ্গী হলেন।
পোয়ারো শহরে পৌঁছে প্রথমে একটা ফুলের দোকানে ঢুকল। আমরা নিশ্চিতভাবেই কিছু আরোগ্য কামনাময় শুভেচ্ছাসহ ফুল পাঠান উচিত মাদাম জোয়েল নিককে আমাদের কাছে ব্যাখ্যা করে সে। তবে পোয়ারোর ফুল পছন্দ করাটা এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়াল। কোনটা তার পছন্দ করা উচিত কিছুতেই বুঝে উঠতে পারল না সে। অবশেষে, বেশ বড়সড় একটা সোনালী বাক্স, অলঙ্করণ করা, তাতে একগুচ্ছ কমলালেবু রঙ উজ্জ্বল করোনেশন পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। আমি সকালেই ফুল পাঠিয়েছি। আমি বরং কিছু ফল পাঠাই। কম্যান্ডার বললেন। পোয়ারো দোকান থেকে দেওয়া কার্ডটাকে যত্ন করে, শুভেচ্ছাসহ, এরককুল পোয়ারো লিখে দোকানী মহিলার হাতে ফেরত দিতে দিতে বলে Inutile।
কি? শ্যালিঙ্গার ভুরু কুঁচকে তাকায় আমি বললাম অর্থহীন। বাইরে থেকে পাঠান কিছু খাওয়া মাদামের নিষেধ আছে।
কে বলল?
আমি বলছি। আমি নিয়মটা চালু করেছি। মাদাম তার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পেরে মেনেও নিয়েছেন।
হে ভগবান। শ্যালিঙ্গার স্পষ্ট চোখে পোয়ারোর দিকে তাকায়। তার কপালে চিন্তার কুঞ্চন ভেসে ওঠে, তার মানে, এই ব্যাপার?…… বিপদ এখনও কাটেনি……।
.
১৬.
মিঃ হোয়াইটফিল্ডের সঙ্গে সাক্ষাতকার
ময়নাতদন্তটা নেহাতই বিরস ধরনের অনুত্তেজক হল। ময়না তদন্তের পর আমি পোয়ারোর সঙ্গে যোগ দিলাম। আমরা দুজনে গেলাম রেভারেন্ড গাইলস বার্কলি এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। নিহত ম্যাগি বার্কলির মা বাবা দুজনেই সহজ সরল মানুষ। শহুরে সফিস্টিকেশনের ধার ধারেন না। মিসেস বার্কলি বেশ লম্বা। তুলনায় তার স্বামী বেশ ছোটখাটো চেহারার। ধূসর রঙা চুল। মেয়ের বেঘোরে মৃত্যুর শোকাচ্ছন্ন-তার বাইরে এখনও তারা স্বামী-স্ত্রী কেউই আসতে পারেন নি। আমাদের ম্যাগি বারবার দুঃখে ভারাক্রান্ত গলায় বলছিলেন তাঁরা আমার মেয়ে ছিল নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগী, সবসময় অন্যদের কথা ভাবত। তাকে কে খুন করতে পারে? ঠিক তখনি মিসেস বার্কলি বললেন, একটাই সান্ত্বনা, আপনার মত একজন মহান গোয়েন্দা যখন এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তখন খুব শিগগিরই এই অপরাধের কিনারা হবেই হবে।
অপরাধী শাস্তি পাবেই। এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি মাদাম। তবে কখনও সেই শাস্তি খুব গোপনে ঘটে।
এর দ্বারা আপনি কি বোঝাতে চাইছেন মিঃ পোয়ারো? এবার প্রশ্নটা করেন মিঃ বার্কলি। পোয়ারো কথাটার কোন উত্তর দেয়না। শুধু ঘনঘন কয়েকবার মাথা নাড়ে। যার বহুরকম অর্থ হতে পারে।
পোয়ারো সান্ত্বনা দেয়, আচ্ছা, আর আপনাদের বিরক্ত করব না। যা ঘটে গেছে তার জন্যে আন্তরিক দুঃখবোধ জানানো ছাড়া, আপনাদের সহানুভূতি জানাবার ভাষা আমাদের নেই। সন্তানকে অকালে হারাবার যন্ত্রণা অন্য কারও পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয়।
আপনি সত্যিই অত্যন্ত সহৃদয় মিঃ পোয়ারো। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমরা বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসবার পর পোয়ারো বিষণ্ণ গলায় বলে, নিজেকেই ভীষণরকম অপরাধী মনে হচ্ছে জানো হেস্টিংস। আমিই মাদাম জোয়েল বার্কলিকে পরামর্শ দিয়েছিলাম কাউকে তার কাছে এনে রাখতে, অথচ, আমি এরকুল পোয়ারো ঘটনার জায়গায় হাজির থাকা সত্ত্বেও ব্যাপারটাকে আটকাতে পারলাম না।
নিয়তি কে ঠেকাতে পারে কে বন্ধু? আমি নরম গলায় বলি।
না হেস্টিংস, তোমার বক্তব্যে ঘটনার যথার্থ প্রতিফলন হচ্ছে না। এখানে কোন সাধারণ মানুষের কথা হচ্ছে না। আমি এরকুল পোয়ারো তাহলে আমার অসাধারণত্ব কোথায় যদি এরকম একটা পাতি অপরাধ ঠেকাতে না পারলাম? বিশেষ করে যেখানে নিক ও ম্যাগিকে পূর্ণ নিরাপত্তা দেবার নৈতিক দায়িত্ব ছিল আমার, এরকুল পোয়ারোর ওপর।
তা অবশ্য ঠিক। ব্যাপারটাকে তুমি যদি এভাবে ভাব তাহলে ব্যাপারটা সেইরকম দাঁড়াচ্ছে বটে।
বাস্তবিক। আমি সেইহেতু ভীষণরকম মর্মাহত, হৃদয়বিদারক অবস্থার মধ্যে রয়েছি।