হ্যাঁ, তিনি হয়তো ঠিক, আবার হতে পারেন ভুলও। এই রাজনীতিকরা খুব সহজে তাড়াতাড়ি নিজের চোখে দেখা…. প্যারিস, চেম্বার দ্যা ডিপোটিজ…..
পোয়ারো আবার গল্প ফেঁদে বসবার আগেই আমি তাড়াতাড়ি বাধা দিই, হ্যাঁ, হ্যাঁ, মনে আছে। পোয়ারো আমাদের কিন্তু তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। লন্ডনের এক্সপ্রেসটা ঠিক বারোটায় ছাড়ে। পরের….
শান্ত, শান্ত হও হেস্টিংস। সেই একই রোগ।অল্পে উত্তেজিত হয়ে পড়া। আমরা আজ লন্ডনে যাচ্ছি না। এমনকি আগামিকালও নয়।
কিন্তু এই জরুরী তলব?
তাতে আমার কিছু এসে যায় না। আমি তো পুলিস বাহিনীর গোয়েন্দা নই। আমাকে গোপনে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল। আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। নিশ্চিতভাবে। অত্যন্ত সবিনয়, যথোচিত সৌজন্যের সঙ্গে আমি ওনাকে আমার অপরাগত জানিয়ে দিয়েছি। ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি।
কিন্তু কেন? আমি অবাক গলায় প্রশ্ন করি।
হোম সেক্রেটারির অনুরোধ রাখা সম্ভব নয়, কারণ আমি মনে করি আমি শেষ হয়ে যেতে বসেছি। এরকুল পোয়ারোর সুবিখ্যাত গ্রে সেল-এর কর্মক্ষমতা ম্লান হয়ে আসছে। তাই আমি ঠিক করেছি অবসর নেব। এরকুল পোয়ারো তার শেষ মামলার সমাধান করে দিয়েছে। একটানা কথা বলে বন্ধুবর থামল।
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। যা শুনলাম সেটাকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, বা হয়তো বিশ্বাস করতেই পারিছ না যা শুনলাম। তবু ওর সিদ্ধান্তকে কখনও অসম্মান করিনি, আজও করতে পারলাম না। অথচ তখনি বিদ্যুৎ ঝলকের মত প্রশ্নটা আমার মাথায় এল।
পোয়ারো, পরে তোমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হবে না তো? সেক্ষেত্রে এরকম একটা মামলার কাজ হাতে না নেওয়া, যা অত্যন্ত সম্মানজনক-রহস্যটা সমাধান করতে পারলে সারা পৃথিবী জুড়ে সুখ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ত। খুব বড়সড় ভুল হবে।
না, না। পৃথিবীতে এমন কিছু নেই যা এরকুল পোয়ারোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করাতে পারে। অসম্ভব, অসম্ভব।
পোয়ারো? সত্যি সত্যি এবার বন্ধুবর আমার মুখের দিকে তাকায়। কি যেন ভাবে, কি যেন বোঝবার চেষ্টা করে। সামান্য বিচলিতও দেখায় তাকে। তারপর সে বলে, তুমি ঠিকই বলেছ, কারও এরকম ভাবে কথা বলা উচিত নয়। কাল যদি আমার দিকে একটা গুলি ছুটে আসে, যদি তাতে আমি মারা না যাই, আমি তাহলে খোঁজ বা তদন্ত করে দেখব, কে আমাকে গুলিটা ছুঁড়েছে? আলবাত করব। সে মাথা নাড়ে। কিন্তু ওকে কিছুটা অন্যমনস্ক দেখায়।
বন্ধুবর এরপর চেয়ারে হেলান দিয়ে অন্যমনস্ক চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্থাৎ, ও গভীর কোনও চিন্তায় আচ্ছন্ন। তারপরই, আচমকা সে উঠে দাঁড়াল। এবং হঠাৎ দরজাটা খুলে অন্য মনস্কের মত ঘরের বাইরে পা রাখে। পোয়ারো দরজাটা টেনে খোলা মাত্র আমি দেখেছিলাম এক যুবতী–প্রথম দর্শনেই বেশ নজর কেড়ে নেবার মত সুন্দরী, দ্রুত পায়ে তরতর করে হেঁটে এদিকেই আসছে।
পোয়ারো ধড়াম করে আছড়ে পড়ল। আমি দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম। মেয়েটি এবং আমি ধরাধরি করে বন্ধুকে তুললাম। বলাবাহুল্য, আমার নজর ছিল বন্ধুর দিকে, মনোযোগও। তারই মধ্যে আমার চোখে ধরা পড়ে একগুচ্ছ কালো চুল, দিঘল গভীর নীল চোখ আর ছিপছিপে তন্বী আদল।
উফ, ধন্যবাদ মাদাম জোয়েল।
আ-উচ, আমার পা….. আমি সত্যি সত্যি হাজারবার ক্ষমা চাইছি।
ধরাধরি করে আমি ও যুবতীটি পোয়ারোকে আবার বাইরের বারান্দায় চেয়ারে এনে বসালাম। আমি একজন ডাক্তার ডেকে আনার প্রস্তাব দিলাম।
বন্ধুবর দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানাল, না, না, হেস্টিংস, সামান্য একটু গোড়ালিটা…….. কয়েকমিনিট বিশ্রাম নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখে নিও।
একটু থেমে বন্ধু এবার যুবতীর দিকে তাকায়, ওহ, দেখেছেন? আমি একেবারে ভুলে গেছি। মাদাম জোয়েল, বসুন, আমার বিনীত অনুরোধ।
মেয়েটি একটা চেয়ারে বসে। হয়তো চোটটা সামান্য, তবু আমার মনে হয় একবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত ডাক্তারকে দিয়ে। সাবধানের মার নেই।
আমার মনে হয় না তার কোন প্রয়োজন আছে। আপনার সান্নিধ্যে যন্ত্রণা অনেক কমে গেছে। বন্ধুবরের কথায় যুবতী হেসে ওঠে বাচ্চা মেয়ের মত।
বাহ, তাহলে তো চমৎকার।
তাহলে একপাত্র পান করলে কেমন হয়? আমার তো মনে হয় এটা একেবারে যথার্থ উপযুক্ত সময়।
পোয়ানোর প্রস্তাবে যুবতী সামান্য ইতস্তত করার পর বলে, বেশ।
মার্টিনি?
হ্যাঁ, ড্রাই মার্টিনি।
আমি উঠে যাই, পানীয়ের অর্ডার দিয়ে ফিরে এসে দেখতে পাই যুবতীর সঙ্গে পোয়ারো গভীর-অন্তরঙ্গ আলোচনায় মগ্ন।
ভাবতে পারো হেস্টিংস, ওই যে কোণের দিকে অসাধারণ সুন্দর বাড়িটা নিয়ে আমরা এতক্ষণ আলোচনা করছিলাম, সেটার বাসিন্দা এই ইনি!
পোয়ারোর এসব ভনিতার সঙ্গে আমি বিলক্ষণ পরিচিত। তাই অবাক হবার ভান করি।
সত্যি? কি আশ্চর্য যোগাযোগ। অথচ পোয়ারো হঠাৎ এই আনকোরা যুবতীটিকে নিয়ে কেন পড়ল কিছুই মাথায় ঢুকছিল না আমার।
আশ্চর্য, বাড়িটিকে দেখলে মনে হয় যেন আলাদাভাবে এখানে এনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য সব কিছুর চেয়ে যেন আলাদা ওটি।
এটাকে বলা হয় এন্ড হাউস। বাড়িটাকে আমিও খুব ভালবাসি, তবে ওটা খুবই পুরানো হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে।
পোয়ারো উচ্ছ্বাসের গলায় বলে, তার অর্থ আপনি একটা প্রাচীন পরিবারের সদস্য?