না না, সেরকম কিছু নয়। টাকিস্টকে আমারও বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব আছে। তাই জানতে চাইছিলাম আপনি তাদের চেনেন নাকি। যেমন, বুকানন, আমার একজন বন্ধু। চেনেন আপনি?
মিসেস রাইস উদাস ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন–না, আমি চিনি না। আচ্ছা আমরা অবান্তর প্রসঙ্গে সময় কেন নষ্ট করছি? আপনি বরং নিকের কথা বলুন। কে ওকে গুলি করেছে? কেন?
আমি তা জানি না, এখনও কিন্তু নিশ্চিত থাকতে পারেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি সেটা খুঁজে বের করে ফেলব। আমার নাম এরকুল পোয়ারো। আমি একজন প্রাইভেট ডিটেকটিভ।
অতি বিখ্যাত মানুষ। সে আপনার মহানুভবতা। এবার মিসেস রাইস খুব ধীরে ধীরে কেটে কেটে বললেন-আপনি আমাকে কি করতে বলেন এখন?
সত্যি কথা বলতে কি এবার আমরা দুজনেই যথেষ্ট অবাক হই। আমরা কেউই এমুহূর্তে ওনার মুখ থেকে এধরনের কথা আশা করি না।
আমি আপনাকে অনুরোধ করব আপনার বন্ধুর ওপর একটু নজর রাখতে। পোয়ারো শান্ত গলায় বলল।
ঠিক আছে। সেটাই যথেষ্ট।
পোয়ারো কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়ায়।
পোয়ারো আমি একটু দূরে সরে আসবার পর বললাম-তুমি কি আস্তিনের তাসগুলো সরাসরি দেখিয়ে দিলে না?
আবার আমরা আমাদের টেবিলে ফিরে এলাম।
পোয়ারো তার চেয়ারে বসতে বসতে বলল–তাছাড়া আমি আর কি করতে পারতাম। আমার কাছে প্রথম কাজ হল সবার আগে মিস বার্কলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। আমি কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না। তবে একটা কথা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
কি? আমি সোৎসাহে প্রশ্ন করি।
মিসেস রাইস টাকিস্টকে ছিলেন না।
কোথায় ছিলেন তাহলে?
আঃ, এরকুল পোয়ারো ঠিকই সঠিক তথ্য খুঁজে বার করবে।
হান্ডসাম লাজারুম এতক্ষণে ফিরে এসেছেন। মহিলা তাকে সব বলছেন।
আহ–চমৎকার, লোকটা অতীব ধূর্ত হে। আমাদের দিকে সে তাকাচ্ছেই না।
আহ-হা, যদি আমার এখন জানা থাকত।
আমি অবাক গলায় প্রশ্ন করি কি?
সেটা সোমবারই জানতে পারবে।
একটু পরেই নিক ওর নাচের সঙ্গীর থেকে আলাদা হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এল। আমার উল্টো দিকের চেয়ারটায় আমার মুখোমুখি এসে বসল। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল–এ যেন মৃত্যুর কিনারায় দাঁড়িয়ে নেচে চলা।
প্রসঙ্গ বদল করার জন্য পোয়ারো বলে–আপনি খুব সুন্দর নাচেন মাদাম জোয়েল।
লাজুক মুখে পোয়ারোর প্রশংসাটা গ্রহণ করে সে বলে–ধন্যবাদ।
এরপর আরও কিছু কথাবার্তার পর নিক উঠে চলে যায়।
কথাটা আমার মোটেই ভাল লাগল না। নিকের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমি পোয়ারোকে উদ্দেশ্য করে বলি–কিন্তু কথাটা সত্যের খুব কাছাকাছি। সেটা মানতেই হবে। আর গোটা ব্যাপারটা মেয়েটা যে খুব সাহসভাবে গ্রহণ করেছে সেটাও মানতেই হবে। পোয়ারো দার্শনিকের ভঙ্গিতে বলে।
পরের দিন ছিল রবিবার। আমরা হোটেলের টেরেসে বসেছিলাম। সাড়ে এগারোটা। হঠাৎ পোয়ারো উঠে দাঁড়ায়। চল হেস্টিংস, আমরা এক্ষুনি একটা পরীক্ষা করব।
কি?
মাদাম ও তার দুই বন্ধু গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। রাস্তা পরিষ্কার। চল, চল উঠে পড়।
আমি অবাক গলায় বলি–কিসের রাস্তা……..
পোয়ারো আমার জামা ধরে টানে–গেলেই দেখতে পাবে। কথা বলে সময় নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নেই।
আমরা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলাম। ঘাস বিছানো সরু পথটা একেবারে সমুদ্রে গিয়ে মিশেছে। সেখানে এখন কয়েকজন স্নানার্থী দেখা যাচ্ছে। আমরা সরু পথটা ধরে এবার ডাইনে মোড় নিলাম। কিছুটা হাঁটবার পরই আমরা সেই লোহার মরচে ধরা দরজাটার সামনে এসে পড়লাম যার মাথার ওপর লেখা আছে এন্ড হাউস, (ব্যক্তিগত সম্পত্তি)।
পোয়ারো সতর্ক চোখে চারপাশে তাকিয়ে দেখে। না, ধারে কাছে কেউই নেই। আমরা নিঃশব্দে এগিয়ে গেলাম। অবশেষে বাগান পেরিয়ে আমরা এসে দাঁড়ালাম ভোলা ফ্রেঞ্চ (গরাদহীন) জানালাগুলোর সামনে।
পোয়ারো আবার সতর্ক চোখে চারপাশ দেখে নেয় একবার।
না, আমাদের দেখার মত কেউ নেই এখানে। অনায়াসে জানালা টপকে আমরা বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ি। সোজা এসে হাজির হলাম বাইরের বসার ঘরে। সময় নষ্ট না করে পোয়ারো ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল। আমিও এর পিছু নিলাম। পোয়ারো সোজা নিকের ঘরে ঢুকে পড়ল এবং নিকের বিছানার উপর বসে পড়ল। আমাকেও ইশারায় বসতে বলল।
দেখলে তো, কিরকম সহজ কাজ? কেউ বাধা দেওয়া দূরে থাক, কেউ টের পর্যন্ত পেল না। আমরা এখন নিরাপদে যা খুশি করতে পারি। পোয়ারো চাপা গলায় বলল।
পোয়ারো তুমি বলছ যে কোনও অচেনা মানুষ ঘটনাগুলোর পেছনে আছে, সেই তত্ত্বটাকে বাদ দিতে চাইছ?
অবশ্যই হেস্টিংস, অবশ্যই। কোনও পাগল বা অচেনা ব্যক্তির কাজ এটা মোটেই নয়। এখানে কাজগুলো যে করছে সে অবশ্যই নিকের ঘনিষ্ট বৃত্তের মানুষ।
আমরা সিঁড়ি বেয়ে আবার নিচের দিকে নামতে শুরু করলাম, আর তখনই থমকে গেলাম।
যাকে দেখে আমরা থমকে গেলাম সেও আমাদের দেখে প্রথমটায় থতমত খেয়ে যায়, চড়া গলায় প্রশ্ন করে–কে আপনারা? এখানে কি করছেন?
আহ-হ, পোয়ারো হাসিমুখে বলে–আপনি মসিয় ক্রফট, তাই তো?
হ্যাঁ, কিন্তু এখানে আপনারা…….
পোয়ারো বিনীত ভঙ্গিতে বলে, নিচে গিয়ে বসে কথা বলা যায় না?
বেশ। আমরা দুজন ভদ্রলোকের পেছন আবার একতলায় নেমে এলাম।
আমি এরকুল পোয়ারো।
লোকটির মুখের কালো মেঘ এবার দ্রুত পরিষ্কার হয়ে যায়।