সোমবারের আগে মিঃ ভাইসের সাথে কথা বলা যাবে না। কাল তো আবার রবিবার। মুশকিল। পোষ্ট অফিস থেকে ফেরার পথে পোয়ারো মন্তব্য করল।
কিন্তু মিঃ ভাইসের থেকে তোমার জানবার মত এমন কি জরুরি বিষয় আছে?
খুব সহজ। পেশাদারি ভঙ্গিতে আমাকে জেনে নিতে হবে যে আজ দুপুর ১২-৩০ মিনিট নাগাদ তিনি কি নিজের বাড়িতে ছিলেন? পোয়ারো গভীর চিন্তায় ডুবে থাকা অন্যমনস্ক গলায় বলে।যে ক্ষেত্রে গুলিটা উনি নিশ্চিতভাবে ছোড়েননি সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।
আমি পাদটীকা জুড়ি–আচ্ছা পোয়ারো, ম্যাজেস্টিক হোটেলে নিকের যে তিনজন বন্ধু-বান্ধবী রয়েছেন তাদের অ্যালিবাই যাচাই করে দেখবে না?
সেটা খুব সহজ কাজ নয়। ওদের মধ্যে কেউ একজন কয়েক মিনিটের জন্যে অন্যদের থেকে আলাদা হতেই পারে।
লাউঞ্জ, ধুমপানের ঘর, কাপড় ধোবার ঘর, নিচের বসবার ঘর, বাহানা অনেক হতে পারে। তারপর বাগানে ঘাপটি মেরে অপেক্ষা করা, মেয়েটা কখন সে জায়গাটা দিয়ে যাবে। সবই ঠিক আছে হেস্টিংস। কিন্তু সেটা আমরা প্রমাণ করব কিভাবে?
হাতের তালুতে সজোরে একটা ঘুষি মারে পোয়ারো, তারপর বলে–ভেবে দেখ হেস্টিংস, আমরা তো মাত্র কয়েকজনের কথা জেনেছি নিকের মুখে। আরও কতজন রয়ে গেছেন, নিক যাদের আদৌ সন্দেহের যোগ্য বিবেচিত না করায় তাদের প্রসঙ্গ তোলেই নি। যেমন লজের ভাড়াটে অচেনা অস্ট্রেলিয়রা। আরও অন্যেরা–যারা নিকের কাছের, ঘনিষ্ট, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন। হেস্টিংস–আমার বোধ, অনুভূতি বলছে কিছু একটা আছে। নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে, যা এখনও আলোয় আসেনি।
পোয়ারো হাসে, গভীর একটা শ্বাস ছাড়ে।
পোয়ারো তুমি বলতে চাইছে, নিক আমাদের কাছে কিছু একটা আড়াল করছে?
আমার কথায় পোয়ারো সজোরে মাথা নাড়ে।
না, ঠিক তা নয়। আসলে তিনি হয়তো কথাগুলো বলার প্রয়োজনই মনে করেননি। কারণ–তিনি ভেবেছেন এই মামলার সঙ্গে ওইসব কথার কোনও রকম সম্পর্ক থাকতে পারে না। আর আমি সেটাই ঠিক কি জানতে চাই। আত্মগর্ব নয়, তবে, খুব গর্বের সঙ্গে বলব–সাধারণ মানুষের থেকে আমার বুদ্ধিটা একটু বেশি। আমি, এরকুল পোয়ারো–সেই যোগাযোগটা দেখতে পেতাম, যেটা উনি পারছেন না। হয়তো সেই দরজাটা খুঁজে পেতাম যেটা এই রহস্যের অন্দরমহলে পৌঁছে দিত আমাকে। পোয়ারোকে এভাবে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াতে হত না।
আমার বিশ্বাস তুমি সেটা খুঁজে পাবে। তার আগেই না খুব বেশি দেরি হয়ে যায়।
৫. মিঃ ও মিসেস ক্রফট
০৫. মিঃ ও মিসেস ক্রফট
সে রাতে হোটেলে নাচের আসর বসেছিল। নিক তার বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে রাতের খাওয়া সারতে এসেছিল। আমাদের দেখে আন্তরিক উষ্ণ ভঙ্গিতে হাত নাড়ল।
কাঁধখোলা বেগুনি রঙের পোষাক পরেছে সে। এক উজ্জ্বল, উচ্ছল মহিলা। আমি পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে মন্তব্য না করে পারি না। পোয়ারো আমার কথায় সমর্থনসূচক মাথা নাড়ে। সঙ্গীদের থেকে একেবারে বৈপরীত্যমূলক উদাহরণ। ফ্রেডেরিকা রাইস পরেছেন সাদা রঙের পোষাক। ওরা সবাই মহা উৎসাহে নাচানাচি করল। বেশ সুন্দরী মহিলা। পোয়ারোর কথায় আমি সোৎসাহে বলি–আমাদের নিক তো?
না হে, আমি অন্য মহিলাটির কথা বলছি।
একটু থেমে পোয়ারো কয়েকমুহূর্ত পর আবার বলে–উনি কি বিষণ্ণ? অসুখী? কেউ জানে না। আমি তোমায় বলতে পারি হেস্টিংস, উনি একটা চলমান রহস্যের খনি।
তুমি কি ঠিক বলতে চাইছ?
পোয়ারো মৃদু হাসে। তারপর এক সময়ে বলে-তুমি নিজেই এক সময় সব বুঝতে পারবে, শুধু আমার কথাটা মাথায় গেঁথে রাখ।
আমাকে অবাক করে দিয়ে পোয়ারো হঠাৎ উঠে দাঁড়ায়।
নিক আর শ্যালিঙ্গার তখনও নাচছে। ফ্রেডেরিকা এবং লাজারুম নাচ শেষ করে চেয়ারে এসে বসেছে। লাজারুম তারপর উঠে দাঁড়ায় এবং বাইরে বের হয়ে যায়। মিসেস রাইস তখন একা।
পোয়ারো তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আমিও তাকে অনুসরণ করি। ওর পদ্ধতিটাই হচ্ছে সরাসরি এবং মূল লক্ষ্যভিত্তিক।
মাদাম, যদি অনুমতি দেন, আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই।
মিসেস রাইস আঙুল দিয়ে তার সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বলেন–নিশ্চয়ই। বসুন।
শীতল, অনুত্তেজিত কণ্ঠস্বর।
মাদাম আমি জানি না আপনার প্রিয় বান্ধবী আপনাকে জানিয়েছেন কি না, আজ আবার ওর ওপর একটা প্রাণঘাতি হামলা হয়েছিল।
কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ধূসর চোখ দুটোয় আতঙ্ক ভরে উঠল–তার মানে?
মাদাম জোয়েল বার্কলিকে আজ সকালে গুলি করে খুন করার চেষ্টা হয়েছিল।
সঙ্গে সঙ্গে মুখের ভাব পাল্টে যায়। মৃদু হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণে–নিক বলেছে নিশ্চয়ই আপনাকে।
না মাদাম, আমি নিজের চোখে ঘটনাটা ঘটতে দেখেছি। এই যে বুলেটটা। পোয়ারোর মেলে ধরা হাতের তালুতে বুলেটটা।
বিস্ফারিত চোখে বুলেটটার দিকে কয়েকমুহূর্ত তাকিয়ে থাকে ফ্রেডেরিকা, কিন্তু…. কিন্তু…… তার মানে………
মানেটা হচ্ছে খুবই সহজ। ওটা মাদাম জোয়েল বার্কলির কল্পনা নয়। বাস্তবে গত কয়েকদিন ধরেই ওনাকে খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে পোয়ারো বলে–আচ্ছা মাদাম, এখানে আসবার আগে আপনি কোথায় ছিলেন?
টাকিস্টকে। বন্ধুদের সঙ্গে।
বেশ, আমি কি আপনার সেই বন্ধুদের নামগুলো জানতে পারি? নিমেষের মধ্যে মহিলার যুগল কুঞ্চিত হয়ে উঠল–সেকথা আপনাকে বলব এরকম কোনও কারণ আছে কি?