- বইয়ের নামঃ পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
পেরিল অ্যাট এন্ড হাউস
০১. ম্যাজিস্টিক হোটেল
০১. ম্যাজিস্টিক হোটেল
আমার মনে হয়, ইংল্যান্ডের কোন সমুদ্রতীরবর্তী শহরই অন্তত দক্ষিণে সেন্ট লু-র মত আকর্ষণীয়ভাবে সুন্দর নয়। জলজ সম্রাজ্ঞী। একেবারে ঠিক নামেই ডাকা হয় অঞ্চলটাকে। আর সেন্ট লু আপনাকে অনিবার্যভাবেই মনে করাবে ফরাসি রিভিয়েরার কথা। দুধসাদা বালির চকচকে ভাব আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আমার প্রিয় বন্ধু এরকুল পোয়ারো-র কাছে আমি এতটাই উচ্ছ্বসিত জায়গাটাকে যে ও সাহাস্যে বলে বলে–ডঃ প্রাণবন্ত বর্ণনা। পর্যটকের আকর্ষণ বাড়াবে তোমার বর্ণনা মনে হয় না। ঠাট্টাকে গায়ে না মেখে আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে সহমত নও কি? বন্ধুবর কোন উত্তর দেয় না, তবে ওর ঠোঁটের কোণায় ঝুলতে থাকে একচিলতে মুচকি হাসি। আমি আবার প্রশ্নটা করি। মাপ কোরো হেস্টিংস, আসলে আমার মনটা এখন রয়েছে তোমার তুলনা করা অঞ্চলটাতেই। সর্বত্রগামী মানবমন সেখানেই বিরাজমান এখন।আমি সামান্য চমকিত হই দক্ষিণ ফ্রান্সে?মুচকি হেসে প্রিয়বন্ধু জানায়–হ্যাঁ, গত শীতে আমি সেখানেই ছিলাম। আর কি কাণ্ডটাই যে ঘটেছিল, সেটা ভাবছিলাম।
আমার মনে পড়ল দা ব্লু ট্রেন মার্ডার। অত্যন্ত জটিল মামলা। পোয়ারো যা তার অতুলনীয় প্রতিভা আর অসাধারণ বুদ্ধি দিয়ে কিস্তিমাত করেছিল। আহ ওই মামলাটায় তোমার সঙ্গী হতে না পারার আক্ষেপ আমার আজও যায়নি। সখেতে বলি–আমারও এইরকম একটা রোমাঞ্চকর কেসে তোমার অভিজ্ঞতার সাহায্য পাওয়াটা আমার পক্ষে মহামূল্যবান হত। আমি চোখের কোণা দিয়ে তাকালাম। পুরানো অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সবসময় বন্ধুবরের প্রশংসা সিরিয়াসলি নেওয়াটা বোকামোর কাজ হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে পোয়ারো অবশ্য যথেষ্ট সিরিয়াস মনে হচ্ছে মন্তব্যটার ব্যাপারে। অবশ্য কেনই বা নয়? সত্যিই তো আমার দীর্ঘতর অভিজ্ঞতা রয়েছে, সত্যিই যা মহামূল্যবান যে কারও পক্ষে। তাছাড়া আমার কাজের একটা বিশেষতর মেথড আছে যা প্রায়শই কাজ হয়ে ওঠে দুর্দান্তভাবে।
আসলে আমি সেটা ওইসময় দারুণভাবে মিস করেছিলাম প্রিয়তম বন্ধু হেস্টিংস, তোমার প্রবল ইমাজিনেশান সে স্বপ্নাতুর গলায় বলে চলে। আসলে, সত্যি ওরকম পরিস্থিতিগুলোয় কিছু হালকা মুহূর্তের প্রয়োজন হয় বৈকি। তোমার মত এক বন্ধু, যার কল্পনাশক্তি অতীব প্রখর, তার অভাব স্বাভাবিকভাবেই বোধ করেছি। তোমার পরিবর্তন হিসাবে আমার পাঁচক যে ছিল, তার সঙ্গে কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম বটে।কিন্তু দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে! জার্জের কল্পনাশক্তি মোটেও তোমার মত প্রখরতর হতে পারে না, ছিলও না। পোয়ারোর মন্তব্যে আমি বেশ ধন্দে পড়ে গেলাম। ব্যাপারটা প্রশংসা? নাকি চিরাচরিত পোয়ারো মার্কা এক অনাবিল ঠাট্টা।
আমরা বসেছিলাম সেন্ট লু-র অন্যতম সেরা ম্যাজিস্টিক হোটেলের একটা বারমুখী বারান্দায়। সমুদ্রের মুখোমুখি। পোয়ারো আরাম কেদারায় এলিয়ে বসে নির্বিকারভাবে গোঁফ মুচড়ে চলেছে। মাসটা আগস্ট। রোদ ঝকঝকে এক সকাল। গতকাল রাতেই আমরা এই শহরে এসে পৌঁছেছি। নেহাতই এক সপ্তাহের ছুটি উপভোগ করতেই আসা। মনে তো হচ্ছে যা পরিবেশ, আবহাওয়া, একটা দুর্দান্ত আদর্শ ছুটি আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে।
আমি আবার খবরের কাগজে মন দেবার চেষ্টা করলাম। যদিও সেখানে রোমাঞ্চকর বা উৎসাহ জানানোর মত কোনও খবরই পাচ্ছিলাম না, ছিলও না কিছু।
অলস হাতে পাতা ওলটাতে ওলটাতে আমি বললাম-এক আশ্চর্য অসুখ দেখছি এই টিয়াসড়ক সত্যিই, আশ্চর্যজনক–সিভম-য়ে আরও দুজন মারা গেছে। আমি পরের পাতায় যেতে যেতে বলি–নাহ, সেটনের এখনও কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটা সত্যি রহস্যময়। দুঃখজনক। নিজের আবিষ্কার করা, তৈরি করা উড়ানান। অ্যালবাট্রস নিয়ে তিনি পৃথিবী পরিভ্রমণে বেরিয়েছিলেন।
পশ্চিমের দিকে যাবার কথা শেষ জানতে পারা গিয়েছিল। তারপর থেকেই আর কোনও খোঁজ নেই সেটনের। যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
সত্যি! ব্যাপারটা খুব রহস্যজনক। একটু থেমে আমি আবার সহানুভূতির গলায় বলি, ব্যাপারটা নিশ্চয়ই হোম সেক্রেটারিকে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে ফেলেছে?
সে তো নিশ্চয়ই। যে কারণে তাকে এক অযোগ্য ব্যক্তির কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠাতেই হয়।
কথাটা শুনে প্রখর চোখে তাকালাম পোয়ারোর দিকে। একটা মুচকি হাসি ঝুলছে এখন ওর বুদ্ধিদীপ্ত ঠোঁটের কোণায়।
পকেট থেকে একটা একটা চিঠি বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল-কাল আমরা এসে পৌঁছানোর আগেই এটা চলে এসেছিল।
আমি চিঠিটা মনোযোগ দিয়ে পড়লাম, দারুণ ব্যাপার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠি : তোমার ক্ষমতা, দক্ষতার ওপর প্রচণ্ড ভরসা আছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ব্যক্তিগতভাবে তোমার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন এই মামলায়।
পোয়ারো সমর্থনসূচক হেসে বলল-তাহলে ছুটির এখানেই বারোটা বাজল।
আমি হতাশ গলায় বলি–না, না, তার কোন প্রশ্নই ওঠে না।
কিন্তু হোম সেক্রেটারি চিঠিতে লিখেছেন বিষয়টা খুব জরুরি।