কাঁধ ঝাঁকিয়ে পোয়ারো বললেন, অপরিহার্য পাত্রটা। কারণ পানপাত্রটি বিক্রির চেষ্টা করা হয়নি। এতে মনে হওয়া স্বাভাবিক যেটা এসব জায়গায় আছে সেখানে তার মূল্যায়ন করা অসম্ভব। তখন মনে পড়ে প্যাট্রিকে, যার কন্যা সন্নাসিনী।
মিঃ এথেরি পাওয়ার খুশী মনে পোয়ারোর দক্ষিণার কথা জিজ্ঞেস করেন।
এরকুল পোয়ারো জবাব দিলেন, কোনো দক্ষিণা নেই।
এথেরি পাওয়ার তার কথা শুনে বিস্মিত হলেন।
ছেলেবেলায় রূপকথার কাহিনীর মতো তিনি বলেন, তার প্রার্থনা এটা নয়, সামান্য একটা… এই বলে এরকুল পোয়ারো পানপাত্রটির উপর হাত রেখে বলল, এটা মঠেই ফিরিয়ে দিন।
তার কথা শুনে খানিক স্তব্ধ হয়ে এথেরি বলেন, মিঃ পোয়ারো কি পাগল হয়ে গেছেন?
উত্তরে পোয়ারো জানালেন, তিনি পাগল হননি।
এই বলে পানপাত্রটি হাতে তুলে নিলেন। তারপর নখ দিয়ে গায়ে জড়িয়ে রাখা সাপটার মুখে চাপ দিতে চাইলেন। পানপাত্রের ভেতর হাতলে ফাঁপা অংশে ফোকর সৃষ্টি হলো।
পোয়ারো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বলেন, এটাই রজিয়া পোপের পানপাত্র। এই ছোট্ট ফাটা দিয়ে পানীয়তে বিষ মেশানো হতো, এই পানপাত্রের ইতিহাসটা অদ্ভুত। এর হৃদয়ের মধ্যে একাত্ম হয়ে আছে হিংসা আর রক্তপাত। তার মধ্যেও নেমে আসতে পারে মৃত্যুর কঠিন স্পর্শ।
কুসংস্কার হয়তো তাই-ই বলা যায়। কিন্তু মিঃ পোয়ারো এই জিনিষটা পেতে এত লালায়িত কেন? প্রশ্ন করেন এথেরি পাওয়ার।
এর সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর বিভীষিকার জন্যে নয়। অহঙ্কার বজায় রাখা এর একমাত্র কারণ। তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। পরাজয় স্বীকার করবেন না। তিনি পরাজিত হননি। পানপাত্র তার দখলেই। কিন্তু এবার তিনি মহৎ দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন কেন? দশ বছর ধরে সেখানে সমাহিত ছিল। ধর্মস্থানেই থাকতে দিন তাকে শান্তিতে। তার সঙ্গে জড়িত আমূল শক্তিকে শোধিত হতে দিন। একদিন এই পানপাত্রটি গির্জার ছিল, গির্জাতেই তাকে ফিরে যেতে দিন। আর এই প্রার্থনাই করি আমরা, মানুষের আত্মা শোধিত আর পবিত্র হয়ে পাপমুক্ত হোক।
এরপর পানপাত্রটি খুঁজে পাবার কাহিনী বলতে শুরু করেন।
পশ্চিম সাগরের বুকে এক শান্তিকাননে–বিস্মৃত যৌবনের এক স্বর্গ আর চিরায়ত সৌন্দর্যের দেশে পাত্রটি পাওয়া গেছে।
চোখের ওপর একটা হাত চাপা দিয়ে কিছুক্ষণ থাকার পরে মুখ খুলল, ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির ছোঁয়া, ধরা কণ্ঠে বলেন–আপনার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক। আমার সামনে উপহার হিসেবে পানপাত্রটি মঠে নিয়ে যান। উপহারটি অবশ্যই অমূল্য। তার পরিবর্তে তিনি কি করতে পারেন?
গম্ভীর কণ্ঠে পোয়ারো জবাব দিলেন–মঠবাসীরা আপনার আত্মার জন্য প্রার্থনা জানাবে।
একটা লোভাতুর ক্ষুধার্ত হাসি ফুটল ঐ এথেরি পাওয়ারের মুখে–তাহলে ঐটিকে লগ্নী হিসেবে গণ্য করা যায়। হয়তো আমার সেরা লগ্নী।
.
০৯.
মঠের ছোট্ট কক্ষে এরকুল পোয়ারো মঠাধ্যক্ষার হাতে পানপাত্রটি তুলে দিতে দিতে তার ফিরে পাওয়ার কাহিনীটি বলতে লাগলেন।
মধ্যবয়স্কা অস্ফুটে বললেন–ওকে আমাদের ধন্যবাদ জানাবেন। আমরা ওর আত্মার জন্যে প্রার্থনা করব।
এ প্রার্থনার ওর প্রয়োজন আছে–শান্তকণ্ঠে বললেন পোয়ারো।
–উনি কি খুব অসুখী?
পোয়ারো জবাব দিলেন–এতই অসুখী যে সুখের অর্থ তার কাছে অজানা।
মঠাধ্যক্ষা শান্তস্বরে বললেন–একজন অর্থশালী মানুষ হয়েও?
কোনো জবাব দিলেন না পোয়ারো, কারণ জবাব দেয়ার মতো কোনো উত্তর তার জানা নেই।