আপনার ভাষায় কি রকম? প্রশ্ন করলো পোয়ারো। গোপন হাত বদল?
মাথা নাড়লেন ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফ। তবে সন্দেহ রয়েছে। এই সম্ভাবনা খুবই কম। জিনিষটা লুকিয়ে রাখা হয়। আর যে খবর রাখতো সে এখন মৃত।
আপনার মতানুযায়ী মৃত ব্যক্তিটি ফেসী? জিজ্ঞাসা করেন মিঃ পোয়ারো।
হ্যাঁ, পাত্রটি ইতালীর কোথাও লুকিয়ে রাখা হতে পারে। ভাব সে দেশের বাইরে অন্য কোনো স্থানে সেটাকে ফেলতেও পারে। লুকিয়ে যেখানেই রাখা হোক না কেন, এখনো সেখানেই আসে ফেলে পোয়ারো বটা লুকিয়ে রাখা
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোয়ারো বলেন, অবাস্তব কল্পনা। এর আসল ব্যাপারটা হলো বিরাট এক সোনার পাত্র। সাধারণভাবে সেটা লুকিয়ে রাখা যায় না।
জ্যাপ স্টাফের জবাবে অস্পষ্টতা ধরা পড়ে।
তা বলা অসম্ভব। ওরা কথাটা সম্ভবপর বলেই ধার ধারে না। ঘরের মেঝের ভেতর বা এইরকম কোথাও।
ফেসীর নিজস্ব বাড়ি ছিল কি?
হা। লিভারপুলে। হাসলেন জ্যাপ স্টাফ। তবে পাত্র এ দেশে কখনই ছিল না। এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত।
তার পারিবারিক অবস্থা কি রকম? জিজ্ঞাসা করেন পোয়ারো।
স্ত্রী ভদ্র বংশীয়া। যক্ষ্মা রোগগ্রস্তা। স্বামীর জীবনধারণ পদ্ধতি নিয়ে সদা চিন্তিত থাকতেন। ধর্মপ্রাণ মহিলা। কট্টর ক্যাথেলিক ধর্মাবলম্বী। তবে স্বামীকে ত্যাগ করতে মনস্থির করতে পারেন না। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। মেয়েটিও মার পথ অনুসরণ করেই চলে। সন্ন্যাস জীবন বেছে নেয়। কিন্তু একমাত্র ছেলে যেন বাপ কা বেটা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত যা শুনেছি তা হলো সে আমেরিকায় জেল খাটছে।
পোয়ারো ওর ছোট্ট ডায়েরিতে লিখে নিলেন। আমেরিকা। ফেসীর ছেলের পক্ষে উইল লুকোবার জায়গার খবর পাওয়া সম্ভব ছিল কি?
ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাহলে চোরাই জিনিষটা ইতিমধ্যে চোরাই মাল ক্রেতাদের কাছে এসে পৌঁছাত।
পানপাত্রটি গালিয়ে ফেলা হতে পারে। সংশয় প্রকাশ করেন পোয়ারো।
তা হয়তো সম্ভব। সংগ্রাহকদের কাছে এই সব জিনিষের আসল দাম আর সে সব বিক্রির ব্যাপার ঘটে তাতেও মনে হয় তাদের কোনো নীতির বালাই নেই। সরল ভাবে কথাগুলি বলেন জ্যাপ স্টাফ।
তাহলে স্যার রুবেন এই জাতীয় বিচিত্র ব্যাপারটা যে করে থাকতে পারেন, এতে আশ্চর্য হবার কোনো কারণই ঘটবে না।
হেসে উঠে জবাব দিলেন ইনসপেক্টর, মোটেই না। তিনি শিল্পকর্মের ব্যাপারে খুব-একটা পারদর্শী নন।
দলের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে? জিজ্ঞেস করেন পোয়ারো।
ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফ উত্তর দিলেন, কিক্সোভিডিক আর জুবলে, দুইজনেরই কঠিন শাস্তি হয়। তবে তার যতদূর মনে পড়ছে তাদের ছাড়া পাবার সময় পার হয়ে গেছে।
প্রশ্ন করেন পোয়ারো, জুবলে জাতিতে কি ফরাসী?
হা, সে ছিলো দলের মাথা।
আর কে কে ছিল দলে?
পোয়ারোর প্রশ্নের উত্তরে ইনসপেক্টর বলেন, দলে একটি মেয়েও ছিল। লোকে তাকে লালকিট বলে ডাকত। মেয়েটি শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি দেয়।
তা ছাড়া আর কেউ? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।
ইউগোইখান নামের এক ছোকরা দলের সঙ্গে ছিল বলে জানা যায়। লোকটি একজন ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার হিসেবদপ্তর ইস্তাম্বুলে, কিন্তু প্যারিতে একটা দোকান ছিল। তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি খুব ধূর্ত প্রকৃতির।
হাই তুলে হাতের ছোট্ট খাতাখানার দিকে নজর বুলিয়ে দেখেন তাতে লেখা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালী, ফ্রান্স, তুরস্ক, অস্ফুট স্বরে বললেন, একবার সারা দুনিয়া চক্কর দিতে হবে।
.
০৩.
নিজের যোগ্য পরিচারকের কাছে মাঝে মাঝে পোয়ারো কাজের ব্যাপারে আলোচনা করেন। এটা তার অভ্যাসের একটা দিক বলা যায়। তিনি তাকে বললেন যদি তাকে কাজের প্রয়োজনে পাঁচটি দেশে অনুসন্ধান চালাতে হয় তবে সে কোথা থেকে শুরু করবে।
পরিচারকটি উত্তর দিল, আকাশ পথে যে কোনো জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাওয়া সম্ভব।
এখন প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে পোয়ারো কি করতেন? অথবা বলা যায়, তিনি কি করেছিলেন?
সোজাসুজি বলতে হলে এর উত্তর হলো জর্জ। তিনি বেশ সাহস নিয়েই ভ্রমণ করেছিলেন। তবে তাকেও শেষ পর্যন্ত খবরাখবর সংগ্রহ করতে হয়েছিল। কারো মতে, প্রাসথির্ডনের কাছ থেকে, কারো মতে নৌরউসের কাছ থেকে।
মন্তব্য করলেন এথেরি পাওয়ার, শুধু জীবনে একটা জিনিষই বোঝেন, সেটা হলো কাজ। জীবনে স্বর্ণখচিত একটা বয়স আছে। তার জন্য অন্যে যা করতে সক্ষম সে কাজ তার নিজের করা উচিত নয়।
তাকের ওপর থেকে একটা ফাইল টেনে নিয়ে একটা পাতা খুলে দেখলেন। তাতে লেখা পোয়ারোর দ্বারস্থ ও নির্ভরশীল।
আধুনিক কয়েকটা নাম আর কিছু ঠিকানা টুকে নিতে বললেন জর্জকে।
.
০৪.
তিনমাস পর একদিন এরকুল পোয়ারো পায়জামার ওপর শার্ট পরে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তার দৃষ্টি মেলে ধরলেন। সন্ধ্যায় চিলের ঝাঁক বিপদের সুরে জলের বুকে উঠলো না। বাতাসে ভেসে আসছে ভিজে স্যাঁতসেতে গন্ধ।
সারাজীবনে কোনোদিন ভাবতে পারেনি এইরকম জনহীন পরিত্যক্ত জায়গার কথা। স্থানটার একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। একটা বিষাদমাখা অপার্থিব সৌন্দর্য, অবিশ্বাস্য অতীতের সৌন্দর্য।
তার দৃষ্টি নির্জন তীরের উপর ঘুরে এসে সেই সাগরেই থামলো। ঐখানেই কোথাও অতীতের সেই ব্রেস্ট দ্বীপ যৌবনের স্মৃতিভরা…নিজের মনে কথা বলে চলেন পোয়ারো। সেই আপেল গাছ, সংগীত আর স্বর্গ।