তারপর থেকে পানপাত্রের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি না?
ঠিক তাই। উত্তরে বলেন মিঃ পাওয়ার।
তারপর সেটা বিক্রির ব্যবস্থা হয়নি? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।
উত্তরে মিঃ পাওয়ার বলেন, তিনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত হননি। শুধু পুলিশ নয়, বেসরকারী গোয়েন্দারাও পানপাত্রটির খোঁজে নেমে পড়েছিল।
পানপাত্রের জন্য যে টাকা ব্যয় করেছিলেন তার কি ব্যবস্থা হলো?
মিঃ পোয়ারোর প্রশ্নে উত্তর দিলেন মিঃ পাওয়ার, মার্সিভের সততা প্রশ্নাতীত। পানপাত্রটি তার বাড়ি থেকে চুরি হওয়ায় তিনি তার মূল্য ফেরৎ দিতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
এর সঠিক কারণ জানতে চাইলেন গোয়েন্দা মিঃ পোয়ারো।
উত্তরে এথেরি পাওয়ার জানালেন, তিনি নিজেই ব্যাপারটাকে হাতে রাখতে চেয়েছিলেন।
পোয়ারো বিশ্লেষণ করে বললেন, মার্সিভের প্রস্তাব যদি গ্রহণ করতেন তাহলে পানপাত্রটি হাতছাড়া হয়ে যাবার ভয় থাকতো। এক্ষেত্রে সম্পত্তি আইনতঃ তারই রইল।
ঠিক।
তার এই মনোভাবের প্রকৃত কারণ কি, জানতে চাইলো পোয়ারো।
মৃদু হেসে মিঃ পাওয়ার বলেন, ঠিক জায়গাতেই তিনি লক্ষ্য রেখেছেন। ব্যাপারটা খুব সহজ সরল। তার ধারণা ছিল স্যার রুবেন রোজেনকালের দখলেই ছিল পানপাত্রটি। তিনি শুধু একজন সংগ্রাহক নন, তার একজন ব্যক্তিগত শত্রু ছিলো যিনি লেনদেনের ব্যাপারে পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই শেষ পর্যন্ত তিনিই জয়ী হন। তাদের পরাজয়ের শত্রুতা পানপাত্রের ব্যাপারে তুঙ্গে ওঠে। প্রত্যেকে সেটা দর্শন করতে আগ্রহী। নিলামের সময় ডয় গঞ্জেধের প্রতিনিধিরা একের পর এক ডেকে বলেন।
শেষ পর্যন্ত তার প্রতিনিধির ডাকের ওপর জিনিসটা তার হাতে আসে? তীর্যক প্রশ্ন করেন মিঃ পোয়ারো।
ঠিক তা নয়, বলে ইতস্ততঃ করলেন মিঃ পাওয়ার। একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে দ্বিতীয় একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করেন তিনি। প্যারীর একজন সাজানো প্রতিনিধি। কেউ কারো কাছে হার মানতে প্রস্তুত ছিলেন না। ওটা দখল করতেই হবে এটা মনস্থির করে ফেলেছিল। সেক্ষেত্রে তৃতীয় ব্যক্তিটি পাত্রটি দখল করার পর খুব সহজেই তার কাছ থেকে ধীরে সুস্থে ওটা দখল করা সহজ হলো।
আসলে একটা টাকার বাজি, মন্তব্য করলেন পোয়ারো।
ব্যাপারটা সফল হওয়ায় অনতিকালের মধ্যে স্যার রুবেন বুঝতে পারেন কি ভাবে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তার বিশ্বাস ছিল পরাজয় স্বীকার না করে মতলব বের করা। স্যার রুবেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই তাই চুরির ব্যবস্থা করেন।
ওঃ না, না! ঘটনাটি তত অমার্জিত নয়। সেটি ছিল এই ধরনের, স্যার রুবেন কেন পাত্র কিনেছিল যার উৎস অজানা।
পুলিশ ইতিমধ্যেই পানপাত্রের একটি বর্ণনা প্রচার করেছিল।
পানপাত্রটি কোনোভাবেই খোলাখুলি দেখানো হতো না।
তার ধারণা স্যার রুবেনের দখলে যে ওটি ছিল এই ধারণাটাই তার পক্ষে যথেষ্ট।
তাছাড়া মিঃ পাওয়ার মার্সিভের প্রস্তাব গ্রহণ করলে স্যার রুবেনের পক্ষে তার সঙ্গে গোপনীয় ভাবে সেটা বের করে নেওয়াটা সহজ হতো। ফলে আইনতঃ পাত্রটি তার সম্পত্তি হয়ে উঠতো। কিন্তু আইন মোতাবেক পাত্রটির মালিকানা তারই থাকায় সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের একটা প্রবল সম্ভাবনা ছিল।
তার অর্থ হলো এই যে তিনি স্যার রুবেনের কাছ থেকে চুরির ব্যবস্থা করতে পারতেন।
পোয়ারোর এই জাতীয় মন্তব্যে প্রতিবাদ করে উঠে মিঃ পাওয়ার বলেন, এটাকে চুরি বলা হচ্ছে কেন? তিনি তার নিজের জিনিসকে উদ্ধার করেছেন বলা যায়।
তবে পোয়ারোর বিশ্বাস তিনি এই কাজে সফলতা পাননি।
তার একটা যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। কারণ, রোজেনবাগের কাছে আদৌ সেটা পৌঁছায়নি।
কি ভাবে জানতে পারলেন? প্রশ্ন করলেন পোয়ারো।
ইদানিং তেল সংক্রান্ত কিছু স্বার্থের ক্ষয়ক্ষতি ঘটেছে। রোজেনবাগের ও তার স্বার্থ এখন একীভূত। এখন তারা পরস্পরের সঙ্গে ঘটনাটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছেন এবং তিনি আশ্বস্ত করেছেন পানপাত্রটি এখনও তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।
মিঃ রোজেনবাগকে তিনি বিশ্বাস করেন?
হ্যাঁ, করেন বটে। সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন মিঃ পাওয়ার।
তাহলে এইকারণেই তার প্রবেশ। তাকে এখন এজন্য সাক্ষীগণের পিছনে কুকুরের মতো ছুটতে হবে। দশ বছর কম নয়। বলেন পোয়ারো।
এথেরি পাওয়ার শুকনো কণ্ঠে জবাব দিলেন, যদি ব্যাপারটা অত সহজ হবে তাহলে তাকে আমন্ত্রণের প্রয়োজন হতো না।
এরকুল পোয়ারো টানটান হয়ে উঠলেন। ঠান্ডা গলায় তিনি উত্তর দিলেন–অসম্ভব বটে। কোনো কিছু তার জানা নেই। এবং স্বীকার করতে অভ্যস্ত নই। মঁসিয়ে, তিনি নিজেকে প্রশ্ন করেন কাজটা তার গ্রহণ করা উচিত কিনা।
এতে যে গুরুত্ব আছে তার পারিশ্রমিক তিনি উল্লেখ করতে পারেন, এই বলে হাসলেন পোয়ারো।
এই শিল্পকর্ম তিনি ফিরে পেতে উৎসুক? নিশ্চয়ই নয়, প্রশ্ন রাখলেন পোয়ারো।
মিঃ এথেরি পাওয়ার জবাব দিলেন–বরং তিনি একথা বলতে পারেন তার মতো তিনিও পরাজয় স্বীকার করতে প্রস্তুত নন।
এরকুল পোয়ারো মাথা নোয়ালেন। হ্যাঁ, এই ভাবে বলতে চাইলে বুঝতে হবে…
.
০২.
ইনসপেক্টর জ্যাপ স্টাফকে বেশ উৎসাহী বলে মনে হলো। বেরাট্রিলা পানপাত্র? হ্যাঁ, মনে পড়েছে। এই নিলামের মধ্যমণি তিনিই ছিলেন। তিনি কিন্তু কিছু কিছু ইতালীয় ভাষা জানেন। ব্যাপারটা নিয়ে যথেষ্ট মাথা গলালেও কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো কিনারা করা যায়নি।