- বইয়ের নামঃ দি প্রসিকিউশন
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ সমতট
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি প্রসিকিউশন
১. বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ
দি প্রসিকিউশন (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
০১.
বিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো মেহগনি ডেস্কের পিছনে যে মানুষটি উপবিষ্ট রয়েছেন তার দিকে চিন্তিতভাবে তাকালেন। নজরে পড়লো একজোড়া ভুরু, নিচতা মেশানো মুখ। ভীতুর ডেলা, চোয়াল আর তীক্ষ্ণ কল্পনাপ্রবণ চোখদুটি। লোকটিকে দেখেই একনজরে তার মনে হলো এথেরি পাওয়ার কেন এত বিরাট অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্ব হতে পারলো।
ডেস্কের ওপর ছড়িয়ে পড়া নিখুঁত কৃশ হাত দুটো দেখেই অনুমান করতে পারলেন নামী সংগ্রহকারী হিসেবে তার এত খ্যাতির কারণ কোথায়। অতলান্তিকের চারিদিকেই তিনি ধনী হিসেবে বিশেষ পরিচিত।
শান্ত ধীর কণ্ঠে এথেরি পাওয়ার কথা বলছিলেন। মিঃ পোয়ারো বর্তমানে বেশি মামলার দায়িত্ব গ্রহণ করছেন না তা তার জ্ঞাত। কিন্তু সব কিছু শুনলে তিনি বোধহয় ঐ কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
জিজ্ঞাসা ভঙ্গিতে বসে রইলেন পোয়ারো। মাথাটা একপাশে হেলানো কিছুটা। চিন্তামগ্ন হয়ে রইলেন।
মিঃ পাওয়ার বললেন, ঘটনাটি একটি শিল্পকর্ম উদ্ধারের। বস্তুটা হলো স্বর্ণখচিত একটা পাত্র যেটা নির্মিত প্রায় রেনেসাঁর আমলে। কথিত আছে, এটি পোপ আলেকজাণ্ডার ব্যবহার করতেন। কোনো বিশেষ অতিথিকে কদাচিৎ পানপাত্র থেকে পান করতে দিতেন। মঁসিয়ে, যারা পান করতে তার মৃত্যুবরণ করতেন।
চমকপ্রদ ঐতিহাসিক কাহিনী বটে, অস্ফুট স্বরে পোয়ারো বলেন।
এই পানপাত্রের সঙ্গে হিংসার একটা অদৃশ্য বন্ধন আছে। বেশ কয়েকবার সেটা চুরি যায়। এবং দখলের জন্য রক্তপাতও ঘটে গেছে।
পোয়ারো প্রশ্ন করেন, সেটা তার বৈশিষ্ট্যের জন্য নাকি অন্য কারণে।
এর গঠনের কাজ অত্যন্ত চমৎকার। (কথিত আছে, এটি তৈরি করেন বেনেভূত মেলেনি) নক্সাটা হলো গাছের সঙ্গে জড়ানো এক রত্নখচিত সাপ। আপেলগুলি পান্নার তৈরি।
পোয়ারোর কণ্ঠস্বরে আপাত আগ্রহের সুর বাজতে লাগলো-আপেল!
পান্নাগুলি সত্যিই চমৎকার। সাপের দেহের আকৃতি চুনীগুলি বহু মূল্যবান। তা সত্ত্বেও এই পানপাত্রের আসল মূল্য হলো তার সাথে জড়ানো ঐতিহাসিক সম্পর্কে। ১৯২৯ সালে মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলা সেটি বিক্রির ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য সংগ্রাহকদের সঙ্গে ডাকাডাকি করে শেষ পর্যন্ত তিনিই ত্রিশ হাজার পাউণ্ডে পাত্রটি লাভ করেন।
পোয়ারোর ভুরু দুখানি একটু উপরে উঠলো। রাজা মহারাজাদের উপযুক্ত টাকাই বটে। মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলা ভাগ্যবান ব্যক্তি বলা যায়।
এথেরি পাওয়ার জানালেন– কোনো জিনিস যদি তার লাভ করার ইচ্ছা থাকে তার জন্য তিনি যে কোন মূল্য দিতে প্রস্তুত।
শান্তকণ্ঠেই পোয়ারো বললেন, সেই স্থানীয় প্রবাদ তিনি শুনে থাকবেন, যা তোমার প্রয়োজন গ্রহণ করো। এর জন্য মূল্য দাও ঈশ্বরের কাছে।
ভ্রূকুটি করলেন এথেরি পাওয়ার। দুচোখে ক্রোধের রেখা দেখা গেল। বললেন, মনে হচ্ছে তিনি দার্শনিকদের মতো কথা বলতে চাইছেন।
পোয়ারো মন্তব্য করলো, আমি পর্যালোচনার বয়েসেই পৌঁছে গেছি মঁসিয়ে।
নিঃসন্দেহে, উত্তর দিলো মিঃ পাওয়ার, কিন্তু পর্যালোচনার মাধ্যমে তার পানপাত্র উদ্ধার হবে কি?
মিঃ পাওয়ার বলেন, উদ্ধার করতে হলে চাই কিছু কর্মশক্তি।
শান্তকণ্ঠে মাথা দোলালেন পোয়ারো–অনেকে ঠিক এই ধারণাই করে। তিনি বলেছেন এই পাত্রটি তিনি মার্সিভ দি ম্যান বেরাট্রিলার কাছ থেকে কিনেছেন।
ঠিকই ধরেছেন তিনি। এখন তিনি যা বলতে চাইছেন সেটা হলো তার হাতে পড়ার আগে রত্নটি চুরি যায়। নিলামের দিন রাতেই মার্সিভের প্রাসাদে চুরি হয় আরও আট-দশটি বহু মূল্যবান জিনিস। তার মধ্যে ছিল পানপাত্রটি।
তারপর? প্রশ্ন করেন পোয়ারো, উত্তরে এথেরি পাওয়ার বলেন, পুলিশরা ব্যাপারটা হাতে নেয়। এই ডাকাতিকে কুখ্যাত আন্তর্জাতিক দলের কাজ বলে মনে হয়। ঐ দলের দুইজন, জুবলে নামের এক ফরাসী আর কিক্সোভিডিক নামে একজন ইতালীয়। তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছু চুরি হওয়া জিনিসও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়।
কিন্তু পানপাত্রটি পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা, তিনজন ডাকাত দলে ছিলো। দুজনের নাম আগেই বলা হয়েছে। তৃতীয় জন হলেন আইরিশ। নাম প্যাট্রিক ফেসী। শেষোক্ত ব্যক্তি বিড়ালের মতো একজন সাবধানী, সুদক্ষ ও চটপটে চোর। সব কিছু সেই চুরি করেছিলো বলে জানা যায়। জুবলে ছিলেন দলের মাথা। কিক্সোভিডিক গাড়ি চালায় এবং মাল নিচে নামাবার জন্য সে নিচে অপেক্ষা করে।
আর চোরাই মালগুলি কি তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল? প্রশ্ন করেন পোয়ারো।
সম্ভবতঃ, উত্তর দিলেন পাওয়ার।
সেই তৃতীয় ব্যক্তিকে কি আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছিল?
উত্তরে এথেরি পাওয়ার বলেন, তিনি যে অর্থে বোঝাতে চাইছেন সঠিক তা নয়। লোকটি বৃদ্ধ। শরীরের পেশীগুলি ছিলো শুষ্ক। সপ্তাহ দুই পরে একটি বাড়ির ছতলা থেকে পড়ে তিনি মারা যান।
ব্যাপারটা কোথায় ঘটেছিল?
প্যারিসে। সে সম্ভবতঃ ব্যাঙ্কার জুয়োলিয়ারোর প্রাসাদ লুঠ করার মতলব এঁটেছিল।