পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে হাসিখুশি ভঙ্গিতে হেঁটে চলেছে। দুই তরুণ তরুণী। তাদের একজন গ্রেটা, দ্বিতীয় জন স্বয়ং আমি।
সমস্ত শরীর যেন মুহূর্তে নিথর হয়ে গেল। মিঃ লিপিনকট তাহলে আমাদের চিনতে পেরেছেন।
গ্রেটা আর আমি দুজনেই যে পূর্বপরিচিত এ তথ্যও তার অজানা ছিল না?
কেউ নিশ্চয় গ্রেটাকে আগে চিনতে পেরেছিল এবং লিপিনকটকে কাগজের কাটিংটা পাঠিয়ে দিয়েছিল।
হয়তো এর পেছনে কোন অভিসন্ধি ছিল না। কিন্তু ছবিটা হাতে পেয়েই লিপিনকট আমাদের দুজনকে গোড়া থেকেই শনাক্ত করতে পেরেছিলেন।
মনে পড়ল, অনেকবারই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে তিনি জানতে চেয়েছিলেন গ্রেটার সঙ্গে আমার আগে কখনো দেখাসাক্ষাৎ হয়েছে কিনা। আমি বরাবরই অস্বীকার করে গেছি।
এখন বুঝতে পারছি, আমার কথা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল, তা তিনি ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। আর তখন থেকেই তাঁর সন্দেহের দৃষ্টি আমার ওপরে ছিল।
প্রচণ্ড একটা ভয় আমাকে ক্রমশ কুঁকড়ে ফেলছিল। হাত-পা শিথিল হয়ে আসতে লাগল। ইলিয়াকে যে আমিই সুকৌশলে খুন করেছি–এমন সন্দেহ না করলেও এধরনেরই কিছু একটা আঁচকরা তার পক্ষে অসম্ভব নয়। পাকা বুদ্ধির ঝানু মাথা তার।
গ্রেটাও ঝুঁকে ছবিটা দেখল। তাঁরও মুখ বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, গ্রেটা, বুঝতেই পারছ, আমরা যে পরস্পরের পরিচিত এবং বিশেষ কোন উদ্দেশ্য নিয়েই যে নিজেদের পরিচয়ের কথা গোপন করে আমাদের ইলিয়ার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছিলাম, প্রথম দিন থেকেই ওই ধূর্ত শেয়ালটা জানতে পেরেছিল।…কিন্তু আসল উদ্দেশ্যটা ধরতে পারেনি। আমি যদি এখন তোমাকে বিয়ে করি, তাহলে তা আর তার কাছে অস্পষ্ট থাকবে না।
গ্রেটা বলল, মাইক, তুমি একটা ভীরু খরগোশের মত হয়ে যাচ্ছ কেন? তোমার সাহসের জন্যই আমি তোমাকে পছন্দ করি। কিন্তু এখন তুমি নিজের ছায়া দেখেই যেন ভয় পাচ্ছ।
আমি বিড়বিড় করে বললাম–এসব কথার আর সময় নেই গ্রেটা। সামনে অসীম অন্ধকার। রাত–অন্তহীন গভীর কাল রাত
–পাগলের মত বকবক করবে না। তুমি কি কাপুরুষ হয়ে পড়ছ–ভয়ে ভেঙ্গে পড়ছ–
–গ্রেটা, অভিশপ্ত জিপসি একরের অভিশাপ থেকে আমরাও মুক্ত থাকতে পারিনি। সত্যিই এ জায়গাটা অভিশপ্ত।
–এসব কুসংস্কার তুমি বিশ্বাস কর মাইক?
আমার ভেতরে কিছুক্ষণ আগের দুরন্ত ক্রোধটা আবার জেগে উঠল। একটা বিদ্বেষ জিঘাংসা।
প্রচণ্ড ঘৃণার দৃষ্টি নিয়ে ঘুরে তাকালাম গ্রেটার মুখের দিকে। আর ধৈর্য রক্ষা করা সম্ভব হল না। কেউ যেন আমাকে জোর করে টেনে তুলল চেয়ার থেকে। ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরলাম গ্রেটাকে। দু হাতে তার কণ্ঠনালী চেপে ধরলাম সজোরে…
তারপর…তারপর…