–খুব একটা খারাপ নেই। আপনি কতদিন দেশ ছেড়ে বাইরে বেরিয়েছেন?
–হপ্তা দুয়েক হবে। শেষ পর্যন্ত লণ্ডনে এসে পৌচেছি।
হঠাৎ করেই একটা কথা আমার মনে পড়ে গেল। বললাম, দিন কতক আগে আপনাকে আমি দেখেছি।
পার্ডো আমার দিকে ফিরে বললেন, কোথায় দেখেছ?
বাটিংটন ম্যানরের এক নিলাম ঘরে।
–ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তোমাকেও সেদিন আমার চোখে পড়েছিল। বৃদ্ধ এক ভদ্রলোক তোমার সঙ্গে ছিলেন।
-হ্যাঁ, মেজর ফিলপট।
–তোমরা দুজনেই মনে হল খুব খোশমেজাজে ছিলে।
–তা ঠিক।
-তোমরা নিশ্চয়ই তখনো দুর্ঘটনার কথা কিছুই জানতে না। সেদিনই তো দুর্ঘটনাটা ঘটেছিল, তাই না?
-হ্যাঁ। আমাদের সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দেবার কথা ছিল ইলিয়ার। তার জন্য আমরা অপেক্ষা করছিলাম।
–সত্যিই ভাবতে পারছি না ঘটনাটা।
–আপনিও যে সেসময় লণ্ডনে থাকতে পারেন এমন সম্ভাবনা আমার মনে উদয় হয়নি।
–জানবে কি করে, ইলিয়াকে আমি কোন চিঠিপত্র দিইনি। ব্যবসা সংক্রান্ত একটা কাজে হঠাৎ করে চলে আসতে হয়েছিল।
কতদিন ইংলণ্ডে থাকতে হবে নিজেই বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু কাজটা চটপট মিটে গিয়েছিল বলে সেদিন নিলামে উপস্থিত হবার সুযোগ পেয়েছিলাম।
ইচ্ছে ছিল নিলাম শেষ হলে তোমাদের এখানে ঘুরে যাব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে ওঠেনি।
–নিজের ব্যবসার কাজেই কি আপনি ইংলণ্ডে এসেছিলেন?
–অনেকটা সেরকমই। কোরাই আমাকে একটা জরুরী তার পাঠিয়েছিল। ইংলণ্ডে নাকি একটা বাড়ি কিনবে মনস্থ করেছে, তাই আমার পরামর্শ চায়।
কোরার ইংলণ্ডে উপস্থিতির কথা সেদিন মিঃ পাৰ্ডোর কাছ থেকেই প্রথম জানতে পারলাম। সেকথা ভদ্রলোককে জানাতেও দ্বিধা করলাম না।
-কোরা সেদিন এই অঞ্চলেই ছিল।
–এই অঞ্চলে? বিস্মিত হলাম আমি, তিনি কি কোন হোটেলে উঠেছিলেন?
–না, তার এক বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিল।
–বন্ধুর বাড়ি… কিন্তু এখানে তার কোন বন্ধু আছে বলে তো আগে কখনো শুনিনি।
-হ্যাঁ আছে, ভদ্রমহিলার নাম…হা মনে পড়েছে মিসেস হার্ডক্যাসল।
–ক্লডিয়া হার্ডক্যাসল? আমি হতচকিত হলাম শুনে।
-হ্যাঁ। কোরার অনেক দিনের বন্ধু। মহিলা অনেকদিন আমেরিকায় ছিলেন, তখনই দুজনের বন্ধুত্ব হয়। কিন্তু তুমি কি এখবর জানতে না?
গ্রেটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ক্লডিয়ার সঙ্গে মিসেস কোরার বন্ধুত্বের বিষয়ে তুমি কি কিছু জানতে?
–ওহ না। আমি তার মুখে কখনো মিসেস হার্ডক্যাসলের নাম শুনিনি। ক্লডিয়া সেদিন কেন যে আমার সঙ্গে লণ্ডনে যায়নি এখন বুঝতে পারছি।
-সে কি! কডওয়েল স্টেশনে তো তোমাদের দুজনের দেখা হবার কথা ছিল। ঠিক ছিল সেখান থেকে লণ্ডনে গিয়ে কি সব কেনাকাটা করবে?
হ্যাঁ। কিন্তু ক্লডিয়া যেতে পারেনি। তুমি বেরিয়ে যাবার পরেই আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল হঠাৎ ওর এক বন্ধু আমেরিকা থেকে এসে পড়েছে বলে বাড়ি থেকে বেরুতে পারবে না।
–আমেরিকার সেই বন্ধু নিশ্চয়ই মিসেস কোরা?
–নিশ্চয়ই, মিঃ পার্ডো বললেন, সবই দেখছি কেমন গোলমেলে। ওদিকে করোনারের বিচারও নাকি কিছুদিনের জন্য মূলতবী রাখা হয়েছে।
এরপর আর আমাদের বেশি কথা হল না। কফির পেয়ালা নামিয়ে রেখে মিঃ পাৰ্ডো বললেন, আজকের মত ওঠা যাক। আমি মার্কেট কডওয়েলের ম্যাজেস্টিক হোটেলে উঠেছি। যদি কোন প্রয়োজন হয়, আমাকে খবর দিতে দ্বিধা করো না।
মিঃ পার্ডো বিদায় নিলে আমি তার কথাগুলো মনে মনে পুনরাবৃত্তি করতে লাগলাম।
গ্রেটা বলল, ভদ্রলোকের মতলবটা ঠিক বোঝা গেল না। হঠাৎ এখানে এসময় হাজির হয়েছেই বা কেন? বুঝতে পারছি না এরা নিজেদের জায়গায় ফিরে না গিয়ে এখানে এসে জড়ো হচ্ছে কেন?
–সেদিন জর্জ হোটেলে স্টানফোর্ড লয়েডকেই দেখেছি বলে মনে হচ্ছে। দূর থেকে দেখা বলে নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।
ক্লডিয়ার মতো দেখতে একটা মেয়েকেও তো তার সঙ্গে চোখে পড়েছিল বলে বলেছিলে। মনে হচ্ছে, ভদ্রলোক গোপনে ক্লডিয়ার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।
আর মিঃ পার্ডো এসেছিল কোরার সঙ্গে দেখা করতে এখন সব পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। যোগাযোগগুলো খুবই অদ্ভুত।
–কিন্তু এই যোগাযোগের ব্যাপারটা খুব ভাল বোধ হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে সেদিন সকলেই এই অঞ্চলের আশপাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
আমার নিজের উদ্বেগ হলেও গ্রেটা বিশেষ চিন্তিত বলে মনে হল না। সহজ ভাবেই বলল, এমন ঘটনা অবশ্য অস্বাভাবিক কিছু নয়।
.
০৪.
ইলিয়ার মরদেহ নিউইয়র্কে নিয়ে যাবার আয়োজন সম্পূর্ণ হল। সমাধিক্ষেত্রে আমাকেও উপস্থিত থাকতে হবে।
এদিকে, জিপসি একরে আমার কোন কাজ ছিল না। তাই ভাবলাম এই সুযোগে ব্যবসা সংক্রান্ত ঝামেলাও একসঙ্গে মিটিয়ে আসা যাবে। গ্রেটার ওপরে এদিককার দায়িত্ব দিয়ে আমি যথাসময়ে নিউইয়র্ক রওনা হলাম।
বাড়ি থেকে বেরুবার আগে গ্রেটা আমাকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, একটা কথা মনে রেখো ওখানে তোমার মিত্রপক্ষ কেউ নেই, সকলেই শত্রুপক্ষ। একেবারে হিংস্র জন্তুর মত দাঁত নখ বার করে অপেক্ষা করে রয়েছে।
সর্বদা নিজের সম্পর্কে সচেতন থাকবে। সামান্য সুযোগ পেলেই কিন্তু তোমাকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলবে।
নিউইয়র্ক পৌঁছে বুঝতে পারলাম, গ্রেটা মোটেই ভুল আন্দাজ করেনি। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়েই অনুভব করতে পারলাম একেবারে জঙ্গলের রাজত্বে এসে পড়েছি।