–তাহলে কি অন্য কোন সম্ভাবনার কথাও…
-হ্যাঁ। গোড়া থেকে সমস্ত ব্যাপারটা পর্যালোচনা করলে একটা প্রশ্ন উঠে আসে–তা হল, গোপনে টাকা দিয়ে বশ করে বুড়িকে দিয়ে কেউ এসমস্ত কাজ করিয়ে নিয়েছে কিনা।
আমি বললাম, সে ক্ষেত্রে তো বুড়িকে খুঁজে পাওয়াই দুঃসাধ্য হবে।
-তা ঠিক। তবে সেই সঙ্গে আরও একজনেরও যে দুশ্চিন্তা কিছু কম হবে না, সে কথাটাও নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।
–বুড়িকে দিয়ে যে এসব কাজ করিয়ে নিচ্ছে, তার কথা বলছেন?
–হ্যাঁ।
–আচ্ছা…এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিটি কি কোন মহিলা হতে পারেন?
–অসম্ভব নয়। আবার এমনও হতে পারে যে মিসেস রজারের মৃত্যু ঘটানো তার অভিপ্রেত ছিল না। হঠাৎ করেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটা ঘটে গেছে। হয়তো সে শুধু চেয়েছিল, জিপসি বুড়িকে দিয়ে বারবার ভয় দেখিয়ে আপনার স্ত্রীকে এখান থেকে বিতাড়িত করবে।
বললাম, সিদ্ধান্তটা অযৌক্তিক নয়। যেভাবে ইলিয়াকে ভয় দেখানো হয়েছে, তাতে একথা সহজেই মনে হয়।
ঘটনার পরিণতি যা ঘটল তার ফলে অন্তরালের সেই অজ্ঞাতনামা মহিলা সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছে। কারণ দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে ভয় পাবে বুড়ি এন্থারও। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করবার জন্য সে আসল ষড়যন্ত্রকারিণীর নামও ফাস করেও দিতে পারে।
–তাহলে আপনার বক্তব্য–কোন অজ্ঞাতনামা মহিলাকে আমি অথবা ইলিয়া আমাদের অজ্ঞাতসারে শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছি–
–কেবল নারীর কথাই আমি বলিনি। নারী বা পুরুষ যে কেউই সেই অদৃশ্য চক্রান্তকারী হতে পারে।
আর সে যেই হোক, তার প্রধান উদ্দেশ্য হবে যে কোন প্রকারে তোক বুড়ি এম্বারের মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা করা। এই কাজটা সে যত দ্রুত সম্ভব করার চেষ্টা করবে।
-বুড়ি এন্থার মারা গেছে, এমন কোন ইঙ্গিতই কি আপনি করছেন?
ধীরে ধীরে ঘাড় দোলালেন সার্জেন্ট কীন। পরে বললেন, সবই সম্ভব। হঠাৎই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে তিনি বললেন, জঙ্গলের ভেতরে আপনাদের যে নির্জন ঘরটা আছে, সেটা খুবই চমৎকার। আশপাশে যখন আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছিলাম, সেই সময় সেটা আমাদের নজরে আসে।
–ঘরটা ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় পড়েছিল। আমি আর ইলিয়া সেটা সারিয়ে বাসযোগ্য করে তুলেছিলাম। মাঝে মধ্যে সেখানে গিয়ে আমরা সময় কাটাতাম। অবশ্য হালে বেশ কিছুদিন সেখানে যাওয়া হয়নি।
দেখলাম ঘরটা খোলা রয়েছে।
-হ্যাঁ। ওটাতে তালা লাগাবার ব্যবস্থা করিনি আমরা। মূল্যবান জিনিসপত্র তো বিশেষ কিছু নেই।
–আমরা সন্দেহ করেছিলাম, বুড়ি লী হয়তো সেখানেই আত্মগোপন করে রয়েছে। কিন্তু তার কোন অস্তিত্ব সেখানে ছিল না। তবে অন্য একটা জিনিস পেয়েছি।
কথা বলতে বলতে টেবিলের টানা খুলে একটা স্বর্ণখচিত মূল্যবান লাইটার বার করে এনে তিনি আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
এ ধরনের লাইটার সাধাণত মেয়েরাই ব্যবহার করে। সোনার জল দিয়ে লাইটারের গায়ে সি অক্ষরটা খোদাই করা।
-এ লাইটার আপনার স্ত্রী নিশ্চয় ব্যবহার করতেন না? জানতে চাইলেন সার্জেন্ট।
-না। তার লাইটারে সি-অক্ষর খোদাই করা থাকবে কেন? তাছাড়া, এ জিনিসটা ওর হাতেও কখনো দেখিনি আমি। ইলিয়ার সেক্রেটারী মিস গ্রেটারও নয় এটা।
সি অক্ষরটা আমাদের পরিচিতের মধ্যেকার কারোর নামের আদ্য অক্ষর হতে পারে মনে মনে আমি চিন্তা করলাম। মনে পড়ল ইলিয়ার সম্মা মিসেস কোরার নাম সি দিয়ে শুরু।
কিন্তু ভদ্রমহিলা যে এরকম জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ীপথ ভেঙ্গে এমন একটা জায়গায় উপস্থিত হতে পারেন এমন সম্ভাবনা একেবারেই অবিশ্বাস্য। তিনি আমাদের এখানে এসে মাসখানেকের বেশি ছিলেন না।
সেই সময় এ ধরনের কোন লাইটার তাকে ব্যবহার করতে আমি দেখিনি। তবে এটা হয়তো অজানা থাকতে পারে।
সার্জেন্টকে আমি সবকথাই খুলে জানালাম। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। পরে লাইটারটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, তাহলে এটা নিয়ে গিয়ে আপনি তাকে একবার দেখান।
বললাম, তা দেখানো যেতে পারে। কিন্তু ধরুন যদি সত্যিই লাইটারটা মিসেস কোরার হয়, তাহলে তিনি চলে যাবার পরেও তো আমরা সেই নির্জন ঘরে গিয়েছিলাম। কিন্তু তখন তো এটা আমাদের কারোর চোখে পড়েনি।
-এটা পাওয়া গেছে কিন্তু ডিভানের কাছে। আমার ধারণা, ঘরটা সময় সুযোগ মত অন্য কেউ ব্যবহার করত। জঙ্গলের মাঝামাঝি অবস্থানে বেশ মনোরম জায়গাটা প্রেমিক-প্রেমিকাদের গোপন অভিসার স্থল হিসেবে একেবারে আদর্শ।
কিন্তু স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে এমন দামী লাইটার ব্যবহার করবার মত কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না।
হঠাৎ মনে পড়ে গেল, আমি বললাম, ইলিয়ার এক বান্ধবীর নাম ক্লডিয়া হার্ডক্যাসল। আপনিও নিশ্চয় তাকে চেনেন।
কিন্তু ক্লডিয়ার এমন দামী লাইটার ব্যবহার করবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া, ওই জঙ্গলের মধ্যে তো তার যাবার কথা নয়।
–ক্লডিয়ার সঙ্গে কি আপনার স্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল?
–তা ছিল। এই অঞ্চলে ক্লডিয়াই ছিল ওর একমাত্র বন্ধু। সে যদি কখনো সেখানে যেতে চায়, ক্লডিয়া যে কোন আপত্তি করবে না, তাও সে জানতো। আমি কঠিন দৃষ্টিতে সার্জেন্টের চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, ক্লডিয়াকে ইলিয়ার শত্রুপক্ষ মনে করা হলে সেটা হবে সম্পূর্ণই এক অবাস্তব কল্পনা।
-হ্যাঁ, আমিও মনে করি না, আপনার স্ত্রীর সঙ্গে ক্লডিয়ার কোনরকম শত্রুতা থাকতে পারে। তাহলেও, বুঝতেই পারছেন, স্ত্রীলোকের মতিগতির কথা কখনোই নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না।