সম্ভাবনাটার পেছনে যুক্তি আছে ঠিকই তবে আমার কাছে কেমন কষ্টকল্পনা মনে হচ্ছে।
–এমনও তো হওয়া অসম্ভব নয়, ধরুন জমিটার নিচে কোন মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে। আর এই সংবাদ সেই ব্যক্তি ছাড়া অপর কেউ জানে না। তাছাড়া কোন গুপ্তধন হয়তো পোঁতা আছে।
মেজর ফিলপট কোন মন্তব্য না করে কেবল গম্ভীর ভাবে হুঁ, শব্দ উচ্চারণ করলেন।
–অথবা, আমি পুনরায় বললাম, এমনও হতে পারে, যে বুড়িকে পরিচালিত করেছে সে হয়তো ইলিয়ারই কোন আত্মপক্ষ।
–সেই শত্রুপক্ষ কে হতে পারে সে সম্পর্কে তোমার কোন ধারণা নেই।
-না। কেননা আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে এ অঞ্চলের কারুর সঙ্গেই ইলিয়ার পূর্বে কোন সম্পর্ক ছিল না।
এরপর মেজরকে তাঁর সহানুভূতির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নেবার জন্য উঠে দাঁড়ালাম।
পরক্ষণেই একটা কথা মনে পড়ে যাওয়াতে আবার চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। বললাম, সার্জেন্ট কীনের কাছেই জিনিসটা নিয়ে যাচ্ছিলাম। তদন্তের ব্যাপারে হয়তো তার কাজে লাগতে পারে। আপনাকেও দেখিয়ে নিয়ে যাই।
আমি পকেট থেকে কাগজমোড়া একটুকরো পাথর বের করে টেবিলের ওপরে রাখলাম।
–এই কাগজ সমেত পাথরটা সকালে প্রাতঃরাশের সময় সার্শি ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে এসে পড়েছিল। আমরা যেদিন এখানে প্রথম আসি সেদিনও এমনও ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন অবশ্য পাথরে কাগজ মোড়া ছিল না। কাজটা একই লোকের কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না।
বলতে বলতে পাথরে মোড়া কাগজটা খুলে আমি মেজরের দিকে এগিয়ে দিলাম। কাগজের গায়ে এক লাইনের একটা কথা টাইপ করা ছিল।
মেজর চোখে চশমা লাগিয়ে কাগজটা চোখের ওপর তুলে ধরলেন। পড়লেন ধীরে ধীরে–যে আপনার স্ত্রীকে খুন করেছে সে একজন স্ত্রীলোক।
মেজরের ভ্রূজোড়া কুঞ্চিত হল। কপালের রেখায় ভাঁজ পড়ল। চিন্তিতভাবে তিনি বললেন, খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার দেখছি।
আচ্ছা, এর আগে মরা পাখির গায়ে বিদ্ধ ছুরির ডগায় লাগানো যে চিরকুটটা তুমি পেয়েছিলে সেটাও কি টাইপ করা ছিল?
বললাম, এখন আমার ঠিক মনে নেই। চিরকুটের বয়ানটাও ভুলে গেছি। তবে এটুকু মনে আছে, আমাদের এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল।
সেটা স্থানীয় কোন গুণ্ডাশ্রেণীর লোকের কাজ বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বক্তব্য সম্পূর্ণ আলাদা।
–এটা যে ছুঁড়েছে, বোঝা যাচ্ছে সে বর্তমান দুর্ঘটনা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল, তাই না?
–ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। সেকারণেই সার্জেন্ট কীনের নজরে আনার কথা ভেবেছি। চিরকুটটা আমার হাতে ফিরিয়ে দিয়ে মেজর বললেন, তুমি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছ। এ ব্যাপারে সার্জেন্ট কীনের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি।
মেজর ফিলটনের কাছ থেকে সরাসরি থানায় চলে এলাম। সার্জেন্টকেও পাওয়া গেল। ঘটনাটা শুনে তিনিও যথেষ্ট আগ্রহান্বিত হয়ে উঠলেন।
বললেন, এতদিনের শান্ত নিরুপদ্রব এই জায়গাতেও বেশ অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে দেখছি।
–এর পেছনের উদ্দেশ্যটা কি বলে মনে হয় আপনার?
–সঠিক বলা কঠিন। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, সাহায্যকারীর ছদ্ম পরিচয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই সন্দেহটা বিশেষ কারুর দিকে টেনে নিতে চাইছে।
–সেই বিশেষ কেউ কি মিসেস লী?
-না, অত সাদামাটা বলে আমার মনে হয় না। এমন হতে পারে, বড়জোর বুড়ি হয়তো বিশেষ কিছু দেখে বা শুনে থাকতে পারে। কিন্তু চিরকূটের লেখার উদ্দেশ্য জিপসি বুড়ি নয়। কেন না অনেকেই এটা জেনে গেছে যে এই ঘটনার ব্যাপারে আমাদের সন্দেহের তালিকায় জিপসি বুড়ির নাম রয়েছে। মনে হচ্ছে চিরকূটের পেছনের অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি অন্য কোন মহিলাকে বোঝাতে চাইছে।
আমি জানতে চাইলাম, জিপসি বুড়ির কোন খবর এর মধ্যে পাওয়া গেছে?
সার্জেন্ট কীন বললেন, জিপসি বুড়ি এখান থেকে কোথায় কোথায় যেত সে সংবাদ আমরা সংগ্রহ করেছি। সাধারণতঃ পূর্ব অ্যাঙ্গোলিয়া বা কাছাকাছি অঞ্চলে যে সব জিপসি আস্তানা আছে, সেখানেই সে যাতায়াত করত।
সেখানে তার পরিচিত অনেকেই বাস করে। তবে সে অঞ্চলের জিপসিরা জানিয়েছে এবারে সে সেখানে যায়নি।
আমরা বিশেষ ভাবে সংবাদ নিয়ে জেনেছি, জিপসি বুড়ির মত দেখতে এমন কাউকেও সে অঞ্চলে দেখা যায়নি। আমার ধারণা বুড়ি এবারে অন্য কোন দিকে গেছে।
আমার মনে হল সার্জেন্ট কীন অন্য কিছু ইঙ্গিতে বোঝাবার চেষ্টা করছেন। আমি তাই জিজ্ঞেস করলাম, আপনার বক্তব্য আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার হল না।
সার্জেন্ট সামান্য মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, ঘটনাটা একবার অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখুন। বুড়ি আপনার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়েছিল, শাসিয়েছিল। এখন এই দুর্ঘটনা ঘটে যাবার পরে তার ওপরে যে সন্দেহটা পড়বে এটা বুড়ি বুঝতে পেরেছে এবং যথেষ্ট ভয় পেয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
পুলিস যে তাকে খোঁজ করবে এটা অনুমান করে অজ্ঞাত কোন স্থানে গা-ঢাকা দেওয়া তার পক্ষে অসম্ভব নয়। পুলিসের চোখ এড়াবার জন্য সে সরকারী যানবাহন এড়িয়ে চলবে সেটাও স্বাভাবিক।
আমি বললাম, আমার বিশ্বাস,বুড়ি আপনাদের চোখে বেশিদিন ধুলো দিয়ে থাকতে পারবে না। বুড়ির চালচলন চেহারার বৈশিষ্ট্য এমন, যে সাধারণ পাঁচজনের মধ্যে থেকে তাকে সহজেই চিনে নেওয়া যায়।
-তা ঠিক। আজ থেকে, দুদিন পরে হোক, মিসেস লীর সন্ধান আমরা ঠিক পেয়ে যাব। অবশ্য যদি ঘটনাটা সেরকম হয়ে থাকে।