–এই হতভাগ্য মহিলা ছাড়া আশপাশে আর কাউকে চোখে পড়েনি। বনের পথ ধরে তিনি সামনে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।
–সেই জিপসি বুড়ির কাজ নয় তো। একটি মেয়ে এই সময় বলে উঠল।
আমি চমকে উঠে জিজ্ঞেস করলাম, কোন জিপসি বুড়ি? কখন দেখেছ তাকে?
মেয়েটি জানাল, বুড়ির সঙ্গে গ্রামের পথে দেখা হয়েছিল আমার। বেলা তখন আন্দাজ দশটা হবে। আমি নিজ কানে শুনেছিলাম বুড়ি একবার ভদ্রমহিলাকে প্রাণে মারা পড়বে বলে ভয় দেখিয়েছিল।
-তবে কি জিপসির অভিশাপ? আপন মনে বিড়বিড় করে উঠলাম আমি, জিপসি একরই আমাদের এমন সর্বনাশ করল?
৩. ইলিয়ার মৃত্যুর পর
তৃতীয় পর্ব
০১.
ইলিয়ার মৃত্যুর পর সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। এমন অভাবিত ঘটনা আমাকে মানসিকভাবে বিবশ করে ফেলল। ফলে পরবর্তী সব ঘটনাই আমার আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে লাগল। অনেক কিছুই ঘটে চলল আমাকে কেন্দ্র করে।
সব ঘটনাই আমার স্পষ্ট মনে আছে। তাই লিখতে কোন কষ্ট হচ্ছে না।
ইলিয়ার মৃত্যুতে সকলেই আমাকে সমবেদনা জানালেন। আমি বিমূঢ় বিভ্রান্ত। কি করব কি বলব কিছুই স্থির করতে পারছিলাম না।
গ্রেটাই এগিয়ে এসে আমার হয়ে সবকিছু সামাল দিল। প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে সে-ও শোকগ্রস্ত। কিন্তু নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখতে পেরেছিল সে।
খুব দ্রুত ইলিয়ার মৃতদেহ স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। আমি ফিরে এলাম বাড়িতে। আমার সঙ্গে এসেছিলেন ডাক্তার শ।
তিনি অত্যন্ত সহৃদয়তার সঙ্গেই পরবর্তী কর্তব্যগুলো যেমন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পাদন, তার জন্য তোকজনের ব্যবস্থা, করোনারের বিচার ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের ব্যবস্থাপনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে একসময় বিদায় নিয়েছিলেন।
.
করোনারের বিচার সভায় সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আমাকে আমার নিজের পরিচয় জানাতে হল। পরে ইলিয়ার সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাৎকারের বিবরণ তিনি মনোযোগ সহকারে শুনলেন। জর্জ হোটেলে যে সেদিন আমার সঙ্গে ইলিয়ার লাঞ্চ খাবার কথা ছিল সে-কথাও জানালাম। ইলিয়ার শারীরিক সুস্থতা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়েই আমাকে অনেক রকম প্রশ্ন করা হল।
ডাক্তার শ-ও সাক্ষ্য দিলেন। ইলিয়ার শরীরে কোন রকম আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কেবল ডান কাঁধের হাড় সামান্য মচকে গিয়েছিল। আর ঘোড়া থেকে পড়ে যাবার জন্য শরীরে সামান্য কাটা-ছেঁড়ার চিহ্ন ছিল। সবমিলিয়ে এটাই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়েছিল–ইলিয়ার মৃত্যু হয়েছিল খুবই আকস্মিকভাবে। ডাঃ শয়ের মতে, আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই ইলিয়ার মৃত্যু ঘটেছিল।
গ্রেটা তার সাক্ষ্যে জানাল, বছর তিন-চার আগে ইলিয়া একবার গুরুতর হার্টের অসুখে ভুগেছিল সে তার আত্মীয়-স্বজনের মুখে শুনেছিল। সে বেশ জোরের সঙ্গেই জানাল ইলিয়ার হার্টের অবস্থা মোটেই ভাল ছিল না। তবে অসুখটা কি ধরনের সে সম্পর্কে সে বিশেষ কিছু বলতে পারল না।
যে সমস্ত গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছিল, একে একে তাদের সাক্ষ্যও নেওয়া হল। তাদের অনেকেই শেটল গ্রামের মিঃ ক্যারী নামের ঘোড়াটার মালিককে চিনত। তিনিই ছিলেন ইলিয়ার ঘোড়ার প্রাক্তন মালিক।
গ্রামবাসীরা জানাল, ঘোড়াটা ছিল খুবই শান্তশিষ্ট। যে কোন মহিলাই নিশ্চিন্তে তার সওয়ার হতে পারত।
করোনার পুলিসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন জিপসি বুড়ি বলে পরিচিত মিসেস লীকে কোর্টে কেন হাজির করা হয়নি।
পুলিসের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, তার কোন খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। ঝুপড়ির দরজায় তালা ঝুলিয়ে সে কোথায় গেছে সেকথাও কেউ জানাতে পারেনি। তবে প্রায়ই নাকি সে এভাবে বেপাত্তা হয়ে যায় কিছুদিনের জন্য।
দুর্ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই নাকি বুড়ির কোন পাত্তা পাওয়া যাচ্ছিল না।
বুড়ি লী সম্পর্কে করোনার আমাকেও প্রশ্ন করেছিলেন। সে যে আমার স্ত্রীকে নানাভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করতো, আমি স্পষ্ট ভাবেই সেকথা জানালাম। অথচ আমার স্ত্রীর ওপর তার রেগে যাবার মত কোন ঘটনাই কখনো ঘটেনি।
সাক্ষীসাবুদের কাজ শেষ হলে সেদিনের মত আদালতের কাজ শেষ করে করোনার ঘোষণা করেছিলেন দু-সপ্তাহ পরে আবার শুনানী হবে। ইতিমধ্যে মিসেস লীর সন্ধান করবার জন্য তিনি পুলিসকে নির্দেশ দিলেন।
.
০২.
মেজর ফিলপট অনেক দিন থেকেই জিপসি বুড়িকে জানতেন। গ্রামে তার বসবাসের ব্যবস্থা তিনিই করে দিয়েছিলেন।
করোনারের বিচারের পরদিন আমি মেজরের সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে আমার সন্দেহের কথা জানিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, অন্ধ ঘৃণার বশে বুড়ি লী কি এরকম একটা সাংঘাতিক ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
মেজর বললেন, ইলিয়ার মত শান্তশিষ্ট মেয়ের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে উঠতে হলে খুব জোরালো কারণ থাকা উচিত। তুমি নিজেই ভেবে দেখো না, সে-রকম কোন কারণ কি ঘটেছিল?
আমি বললাম, সে-রকম কিছু পাওয়া যাচ্ছে না বলেই তো আমি অনেক চিন্তা করেও কিছু বুঝে উঠতে পারছি না।
অথচ বুড়ি যে মাঝে মাঝেই যাতায়াতের পথে হাজির হয়ে ইলিয়াকে ভয় দেখাতে, তাকে এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলতো তার সাক্ষী আমি নিজেই।
ইলিয়া এখানে সম্পূর্ণ নবাগত। তার প্রতি বুড়ির ব্যক্তিগত কোন বিদ্বেষ থাকাও সম্ভব নয়।
মেজর বললেন, ব্যাপারটা একারণেই রহস্যময়। এমন একটা রহস্য ঘটনার পেছনে কাজ করছে যার হদিস এখনো আমরা পাইনি।