–ঠিক মনে করেছেন। তাহলে অন্তত মানসিক উদ্বেগটা কমবে।
আমি উঠে কাউন্টারের ফোনটার দিকে এগিয়ে গেলাম। ফোনটা ধরল আমাদের পরিচারিকা মিসেস কার্সন। সে জানাল, মিসেস রজার তো এখনো বাড়ি ফেরেননি।
–সেকি, ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে
–হ্যাঁ, সকালবেলা বেরিয়ে যাবার পরে এখনো বাড়িতে ফিরে আসেননি। আমাদের কিছু বলেও যাননি।
খুবই দুর্ভাবনায় পড়ে গেলাম। মিসেস কার্সনকে জর্জ হোটেলের ফোন নম্বরটা জানিয়ে বললাম, ইলিয়ার কোন খবর পেলেই যেন সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করে।
টেবিলে ফিরে এলাম। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই মেজরের চোখেও উদ্বেগের ছায়া পড়ল। আমি বিব্রতকণ্ঠে জানালাম, সেই যে সকালে ঘোড়া নিয়ে বেরিয়েছে, তার পর এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফেরেনি। অন্যদিন তো দেড় দু ঘণ্টার মধ্যেই ফিরে আসে।
মেজর আমাকে ভরসা দিয়ে বললেন, দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই, কোন কারণে কোথাও হয়তো আটকে গিয়ে থাকবে। পাহাড়ি পথে ঘোড়াটা পায়ে চোট পেয়ে থাকলে বেচারীর ভোগান্তির একশেষ হচ্ছে।
হোটেলের বিল মিটিয়ে চিন্তিতভাবে আমরা বাইরে এসে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই রাস্তার বিপরীত দিকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়ি স্টার্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল।
চালকের আসনে বসে থাকা লোকটির দিকে চোখ পড়ল। এই ভদ্রলোকই হোটেলে জানালার ধারে বসেছিল।
এবারে মনে পড়ে গেল–স্টানফোর্ড লয়েড। ইলিয়ার সম্পত্তির লগ্নিসম্পর্কিত দায়দায়িত্ব তারই ওপর। এখানে ভদ্রলোকের আসার কি কারণ ঘটল মাথায় এলো না।
গাড়িতে বসে থাকা যে মহিলাকের পলকে জন্য নজরে পড়ল, তাকে ক্লডিয়া হার্ডক্যাসল বলেই আমার মনে হল।
কিন্তু ক্লডিয়ার তো গ্রেটার সঙ্গে লণ্ডনে যাবার কথা। সবকিছু যেন কেমন তালগোল পাকিয়ে যেতে লাগল।
আর অপেক্ষা করা বৃথা মনে হল। মেজরকে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ফেরার পথ ধরলাম। মাঝে মাঝে গাড়ি থামিয়ে পথের লোকজনের কাছে ইলিয়ার খোঁজখবর নিতে লাগলাম। কিন্তু কেউই কোন সন্ধান দিতে পারল না।
জিপসি একরের কাছাকাছি এসে ক্ষেতে কাজ করা একটি লোকের কাছ থেকে জানা গেল, ঘণ্টা দুয়েক আগে সে সওয়ারবিহীন একটা ঘোড়াকে পাহাড়ী পথ ধরে ওপরে যেতে দেখেছে।
এরপর আর কোথাও দেরি না করে বাড়িতে ফিরে এলাম। সহিসকে ডেকে ঘোড়া নিয়ে ইলিয়ার খোঁজে পাঠিয়ে দিলাম।
মেজর ফিলপট তার বাড়িতে ফোন করে একজনকে ইলিয়ার খোঁজ নিতে বলেছিলেন। তারপর, ইলিয়া ঘোড়া নিয়ে যে পথে যাতায়াত করে মেজরকে নিয়ে সেই পথ ধরে পায়ে হেঁটে অগ্রসর হলাম।
বনটা শেষ হলেই বিস্তীর্ণ ফাঁকা মাঠ। বনের ভেতর থেকে কয়েকটা সরু পায়েচলা পথ প্রান্তরের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে।
এমনি একটা পথের প্রান্তে আসতেই চোখে পড়ল, হাত-পা গুজড়ে পড়ে আছে ইলিয়া। দুহাতে মুখ ঢেকে আর্তনাদ করে উঠলাম।
ফিলপট হাঁটু গেড়ে বসে ঝুঁকে দেখলেন। পরে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্তভাবে বলে উঠলেন, এখুনি একজন ডাক্তার প্রয়োজন। আমার মনে হচ্ছে–
–ইলিয়া কি মারা গেছে! ভগ্নকণ্ঠে জানতে চাইলাম আমি।
–হ্যাঁ, বিষণ্ণ গম্ভীর কণ্ঠ মেজরের, আমার তাই বিশ্বাস।
–হায়, ভগবান। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না–এ কি করে সম্ভব। আমার দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল। সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল থরথর করে। মেজর এগিয়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে নীরবে দাঁড়িয়ে রইলেন।
ইতিমধ্যে আমাদের সহিস সেখানে এসে পৌঁছেছিল। মেজর তাকে পাঠিয়ে দিলেন ডাঃ শকে ডেকে আনার জন্য।
.
০৬.
কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাঃ শ তার পুরনো ল্যাণ্ডওভারটা নিয়ে এসে পৌঁছলেন। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি সোজা ইলিয়ার নিথর দেহটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কয়েক মুহূর্ত পরে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, মিসেস রজার মারা গেছে ঘন্টা তিনেক আগেই। কিন্তু ব্যাপারটা ঘটল কিভাবে?
ডাক্তার শ’কে জানালাম, সকালেই ও ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি।
ডাঃ শ বলল, কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে যাবার সময় কোন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তো মনে করতে পারছি না। আমি অনেকবার তাকে ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় দেখেছি। খুবই অভ্যস্ত বলে মনে হয়েছে।
আমি বললাম, ঘোড়ায় চড়ার ব্যাপারে ওর দক্ষতা ছিল অসাধারণ।
-তাহলে স্নায়ুর কোন প্রতিক্রিয়াঘটিত ব্যাপার হতে পারে। অথবা ঘোড়াটা কোন কারণে হয়তো চমকে গিয়ে লাফিয়ে উঠেছিল।
ইলিয়ার নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে ডাঃ শ বললেন, শরীরে কোন চোট পেয়েছেন বলে বাইরে থেকে দেখে মনে হচ্ছে না। ভেতরের ব্যাপার বলেই সন্দেহ হচ্ছে। যাই হোক, এখন আমাদের কিছু করার নেই। করোনারের বিচারের সময় পুলিসের রিপোর্ট থেকেই মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।
আমি অসহায় বিহ্বল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম ডাক্তারের দিকে। তিনি বললেন, আপনি বরং বাড়ি ফিরে গিয়ে খানিকক্ষণ বিশ্রাম করুন।
ইতিমধ্যে কি করে যে খবর চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছিল কে জানে। কয়েকজন স্থানীয় গ্রামবাসী এসে সেখানে জড়ো হয়েছিল। তারা নানা কথা বলাবলি করছিল।
একজন বৃদ্ধ চাষীকে বলতে শোনা গেল, আমার সামনে দিয়েই ভদ্রমহিলাকে ঘোড়ায় চেপে যেতে দেখেছিলাম। কিছুক্ষণ পরেই ঘোড়াটাকে একা জোরে জোরে পা ফেলে নেমে আসতে চোখে পড়েছিল।
ডাঃ শ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ভদ্রমহিলার পাশাপাশি কি আর কাউকে যেতে দেখেছিলেন?