ইলিয়া মুখোমুখি বসে মাকে সাগ্রহে জিজ্ঞেস করল, আপনার সঙ্গে মালপত্র কোথায়?
মা বললেন, না বাছা, ওসব কিছু আনিনি। আমি আধঘণ্টার মধ্যেই উঠব। নইলে লণ্ডনের ট্রেন পাব না। তোমাদের কেবল একবার নিজের চোখে দেখতে এলাম।
গ্রেটা চা নিয়ে এসে পৌঁছবার আগেই মা তার সঙ্গে ইলিয়ার দেখা করার প্রসঙ্গ তুলে বললেন, যে কর্তব্যের খাতিরেই কাজটা সে করেছে। এজন্য আমি যেন ওকে কিছু না বলি।
পরে ইলিয়ার-প্রশংসা করে বললেন, এমন সুন্দরী গুণবতী মেয়েকে বিয়ে করা খুবই ভাগ্যের কথা। আমার পুত্রবধূটি প্রকৃতই ভাল মেয়ে।
ইতিমধ্যে গ্রেটা চা নিয়ে এলো। চা খাওয়া শেষ হলে মা আর বসতে চাইলেন না। ইলিয়াও আর বেশি অনুরোধ করল না।
মাকে এগিয়ে দেবার জন্য আমি আর ইলিয়া গেট পর্যন্ত এলাম। বিদায় নেবার আগে মা জানতে চাইল, তোমাদের সঙ্গে যে মেয়েটিকে দেখলাম, সে কে?
গ্রেটার সঙ্গে সম্পর্কের কথা ইলিয়া খুলে জানাল। বলল, ও তিনবছর থেকে এখানে আছে। আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। সবরকম ভাবেই ও আমাকে সাহায্য করে।
আরো দু-একটি কথা মা ওর সম্পর্কে জেনে নিলেন। পরে বললেন, দেখ বাছা, বিবাহিত নারীপুরুষের মাঝে, অন্য কারুর উপস্থিতিটা ঠিক বাঞ্ছনীয় নয়। বিশেষ করে তোমরা সদ্য বিবাহিত।
মায়ের কথাটা শুনে আমার মনে পড়ে গেল ইলিয়ার এন্ডুকাকা অর্থাৎ মিঃ লিপিনকটের কথা। কথায় কথায় তিনিও একদিন গ্রেটার প্রতি তাঁর বিরাগের মনোভাব আমাকে জানিয়েছিলেন। গ্রেটা নাকি ইলিয়ার ওপর খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে।
প্রথম দেখার পরে মা-ও সেই একই কথা জানিয়ে গেল। ইলিয়া এ প্রসঙ্গে মাকে কিছু অবশ্য বলল না।
সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার আগেই আমরা বাড়িতে ফিরে এলাম।
.
পরদিন সকাল থেকেই মনটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। আজ অবশ্য মেজর ফিলপটের সঙ্গে একটা নিলামে যাওয়ার কথা আছে।
জায়গাটা মাইল পনেরো দূরে। কিছু সৌখিন সামগ্রী নিলাম হবে। মেজরেরও এসব বিষয়ে বেশ সখ আছে।
আজকাল ঘোড়ায় চড়াটা ওর নেশার মত হয়ে গেছে। প্রায়ই সকালে বেরিয়ে যায়। ক্লডিয়াও কোন কোন দিন সঙ্গে থাকে। আজও সে বেরুবার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল।
গ্রেটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি তাহলে বাড়িতেই আছ তো?
-না একটু বেরুতে হবে। কিছু কেনাকাটার জন্য লণ্ডন যেতে হবে। মার্কেট কডওয়েল স্টেশন থেকে ক্লডিয়াও আমার সঙ্গে যাবে।
ইলিয়াকে বললাম, গ্রেটা যখন লণ্ডনে যাচ্ছে, তুমি তাহলে বার্টিংটনের হোটেলে আমাদের সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দিতে পার।
নিলাম শেষ হবার পরে একটা নাগাদ আমি এবং মেজর ওখানে উপস্থিত হব। মোটর নিয়ে সেখানে যেতে তোমার কোন অসুবিধা হবে না।
ইলিয়া সম্মতি জানিয়ে বলল, বেশ তাই হবে। আমি একটা নাগাদ পৌঁছে যাব।
আমি প্রাতঃরাশ সারলাম। এক পেয়ালা কফি আর এক গেলাস কমলার রস পান করে ইলিয়া ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গেল।
পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে কিছুটা এগিয়েই পাহাড়ের মাঝ বরাবর বিস্তীর্ণ সমতলভূমি। সেই প্রান্তরেই ইলিয়া খুশিমত ঘোড়া নিয়ে ঘোরাঘুরি করে।
রোদ চড়বার আগেই বাড়ি ঘিরে আসে।
ইলিয়ার জন্য ছোট গাড়িটা রেখে বড় ক্রাইসলারটা নিয়ে আমি একটু পরেই বার্টিংটন ম্যানরের দিকে রওনা হলাম।
ফিলপট আমার আগেই নিলামঘরে উপস্থিত হয়েছিলেন। নিলাম শুরু হবার কয়েক মিনিট আগেই আমি তার সঙ্গে গিয়ে মিলিত হলাম।
স্থানীয় কিছু লোকজন ছাড়া লণ্ডন থেকেও অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের সঙ্গিনীরাও সঙ্গে ছিলেন।
মেজর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এলে না কেন?
বললাম, নিলামের ব্যাপারে ওর বিশেষ আগ্রহ নেই। তবে, আমাদের সঙ্গে লাঞ্চে যোগ দেবে।
প্যাপিয়ে মাশে অর্থাৎ কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি আসবাব আজকাল বিশেষ দেখা যায় না। সূক্ষ্ম কারুকাজ করা একটা লেখার টেবিল আমার খুব পছন্দ হয়েছিল।
ওটা ছিল নিলামের তালিকার বিয়াল্লিশতম দ্রব্য। সেটার যখন ডাক উঠল আমি এগিয়ে গিয়ে দাম দিলাম।
লণ্ডন থেকে আগত দুই ব্যবসায়ীরও এই বস্তুটির বিষয়ে আগ্রহ ছিল। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডাক চলল। শেষ পর্যন্ত বেশ চড়া দামই আমাকে জিনিসটার জন্য গুণে দিতে হল। সেই সঙ্গে বৈঠকখানা ঘরের জন্য একটা আরামকেদারাও কিনলাম।
জিনিসগুলোকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আমরা জর্জ হোটেলে হাজির হলাম। ইতিমধ্যে আরো অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছেন। হোটেলকর্মীরা রীতিমত হিমসিম খাচ্ছে।
ভেতরে ইলিয়ার খোঁজ করলাম। ও এখনো এসে পৌঁছয়নি। অবশ্য ঘড়িতে সবে বেলা একটা হয়েছে।
হোটেলের বারে গিয়ে আমরা দু পাত্র পানীয়ের অর্ডার দিলাম। ইলিয়ার জন্য এখানেই অপেক্ষা করা যাক।
চারপাশের প্রায় সব টেবিলেই লোক। হঠাৎ জানালার পাশে বসা এক ব্যক্তিকে দেখে চেনা মনে হল। খুবই পরিচিত মুখ। কিন্তু এই মুহূর্তে সঠিক পরিচয় মনে করতে পারলাম না।
আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মেজরকে বললাম, মনে হয় কোন কারণে আটকে পড়েছে। নইলে এত দেরি হবার কথা নয়। গাড়ির কলকজাও বিগড়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। বরং চলুন আমরা লাঞ্চটা সেরে নিই।
মেজর বিশেষ আপত্তি করলেন না। আমরা নির্দিষ্ট টেবিলে গিয়ে বসলাম। মেনু দেখে খাবারের অর্ডার দিলাম।
মেজর বললেন, এই লাঞ্চের ব্যাপারটা ইলিয়া ভুলে যায়নি তো। একটা টেলিফোন বরং করে দেখতে পার।