স্যানটনিক্স আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। হাত ধরে টেনে নিঃশব্দে জানলা থেকে দূরে সরিয়ে আনলেন আমাকে।
চাপা উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি বললেন, তুমি মেয়েটাকে এখানে ঢুকতে দিলে কেন? ও কি বরাবরের মতই এখানে এসে উঠেছে?
আমি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কার কথা বলছেন?
–আমি জানতাম এরকম ঘটনাই একদিন ঘটবে। আমি গ্রেটা মেয়েটার কথা বলছি। তুমি জান, ও কি সাংঘাতিক প্রকৃতির মেয়ে?
আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মিঃ স্যানটনিক্সের মুখের দিকে।
–নিশ্চয় ও বিনা নিমন্ত্রণেই এখানে এসে গেড়ে বসেছে? তুমি কিন্তু সহজে ওকে এখান থেকে নাড়াতে পারবে না।
কোনরকমে বলার চেষ্টা করলাম, ইলিয়া হঠাৎ পা মচকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তার সেবাশুশ্রূষার জন্যই দিনকয়েকের জন্য গ্রেটা এখানে এসেছে। ইলিযা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে, মনে হয় খুব শিগগিরই গ্রেটা নিজের কর্মস্থলে ফিরে যাবে।
-তুমি দেখছি তাহলে কিছুই জান না। ওর উদ্দেশ্য যেনতেন প্রকারে এখানে থাকা। বাড়িটা তৈরি হবার সময়েও বারকয়েক এখানে এসেছিল বলে আমি জানি।
–ইলিয়ার ইচ্ছা, ওর বান্ধবী ওর সঙ্গে এখানেই থাকে।
–মেয়েটা তো শুনেছি, বেশ কিছুদিন থেকেই ইলিয়ার কাছে রয়েছে। ইলিয়ার মত অমন সরলমতি মেয়েকে ধুরন্ধর মেয়েটা খুব সহজেই কজা করে নিয়েছে।
কথাটা আমারও অজানা নয়। ইলিয়ার অভিভাবক মিঃ লিপিনকটও গ্রেটা সম্পর্কে একবার ঠিক এরকম মন্তব্যই করেছিলেন।
স্যানটনিক্স ফের বললেন, তোমারও কি ইচ্ছা মেয়েটা বরাবরের মত এখানে থেকে যাক?
আমি বিরক্তির সুরে বললাম, আমি তাকে জোর করে বার করে দিতে পারি না। গ্রেটা আমার স্ত্রীর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। আমার এক্ষেত্রে কি বলার থাকতে পারে?
স্যানটনিক্স অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আমিও বুঝবার চেষ্টা করছিলাম, তার এমন অদ্ভুত কথার কারণটা কি।
আচমকা তিনি বলে উঠলেন, তুমি বুঝতে পারছ না মাইক, খুব বিপজ্জনক পথে পা বাড়িয়ে চলেছ। বলতে বাধ্য হচ্ছি, গ্রেটাকে নিয়েও তোমার সম্পর্কে আমার সন্দেহ জাগে। কিন্তু মেয়েটার মনোবল তুমি জান না।
এবারে আমি স্পষ্টতই বিরক্তি প্রকাশ না করে পারলাম না। ঝঝের সঙ্গেই বললাম, কীসব আবোলতাবোল বকে চলেছেন আপনি?
–দেখ মাইক, আমি অনেকক্ষণ ধরে জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে দুজনকে লক্ষ্য করছি। দুজনের ঘনিষ্ঠতা খুবই গাঢ়। এদের মধ্যে তোমাকে একজন বহিরাগত ছাড়া অন্যকিছু মনে হয় না। তুমি কি তা বুঝতে পারছ না?
–এসব কথা আপনি ভাবছেন কি করে? আমি ইলিয়ার স্বামী। এর মধ্যে বহিরাগতের প্রশ্ন আসে কোথা থেকে?
–আমার বক্তব্য তুমি কোনদিনই বুঝতে পারবে না। যা দেখছি, তুমি তোমার নিজের সম্পর্কেই ঠিক ঠিক ওয়াকিবহাল নও।
এবারে আমি রূঢ় স্বরে বললাম, দেখুন মিঃ স্যানটনিক্স, এটা ঠিক যে আপনি একজন প্রথমশ্রেণীর স্থপতি, কিন্তু তাই বলে–
তাতে কি কোন সন্দেহ আছে। এই বাড়িটা আমার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। প্রাণমন ঢেলে এটা তৈরি করেছি আমি। তুমি আর ইলিয়া দুজনে মিলে এই বাড়িতে সুখে শান্তিতে বসবার করবে এটাই আমি চাই।
আমাকে বলাও হয়েছিল সেরকম। আমার অনুরোধ, তোমাদের মধ্যে তৃতীয় কারুর প্রবেশ ঘটতে দিও না। পরিণতি শুভ হবে না। আমি বলছি, খুব বেশি দেরি হয়ে যাবার আগে ওই মেয়েটাকে তুমি বিদেয় কর।
দেখুন, গ্রেটাকে আমি নিজেও পছন্দ করি না। কিন্তু সেকথা ইলিয়াকে বোঝানোর উপায় নেই। তবুও, দিনকতক আগেই তার সঙ্গে আমার প্রচণ্ড ঝগড়া হয়ে গেছে। কিন্তু তবু এ বাড়ি থেকে তাকে তাড়ানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
এর পর খানিক বিরতি দিয়ে আমি পরে বললাম, এখন বুঝতে পারছি, যারা এই জিপসি একর জায়গাটাকে অভিশপ্ত বলে থাকে, তারা খুব একটা মিথ্যা বলে না। এদিকে ঘরে এই অবস্থা, ওদিকে এক জিপসি বুড়ি সেই প্রথম দিন থেকে আমাদের পেছনে লেগে রয়েছে। কেবলই ভয় দেখায়।
যেন এখান থেকে আমাদের তাড়াতে পারলে বাঁচে। আচমকা বনবাদাড় থেকে সামনে হাজির হয়, বিড়বিড় করে অভিশাপ দেয়।
বলে এখান থেকে চলে না গেলে আমাদের সর্বনাশ হবে। জায়গাটাকে বরাবর পবিত্র এবং সুন্দর রাখা প্রয়োজন।
শেষ বাক্যটা কানে যেতে আমি নিজেও চমকে উঠলাম। কথাটা যেন অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, যেন আমাকে দিয়ে কেউ বলিয়ে নিল বোধ হল।
স্যানটনিক্স ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ। সেই রকমই রাখা উচিত। বিশেষত একটা অশুভশক্তির প্রভাব যখন রয়েছে।
–এসব অভিশাপের কথা নিশ্চয় আপনি বিশ্বাস করেন না।
-দেখ মাইক, দুনিয়ার কতটুকু তুমি জান বা দেখেছ? তোমাদের কাছে অদ্ভুত এমন অনেক কিছু আমি বিশ্বাস করি।
এই জাতীয় অশুভশক্তি সম্পর্কেও আমার অভিজ্ঞতা কিছু কম নেই। আমি নিজেও যে খানিকটা অশুভশক্তির অধিকারী, তা কি তোমার মনে হয় না?
আমি বরাবরই আমার মধ্যে অশুভশক্তির অস্তিত্ব অনুভব করি। সেকারণেই কোন অশুভশক্তির কাছাকাছি হলে আমি তা অনুভব করতে পারি। তবে তার উৎসটা সবসময় বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না।
একটু থেমে আমার মুখের ওপর সরাসরি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, তুমি জান না, এই বাড়িটা তৈরি করার সময় আমি বরাবর সতর্ক ছিলাম, কোন অশুভশক্তি যেন একে স্পর্শ করতে না পারে। আমার কাছে এর গুরুত্ব কতখানি, আশাকরি এবারে তা নিশ্চয় বুঝতে পারছ?