স্থানীয় পল্লীযাজকও উপস্থিত ছিলেন। মাঝবয়সী এক মহিলাও ছিলেন। জানা গেল তার কুকুরের ব্যবসা।
ক্লডিয়া হার্ডক্যাসল নামে এক সুন্দরী তরুণীও সেদিনের ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন। ইলিয়ার সঙ্গে বেশ ভাব জমে গেল তার। ক্লডিয়ার ঘোড়ায় চড়ার শখ। যতক্ষণ ওখানে ছিলাম ইলিয়া তার সঙ্গে ঘোড়া নিয়েই কথা বলে গেল।
মিসেস ফিলপট আমার সম্পর্কে জানতেই বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। আমি কি কাজ করি, কোন কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে আমার পরিচয় আছে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এসব কথাই তিনি জানতে চাইছিলেন।
এসব বিষয়ে সেই কুকুর-পালিকা মহিলারও দেখলাম সমান উৎসাহ। ভদ্রমহিলার নামটা এখন আর মনে করতে পারছি না।
লাঞ্চের পরে আমি আর ইলিয়া মেজরের বাড়ির বাগানটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সেইসময় ক্লডিয়া এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। কথায় কথায় জানা গেল সে আমাদের মিঃ স্যানটনিক্সের বোন।
ক্লডিয়া বলল, তিনি আমার পিসতুতো দাদা। তবে দেখাসাক্ষাৎ খুব একটা হয় না। আপনাদের বাড়িটা তৈরি হবার সময়।
ইলিয়া স্যানটনিক্সের গুণগ্রাহী। কিন্তু দেখা গেল ক্লডিয়া তার দাদার কাজ সম্পর্কে বিশেষ আগ্রহী নয়। তার নাকি পুরনো ধাঁচের ঘরবাড়িই পছন্দ।
ইলিয়া বলল, একদিন আমাদের আধুনিক ফ্যাশানের বাড়িটা দেখে আসবেন। আপনার নিমন্ত্রণ রইল।
স্থানীয় গলফ ক্লাবে ইলিয়াকে নিয়ে যাবার দায়িত্ব নিল ক্লডিয়া। বলল, আগে একটা ঘোড়া কিনে নাও।
মেজর তার আস্তাবলটা আমাদের ঘুরিয়ে দেখালেন। ক্লডিয়া সম্পর্কে তিনি জানালেন, মেয়েটা খুবই সাহসী। একপাল কুকুর নিয়ে একাই জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু জীবনটাকে কাজে লাগাতে পারল না।
এক আমেরিকান ভদ্রলোককে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল। কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল। এখন সে নিজের পদবীই ব্যবহার করে। আর বিয়েথা করবে না ঠিক করেছে।
খুব আনন্দের মধ্যেই কাটল সময়টা। একসময় বিদায় নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম আমরা।
.
০৪.
বিশ্ব সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা নির্জন জিপসি একরে এসে ঘরসংসার পেতেছিলাম। দুজনে এখানে একান্তে নিশ্চিন্তে বসবাস করব এই ছিল আশা। কিন্তু অজ্ঞাতবাসের সুখ আমাদের সইল না।
ইলিয়ার সৎমা কোরা দেখা দিলেন মূর্তিমান অভিশাপের মত। একের পর এক চিঠি, শেষের দিকে ঘন ঘন তার পাঠিয়ে উত্যক্ত করতে লাগলেন।
ইলিয়ার নতুন বাড়ি নাকি তার খুব পছন্দ হয়েছে। তিনি ঠিক করেছেন, ইংলণ্ডেই এরকম একটা বাড়ি করবেন। ইলিয়া যেন জমি বেচাকেনার দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।
একদিন সশরীরে আবির্ভাব ঘটল তার। আমাদের এখানে থেকেই জিপসি একরের আশপাশে পছন্দমত জায়গায় খোঁজ করে বেড়াতে লাগলেন।
শেষ পর্যন্ত কিংসটন বিশপ থেকে মাইল পনেরো দূরে একটা জায়গা তার পছন্দ হল। যথারীতি এর পরে নতুন জায়গায় বাড়ি তৈরির প্ল্যান ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।
এরকম একটা ব্যাপার আমাদের মোটেই ভাল লাগবার কথা নয়। কিন্তু আমাদের আপত্তি জানাবারও কোন উপায় ছিল না।
কয়েকদিন পরে কয়েকটা জরুরী তার এল ইলিয়ার নামে। জানা গেল তার ফ্র্যাঙ্ক পিসে প্রতারণার ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে জেলে যেতে বসেছেন। তার সঙ্কট মোচনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন।
এই সঙ্গে আরও একটা ঝামেলার সংবাদও এসে পৌঁছল। ইলিয়ার ব্যবসা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এইসমস্ত বৈষয়িক ঝামেলা আমার মাথায় ঢুকত না। তাই আমি নাক গলাবারও চেষ্টা করলাম না।
এই সব ঝুটঝামেলার মীমাংসার জন্য ইলিয়াকে ঘন ঘন কিছুদিন ইংলণ্ড যাতায়াত করতে হল।
এরমধ্যেই একটা ব্যাপার আমরা আবিষ্কার করলাম। যে সম্পত্তিটা আমরা কিনেছিলাম সেটা ছাড়াও আশপাশের কিছু জমি ও গোটা পাহাড়ের অনেকখানিই আমাদের সম্পত্তির অন্তর্ভুক্ত ছিল। বনজঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চলটা আমরা ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম।
পায়ে চলার কোন পথ এদিকে ছিল না। ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে পথ করে নিতে হচ্ছিল আমাদের নিজেদেরই।
বনবাদাড় ঘুরে বেড়াবার সময় একজায়গায় একটা পায়েচলা পথের চিহ্ন খুঁজে পেলাম একদিন। বোঝা যাচ্ছিল দীর্ঘ দিন এই পথ ব্যবহার হয়নি। বহু পরিশ্রম স্বীকার করে পথটার শেষ আমরা খুঁজে বের করলাম। নানা আকার আকৃতির পাথরের চাঙড়ের মাঝখানে ভাঙাচোরা একটা ঘরে গিয়ে শেষ হয়েছে পথটা।
ঘন জঙ্গলের ভেতরে লোকজনের সংস্পর্শের বাইরে এমন একটা ঘর আবিষ্কার করতে পেরে বেশ রোমাঞ্চিত হলাম আমরা। যেন একটা অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া গেল।
দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ঘরটা আমরা লোকজন ডেকে সারাই করিয়ে নিলাম। আশপাশটাও ঝোপঝাড় কেটে পরিষ্কার করে নেওয়া হল।
দিন কয়েকের মধ্যেই নতুন জানালা দরজা লাগিয়ে ঘরটাকে বসবাসযোগ্য করে নেওয়া হল। মাঝে মাঝে এখানে এসে যাতে বিশ্রাম নেওয়া যায় সেইজন্য আসবাবপত্রও নিয়ে আসা হল।
তবে যাতায়াতের পথটা ইচ্ছে করেই পরিষ্কার করালাম না। আমার মনে হল জায়গাটাকে লোকজনের দৃষ্টির আড়ালে রাখাই ভাল।
সেই সঙ্গে আমি ইলিয়াকে সতর্ক করে দিতেও ভুললাম না। বললাম, তোমার সৎমা কোরাকে কিন্তু ভুলেও এই ঘরের সন্ধান দিও না।
কোরা সেই সময়ে দিনকয়েকের জন্য আমাদের এখানেই অবস্থান করছিলেন। সেই কারণেই ইলিয়াকে বিশেষ করে সতর্ক করার প্রয়োজন ছিল।