হেলেনা বলে–বুঝেছি। আমি তোমার উপদেশ মতোই কাজ করবো।
তারপর জিম সেখানে থেকে বেরিয়ে গেল। তখন রাত প্রায় আটটা হবে। হেলেনা চুপচাপ বসে রইলো সেখানে, তারপর তার দৃষ্টি পড়ে রইলো টেবিলের ওপর রাখা রিভলবারটার ওপর। নটার সময় মিসেস অ্যানের ফ্ল্যাটে গেল হেলেনা। সানডে ম্যাগাজিনটা তার কাছে। থেকে চেয়ে আনার জন্যে।
কিছুক্ষণ আগে জিম সিনেমা দেখতে গেল, হেলেনা বলল তাকে।
-তাহলে রাত বারটা পর্যন্ত তুমি তোমার ফ্ল্যাটে একলা আছে। মিসেস অ্যান কথাটা বলে তার দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকালো।
হা, হেলেনা তার কথায় সায় দিয়ে বলল, বাড়ি ফিরতে তার বারোটা-একটা হয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ফ্ল্যাটের আলোেগুলো নিভিয়ে দিয়ে হেলেনা বেডরুমে প্রবেশ করল, শোয়ার আয়োজন করার জন্য। রিভলবার হাতে তুলে সঙ্গে নিয়ে এলো হেলেনা। বিছানায় নামিয়ে কৌচের ওপর বসলো সে। এবং অপেক্ষা করতে লাগল হাতে ধরা ঐ রিভলবারটা নিয়ে। দৃষ্টি প্রসারিত বাইরে রাতেই অন্ধকারে দিকে।…হেলেনা মনে মনে ছবি আঁকতে থাকলো। তার মনের আয়নায় জিম আর সোফিয়ার পাশাপাশি দুটো ছবি ভেসে উঠলো-জিম তাকে বলবে এখন থেকে তার কাছে সে একটু সকাল সকাল আসবে। সোফিয়া হয়তো প্রশ্ন করবে, কেন তোমার স্ত্রীর সঙ্গে গণ্ডগোল হয়েছে নাকি। জিম বলবে, না না, সেসব কিছু নয়। আসলে চোরের উপদ্রবে স্ত্রী ভীষণ আতঙ্কিত। ও যেন কেমন নার্ভাস হয়ে পড়েছে। সোফিয়া ধূর্ত চোখে তাকাবে। তার ঠোঁটে রহস্যময় হাসি খেলে যাবে। বলবে–তা তুমিও কি কম চোর। তারপর তারা দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়বে। এ ওকে জড়িয়ে ধরে হাসিতে লুটোপুটি খেতে থাকবে।
এমন সময় হঠাৎ হেলেনা বাইরে বারান্দায় জিমের পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। খুব ধীরে ধীরে হাঁটছিল সে। তার পায়ের শব্দ শুনে অন্ততঃ তাই মনে হলো। বেডরুমের কাছাকাছি আসতে হেলেনা জিমের হাতে চাবির গোছার শব্দ শুনতে পেল। পকেট থেকে সেই মুহূর্তে সে চাবির গোছাটা বের করল। ঠিক তখনই হেলেনার মাথায় রক্ত চড়ে গেল যেন। তার রাগ আরো বেড়ে গেল। মুখের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। সে আরো কঠিন হলো। উঠে দাঁড়ালো। নো, নো মার্সি। এখন সেন্টিমেন্টের কোন প্রশ্ন নেই। রিভলবারটা দরজার দিকে তাক করে তেমনি উত্তেজিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে রইলো সে, তার হাতের একটা আঙুল ট্রিগারের ওপর শক্ত হয়ে বসলো। ডোর ল্যাচে চাবি ঢোকানোর শব্দ পেলো হেলেনা। পরক্ষণে দরজাটা খুলে গেল তার চোখের সামনে।
দরজার কপাটটা খুলে যেতেই বাইরের অস্পষ্ট আলোয় ঘরের জমাট অন্ধকারটা একটু বোধহয় ফিরে এলো। দরজার কপাটটা আবার বন্ধ হয়ে গেল। আবার অন্ধকার ঘনীভূত হয়েছে ইতিমধ্যে। জিম তখন ঘরের ভেতরে। অন্ধকারে এক ছায়ামূর্তি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো। আর এক ছায়ামূর্তি অপেক্ষা করছিল সেখানে তার জন্যে। জিম তাকে দেখতে পেলো। চিনতে পারলো। তখন সে স্তব্ধ হতবাক। হেলেনার হাতে তার রিভলবার। তার দিকে তাক করা।
হেলেনা!
জিম তাকে আবার দেখলো। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। ঝলসানো বিদ্যুতের আলোয় ৪৫ ক্যালিবার গর্জে উঠলো। একটা পশুর শক্তি যেন তার দেহের ওপর নিয়োগ করা হলো এবং সঙ্গে সঙ্গে একটা ধাক্কা খেয়ে টেবিলের ওপর আছড়ে পড়লো। তখন তার বুকের ভেতর আগুন জ্বলছিলো। সে আগুন নেভাবার মতো নয়।
হেলেনা এবার ধীরে ধীরে সুইচ বোর্ডের সামনে গিয়ে ঘরের সুইচের ওপর হাত রাখলো একটা যান্ত্রিক শব্দ উঠতেই ঘরটা আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো। সেই আলোয় হেলেনা তার দিকে বরফ চোখে তাকালো। তারপর সে চোখ ঢেকে চিৎকার করে উঠলো।
পুলিশ হেলেনাকে সহানুভূতি জানিয়ে গেল। বেশ ভালো ব্যবহার করলো তার সঙ্গে। হেলেনা খুব শান্ত ভাবে ঘটানাটিকে বলল। হেলেনার জবানবন্দী নেবার সময় একটুও সন্দেহপ্রকাশ করল কি কেউ?
হেলেনা তাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে এবং কিছুটা নিজের সুনিপুণ অভিনয়ের গুণে : কেমন অনায়াসে একটা সাজানো গল্প শুনিয়ে দিলো। নিতান্ত দুবৃত্ত ভেবে তার হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর তাগিদেই তাকে রিভলবার ব্যবহার করতে হয়েছিল। হেলেনার বক্তব্য এইরকম। ঘটনার আনুপূর্বিক বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখের জলে ভাসিয়ে দিলো সবকিছু। সন্দেহ করা দূরে থাক, পুলিশ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। তবে একেবারে নিঃসন্দেহ হবার জন্যে পুলিশ হেলেনার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা মিসেস অ্যানের কাছে গিয়ে খোঁজখবর নিলো। নীচু গলাতেই তারা গোপন আলোচনা করলে তার সাথে।
মিসেস অ্যানকে নানা প্রশ্ন ব্যতিব্যস্ত করে তুলেতে চাইলো। কিন্তু সন্দেহজনক কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারলো না। পুলিশ যাতে করে হেলেনাকে তার স্বামীর হত্যকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে এমন কোন কু মিললো না। এমন কি মিসেস অ্যানও স্বীকার করলো যে, গত রোববার সে-ও হেলেনার ফ্ল্যাটে চোর ঢোকার শব্দ পেয়েছিলো। অতএব আজ ও জিমকে চোর ভেবে হেলেনার রিভলবার চালানোটা স্বাভাবিক ভাবেই গ্রহণ করলো পুলিশ। হেলেনাও শেষপর্যন্ত নিখুঁত অভিনয় করে গেল। মনে মনে ভাবলো, যে ব্যাপারটা কতই না সহজ বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। সঙ্গে সঙ্গে তার মনটা খুশীতে ভরে উঠলো সোফিয়াকে আঘাত হানতে পারার জন্যে। এখন আমার ভীষণ ইচ্ছে করে সত্যি ঘটনাটা তোমাকে জানিয়ে দিই। তোমাকে এবং জিমকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলাম। এবং আজ আমি এক সফল নারী, এই কথাটা সবাইকে চিৎকার করে ডেকে বলবো।