কিন্তু হেলেনা তাকে ছেড়ে যেতে দেবে না। কখনোই না। জিম তুমি যা চাইছে, তা তুমি পাবে না। পেতে পারো না। মানুষের বিশ্বাসের টুটি চেপে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তুমি ওপরে উঠতে পারবে না।
হেলেনা ভাবলো, এখন তার কি করা উচিত। আর এখন জিমের অন্যায় কাজটা আর বেশিদিন চালিয়ে যেতে দেওয়া উচিত নয়। তাছাড়া জিমকে ছেড়ে আসার কথাটা সে চিন্তা করতে পারে না। অথচ সবাই যে বলবে সে ব্যর্থ, এই কথাটাও সে মানতে রাজী নয়। কিন্তু এসব কথা চিন্তা করতে গিয়ে তার মনে হলো, এবার কিছু একটা করা দরকার। হঠাৎ তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। একটা সম্ভাবনার কথা মনে পড়ে গেল তার। আর সেই সম্ভাবনার মধ্যে যেন একটা অদ্ভুত থ্রিল আছে, রোমাঞ্চ আছে, উত্তেজনা আছে, ঠিক এই মুহূর্তে তার মত নির্যাতিত কত বধূ এই চিন্তাটিকে করছে এবং মনের ভয়ের জন্যে তারা চিন্তাটিকে বাস্তব রূপ দিতে সাহস পাচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে এক অবহেলিত নির্যাতিত মহিলার কাহিনীটির কথা মনে পড়ে গেল।
ভদ্রমহিলা শেষপর্যন্ত তার লম্পট দুশ্চরিত্র স্বামীকে কিভাবে জব্দ করেছিল তার গল্প মনে পড়ে গেল হেলেনার।-লোকটি রোজ মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতো আর রান্নাঘরে ডাইনিং টেবিলের ওপর ঘুমিয়ে পড়তো। তারপর ঘুম ভেঙে যেতেই পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট এবং লাইটার বার করে সিগারেট ধরাতো। একদিন তার স্ত্রী, মাতাল স্বামী ডাইনিং টেবিলের ওপর ঘুমিয়ে পড়তেই ইনডোর গ্যাসের সুইচটা অন করে দিলো। তারপর রান্নাঘরের সব জানালা দরজা বন্ধ করে বাইরে চলে গিয়ে সিঁড়ির মুখে অপেক্ষা করতে থাকলো।
লোকটা ঘুম থেকে উঠে জেগে সিগারেট খাওয়ার জন্যে যখন লাইটার জ্বালবে তখন রান্নাঘরে অবশ্যই বিস্ফোরণ ঘটবে। কারণ ইতিমধ্যে সমস্ত রান্নাঘর গ্যাসে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।
হলোও তাই। লোকটা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল। পুলিশ জানলো, এটা দুর্ঘটনা মাত্র। অসাবধানতাবশতঃ গ্যাসের সুইচটি বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল মেয়েটি। একটি নিখুঁত খুন সংঘটিত হলো। কিন্তু কথা হচ্ছে, জিম তাকে সেরকম কোন সুযোগই দেয় না। সে যাইহোক। তাকে সুযোগ অবশ্যই করে নিতে হবে। হেলেনা মনে মনে ভাবতে থাকে কথাগুলো।
পরের রোববার জিম জানালো, সে আবার সিনেমা দেখছে যাচ্ছে। একটা খুব আকর্ষণীয় ছবি এসেছে। যে ছবিটা দেখার জন্য কয়েকদিন ধরে অপেক্ষা করছিল সে।
তাই নাকি? হেলেনা শান্ত কণ্ঠে বলে–ঠিক আছে। যদি তুমি একান্তই যেতে চাও তাহলে এক কাজ করো। ইভনিং শোয়েতে গিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসো। একা থাকতে আজকাল আমার ভীষণই ভয় করে। তোমাকে আমি বলিনি গত সপ্তাহে যখন রাত প্রায় এগারোটা হবে মনে হয় বাড়িতে বোধহয় চোর ঢুকেছিল।
–সেকি? জিম চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করে–তুমি পুলিশে খবর দিয়েছিলে?
–না। পরের দিন সকালে এই প্রসঙ্গ নিয়ে মিসেস অ্যানের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। সে বলে, মনে হয় ও বোধহয় শব্দটব্দ শুনেছিল। মিসেস অ্যান তাদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। দৃঢ় প্রকৃতির মহিলা। কোন ঝামেলায় যেতে চায় না। বিশেষ করে চুরি চামারির ব্যাপারে সে মুখে খুলতে চায় না। ভীষণ ভয় পেয়ে গেল সে। অতএব হেলেনা অতি সহজেই মিসেস অ্যানের কাছে কথাটা জাহির করতে সক্ষম হলো। মিসেস অ্যান বিশ্বাস করলো হেলেনার ফ্ল্যাটে সত্যি সত্যি চোর ঢুকেছিল সেদিন। প্রয়োজন হলে সে তাকে সমর্থন করে সাক্ষ্য দেবে। হেলেনা মনে মনে হাসলো। জিমের কথায় সম্বিত ফিরে পেলো।
–তাহলে তুমি কি চাও আমার বন্দুকটা বের করে রেখে যাবো? জিম জিজ্ঞাসা করে।
আর্মি থেকে সে একটা ৪৫ ক্যালিবারের রিভলবার বাড়িতে এনেছিল। এবং সেটা তার ড্রয়ারে তালা দিয়ে রেখেছিল প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য। হেলেনা মাত্র একবারই সেটা দেখেছিল, তবে সে জানতো, সেটা জিমের ড্রয়ারের মধ্যেই আছে।
-ওসব জিনিস আমার ভীষণ ভয় লাগে। হেলেনা ভয়ে ভয়ে বললো।
-ওটা একটা সহজ ব্যাপার, জিম তাকে বোঝাবার জন্য চেষ্টা করে বললো-একটা রিভলবার কাছে থাকলে বুঝবে তুমি নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারবে।
-আমার নিরাপত্তার কথা তুমি এত গভীর ভাবে চিন্তা করো, হেলেনা বলল। হেলেনার কথার মধ্যে লুকিয়ে ছিল ব্যঙ্গ। জিম ধরতে পারলো না। তাই শব্দ করে হেসে উঠে বললো –নিশ্চয়ই। তারপর বেডরুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল–স্ত্রীর প্রতি প্রত্যেক স্বামীরই নজর দেওয়া উচিত। জিমের কথাগুলো কেমন সন্দেহজনক। হেলেনা বুঝতে পারলো।
জিম সেই ৪৫ ক্যালিবারের রিভলবারটা এনে বলল–এটা তোমার কাছে রেখে দাও। তখনই হেলেনা বলে–আজ রাতে রান্নাঘরের মেঝেটা সাবান সোডা দিয়ে ভিজিয়ে রাখবো। বড্ড নোংরা হয়েছে। তাই বলছিলাম কি তুমি পাশের দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকো।
জিম উত্তর দেয়–ঠিক আছে তোমার যাতে সুবিধা হয় তাই করবো। টেবিলের ওপর রিভলবারটা রাখতে গিয়ে জিম বলল–এটা এখানে রইলো। বিপদের সময় মানুষের এটা পরম বন্ধু। আমাদের ফ্ল্যাটের যা দৈন্য চেহারা তাতে মনে হয় না কোন চোর চুরি করার প্রেরণা পাবে। তবু যদি আসে গুলিভর্তি রিভলবারটা রেখে যাচ্ছি। যদি কোন আগন্তুককে আসতে দেখো, জিম হাসতে হাসতে বলল, এটা তুলে নিও। এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে লক্ষ্য করে ট্রিগার টিপে দিও।