- বইয়ের নামঃ একটি অসমাপ্ত কবিতা
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই
একটি অসমাপ্ত কবিতা
১. প্রথম গল্পের কাহিনী
[ আমার প্রথম গল্পের কাহিনীটি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।]
একটি অসমাপ্ত কবিতা
যেন এক অসমাপ্ত কবিতা। যার শুরু আছে শেষ নেই। আদৌ শেষ হবে কিনা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।
বছর পাঁচেক আগেই তাদের বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছিল কিন্তু হেলেনা তা ঘটতে দেয়নি। কাজটা খুব সহজ ছিল না। তবে মনের জোরেই সে সফল হয়েছিল বলা যেতে পারে।
অন্ততঃ তার শক্ত মনটা।
আর সেই কারণেই বোধ হয় জিম তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিল, তাকে যদি আর একবার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে সে তার পথ এবং মত বদলাতে পারে।
অনেকদিন ভেবেছে হেলেনা। সত্যি এই ঘটনার পরে কি আর কোন সুযোগ দেওয়া উচিত জিমকে? ভাবতে ভাবতে অবশেষে ক্লান্ত হয়ে সেই সুযোগ দিলো হেলেনা। জীবন তো একটাই। তাকে এভাবে মাঝখান থেকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে কি লাভ? দেখাই যাক না, জিম নিজেকে বদলাতে পারে কিনা। সে তাকে প্রমাণ করতে পারে কিনা বিশ্বস্ত স্বামী হিসেবে। এমন ভালোবাসার অভিনয় এই প্রথম নয়। এর আগে বেশ কয়েকবার সে হেলেনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলো। হেলেনার বন্ধুরা প্রায়ই বলে থাকে, তার উচিত জিমকে ছেড়ে চলে আসা এবং তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করা। কিন্তু বদ্ধপরিকর সে, তাদের বিয়েটা দীর্ঘায়িত করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবে সে।হেলেনা ভেবেছিল।
তারপর অতিবাহিত হয় আরো পাঁচ-পাঁচটি বছর। জিমের স্বভাবে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। আগের মতোই বেপরোয়া উচ্চুঙ্খল জীবন যাপন করছে যদিও অভিনয়ের তাগিদে সেইসময় সে মুখের ওপর পরেছিল বিশ্বস্ততার মুখোশ। অফিস ছুটির পরেই বাড়িতে ফিরে আসতো। আগের সব আড্ডা বন্ধ করে দিয়েছিল। হেলেনাকে না নিয়ে বাড়ির বাইরে যেতো না।
প্রথম বছরটা কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে কাটলো। হেলেনা খুব সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ্য করছে প্রতিটি দিন। ঝানু গোয়েন্দার মতো স্বামীর প্রতিটি চলাফেরার ওপর রেখেছে কড়া নজর। যদি কোন সময় চোখে পড়ে কোন বেলেল্লাপনা তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার আগের সিদ্ধান্তে ফিরে যাবে সে।
মনে হয় কেউ যেন টাইম বোমা বিস্ফোরণের প্রহর গুণে চলেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে ভেবেছে না জানি কোনদিন তার জীবনে সেই পরম বিপর্যয় ঘনিয়ে আসবে। কিন্তু সেরকম কিছুই ঘটেনি। তারপর বছর দুই বাদে হেলেনা তার বন্ধুদের কাছে বলতে শুরু করল, সে সফল হয়েছে। একটা প্রকাণ্ড বিপর্যয়ের মুখ থেকে সে তাদের বিচ্ছেদটাকে রুখতে পেরেছে।
সময়ে সঙ্গে তাল দিয়ে হেলেনা তার বিশ্বাসটাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। নিজের সাফল্যে সে স্বভাবতই গর্বিত। গর্ববোধ শেষ পর্যন্ত অহঙ্কারের দিকে মোড় নিলো। বন্ধুরাও তার গর্বের কথা ক্রমাগত শুনতে শুনতে হাঁপিয়ে উঠলো। ফলে তারা তাকে এড়িয়ে যেতে থাকে। হেলেনার তাতে কিছু আসে যায় না। বন্ধুরা তাকে ছেড়ে গেলেও জীবনের ধ্রুবতারার মত সে তো আঁকড়ে ধরতে পারবে তার স্বামী জিমকে। এবং সেই সঙ্গে সফল হবে তাদের বিবাহিত জীবনের প্রতিটি প্রহর।
তারপর এক রোববারে জিম তাকে নিয়ে এলিটে একটা সিনেমা দেখতে বেরোলো। সেই থেকে প্রায় প্রতি বোরবার সে সিনেমায় যাচ্ছে বলে একা একা বেরোতে থাকলো। হেলেনার ছবি দেখতে তেমন আগ্রহ নেই। সিনেমা বন্ধ হলে তার মাথা ধরে যায়। তাই জিমকে একা একাই ছবি দেখতে যেতে হয়। কিন্তু এর মধ্যে জিমের তেমন কোন দোষ সে খুঁজে পেলো না। মাথা ঘামাল না এ ব্যাপারে।
এক রোববার অনেক রাত করে বাড়ি ফিরলো জিম। হেলেনা তখন বিছানায় তার দেহটাকে এলিয়ে দিয়েছে। ছবি নিয়ে আর কোন আলোচনা হলো না। পরের দিন সকালে ঝড়ের গতিতে ব্রেকফাস্ট সারলো জিম। তবু সেই ফাঁকে হেলেনা জানতে চাইলো কালকের ছবি তার ভালো লেগেছে কিনা।
জিম কেমন যেন নিষ্ক্রিয় কণ্ঠস্বরে বলে–নতুনত্ব কিছু নেই।
আলোচনাটা সেখানেই থেমে গেল। জিম ঝড়ের গতিতে অফিসে চলে গেল।
সেদিন দুপুরে হেলেনা গেল হগ মার্কেটে মার্কেটিং করতে। টুকিটাকি জিনিস কেনার পর জেলির দোকানের সামনে সে থমকে দাঁড়ালো।
জিম সেদিন জেলির কথা বলেছিল। কিন্তু কি ধরনের জেলি তার পছন্দ তা তো জানে না। তাই সে ঠিক করলো-জিমকে তার অফিসে ফোন করে জেনে নিলে কেমন হয়। কথাটা মনে হতেই সে পাবলিক টেলিফোন বুথে গিয়ে জিমের অফিসের নাম্বার ডায়াল করলো।
জিমের সেক্রেটারী মিস পামেলা, রিসিভার তোলার আগে অনেকক্ষণ রিং হয়ে যাবার শব্দ হলো। তারপর একসময় সে রিসিভার তুলে খুব সংক্ষেপে কথা বললো।
তার গলায় স্বর বোঝার আগে তাকে একটু সময় অপেক্ষা করতে বললো। কারণ জিম অন্য লাইনে কথা বলছে।
জিমের চেম্বারে লাইনটা দেওয়ার সময় তার সেক্রেটারী সম্ভবতঃ ইন্টারকমের সুইচটা অফ করতে ভুলে গিয়েছিল। দূর থেকে ভেসে আসার মতোই জিমের গলা শুনতে পেলো সে। তবে অস্পষ্ট নয়। তবে কান পেতে শুনলে স্পষ্ট শোনা যায়?
হেলেনা উৎকর্ণ হলো—
গতকাল তরুণী সোফিয়াকে দেখলাম। জিমকে বলতে শোনা গেল।
হেলেনার মুখটা কঠিন হয়ে উঠলো। এবং সেই সঙ্গে অবিশ্বাস এবং ঘৃণায় তার সারা মুখ ছেয়ে গেল।