কার্সওয়েল ভীষণ সতর্ক, তিনি ডানিংকে না চেনারই ভান করলেন। ডানিং অবশ্য তার সম্মুখেই বসেননি। কার্সওয়েলের কাগজপত্রের মধ্যে কোনো প্রকারে কাগজটা রেখে দেওয়ার কথা ভাবতে লাগলেন। কার্সওয়েলের অপরদিকে ও ডানিং-এর পাশেই তার কোট ও অন্যান্য জিনিস রাখা আছে, তবে তার মধ্যে কাগজটা রাখলে কোনো কাজের কাজ হবে না, আর নিরাপদও বোধ করবেন না এতে। অবশ্য একটা খোলা কাগজপত্র সহ ব্যাগ দেখলেন এটা যদি লুকিয়ে ফেলা যায় (এমনভাবে তা করতে হবে যেন কার্সওয়েল ভুল করেই তা ফেলে নেমে যাচ্ছিলেন তিনি লক্ষ্য করেছেন তাই তাকে দিয়েও দেবেন।) এই পরিকল্পনাটাই তিনি সঠিক মনে করলেন। কিন্তু ভালো হত যদি হ্যাঁরিংটনের সঙ্গে তা নিয়ে কথা বলা যায়–তবে সে সুযোগ কোথায় আসছে। সময় ক্রমশঃ এগিয়ে চলেছে।
কার্সওয়েল বহুবার করিডর যাচ্ছিলেন আর ফিরে আসছিলেন তবে ডানিং হ্যাঁরিংটনের ইশারা মত কোনো সুযোগই নেননি। তারা দুজনকে চেনে কি না সেটা অবশ্যই কার্সওয়েল লক্ষ্য করছিলেন। তিনি ফিরে এলেন। মনে হলো তিনি ধৈর্য হারিয়েছেন। কিন্তু তৃতীয়বার যখন কার্সওয়েল উঠলেন তখন একটু আশার আলো দেখা গেল কারণ কিছু একটা জিনিস মেঝেতে শব্দ না করেই পড়ে গেল। পুনরায় কার্সওয়েল উঠলেন আর এইবার বারান্দার জানালার সীমানা ছাড়িয়ে গেলেন। বস্তুটা ডানিং তুলে নিয়ে দেখলেন, তা কুক কোম্পানির টিকিটের বাক্স, ভেতরে একটা চাবি। এ ধরনের কেস-এ পকেটে থাকে আর যে কাগজের কথা বলা হচ্ছে তা চটজলদি পকেটে চলে গেল। নিশ্চিত হবার জন্যে ঠিক ঐ সময়ে হ্যারিংটন গাড়ির দরজার কাছে দাঁড়িয়ে খড়খড়ি নিয়ে আপন মনে নাড়াচাড়া শুরু করলেন। কাজটা হয়ে গেল সময় মতো হয়ে গেল, কারণ ডোভারের কাছাকাছি এসে যাওয়াতে ট্রেন আস্তে আস্তে চলতে শুরু করেছে।
মিনিট খানিকের মধ্যে কার্সওয়েল ফিরে এলেন। যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবেই ডানিং তাকে টিকিটের কেসটা দিয়ে বলেন,–এটা বোধহয় আপনার, তাই না? নিন দয়া করে।
কার্সওয়েল কেসের মধ্যে টিকিটটা দেখে বলেন, হ্যাঁ, হ্যাঁ। ধন্যবাদ অসংখ্য-এ জন্যে। বুক পকেটে কেসটা রেখে দিলেন।
যে কিছুটা মুহূর্ত সময় ছিল তারই ভেতরে বুঝতে পারলেন না, সঠিক সময়ের আগে কাগজটা পেলে তার ফলাফল কী হতে পারে। তাদের মনে হলো ট্রেনের কামরাটায় আলো নেই আর ক্রমশঃ উত্তপ্ত হয়ে আসছে। তবে কার্সওয়েলকে দেখে সন্দেহ হলো; তিনি যেন কি বিষয়ে খুঁতখুঁত করছেন। কোট ও অন্যান্য জিনিসপত্র এগিয়ে নিয়ে এলেন আবার দূরে সরিয়ে দিলেন, যেন সেগুলো তার বিরক্তির উৎপত্তি করছে। এরপরে সোজা হয়ে বসে চিন্তিত হয়ে তাকালেন উভয়ের মুখের দিকে। তবে ট্রেনটা সেই ডোভারে পৌঁছল। তাদের মনে হলো কার্সওয়েল কিছু বলার চেষ্টা করছেন। করিডরের দিকে দুজনে গেলেন।
তারা পিয়ারে নেমে গেলেন। ট্রেন খুবই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল ফলে নৌকোয় ওঠার পথে কার্সওয়েল আর তার কুলি যতক্ষণ না এগিয়ে চললেন ততক্ষণ তারা বাধ্য হয়েই প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করতে লাগলেন। আর এতক্ষণ বাদে উভয়ে হাতে হাত মিলিয়ে চাপ দিয়ে দুজনকে সাবাস দিলেন। তখন ডানিং-এর প্রায় মূৰ্ছা যাওয়ার অবস্থা। দেওয়ালে তাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে হ্যারিংটন কিছুটা এগিয়ে অন্য জায়গায় গেলেন। কার্সওয়েলকে যেখান থেকে দেখা যায়। একজন সেখানে তার টিকিট দেখলেন। দেখা হলে কার্সওয়েল কোট ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে এগোলেন। আচমকা টিকিট পরীক্ষাকারী তাকে ডাকলেন,-মাপ করবেন ও মশাই, অন্য ভদ্রলোকটি তার টিকিটটি কি দেখিয়েছেন? কার্সওয়েল ডেক থেকে দাঁত খিঁচিয়ে বললেন, অন্য ভদ্রলোক! তার মানে।
বেশ খানিকক্ষণ সময় লর্ড ওয়ার্ডেন-এ দুজনে বসেছিলেন, সব চেয়ে বড় চিন্তার কারণটা যা ছিল তা চলে গেলেও যে জিনিসটা এখও মনের মধ্যে খচখচ্ করছে তার গুরুত্বও কিছু কম নয়। এটা তাদের মনে হয় তারা এইভাবে একজন লোককে মৃত্যু পথযাত্রী করে তুললেন সেটা কি ন্যায় হলো? অন্য কিছু না হোক তাকে সাবধান করে দেওয়া উচিত ছিল! হ্যারিংটন বললেন, না, কক্ষনো না! যদি সত্যি ও-ই ভাইকে খুন করে থাকে তবে আমরা যেটা করছি তা ঠিকই। এছাড়াও কোথায় কেমন করে তাকে সাবধান করে দেওয়া সম্ভব? অ্যাবিভিল অবধি তো ওর টিকিট, আমি দেখেছি। যদিও ডোয়ানস গাইড দেখে সেখানকার হোটেলগুলোকে টেলিগ্রাম করে দিই আপনাদের টিকিটের কেসগুলো একটু সঠিকভাবে দেখুন তাহলে কিছুটা অস্বস্তি কাটে। ২১ তারিখ আজকে, আরও একটা দিন সময় পাবে ও। তবে যদি ও হোটেলে না ওঠে তবে টেলিগ্রামগুলো হোটেলে থেকে যাবে।
টেলিগ্রামগুলো যথাস্থানে পৌঁছল কি না বোঝা গেল না অথবা যদি বা পৌঁছে থাকে তার তাৎপর্য বোধগম্য হবে না। শুধু এটাই জানা গেল ২৩ তারিখ অ্যাবিভিলের সেন্ট উলফ্রামের গীর্জার সামনের দিকে একজন ইংরেজ যাত্রী দেখছিলেন, তখন সেখানে বেসী মাত্রায় মেরামতের কাজ চলছিল। আচমকা একটা পাথর তার মাথায় পড়ে আর সাথে সাথে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু এটা প্রমাণিত তখন সেখানে কোনো কাজ হচ্ছিল না। কাগজপত্র থেকে জানা যায় যাত্রীটি কার্সওয়েল।
একটা কথাই আর জানানোর আছে। কার্সওয়েলের সমস্ত দোষত্রুটি সত্ত্বেও হ্যারিংটন তার এক সেট বেউইক কিনেছিলেন। তার যে পাতায় উডকাটের পথিক আর তাকে পিছু করা দৈত্যের ছবি স্বাভাবিক কারণেই খুব ভালো অবস্থায় ছিল না। এই ঘটনা ঘটে যাওয়ার কয়েক দিন বাদে ডানিংকে হ্যারিংটন বলতে গেলেন ঘুম অবস্থায় তার ভাই তাকে যা বলেছিলেন। অর্ধেকটা শোনার পর কিন্তু ডানিং তাকে থামিয়ে দেয়।