জনের শরীর মৃত্যুর কয়েক মাস আগে থেকেই প্রায়ই খারাপ হয়ে যেত, যদিও মৃত্যুর ঠিক কিছুদিন আগে শরীর ভালোই ছিল, বিশেষভাবে যে ধারণা তাকে চেপে ধরেছিল তা হলো, কোনো লোক তার পিছু নিয়েছে। কিন্তু এধরনের কোনো ধারণা এর আগে তার মনে কখনও আসেনি। সব শুনে, এর মাঝে যে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য কাজ করছে এই চিন্তা আমি কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনি এবং যা আপনার কাছে শুনলেন তার সাথে আমার ভাইয়ের কাহিনীর অনেক সাদৃশ্য আছে। দুটো ঘটনার মাঝখানে আপনি কি কোনো সম্ভাব্য যোগাযোগ আবিষ্কার করতে পারছেন?
অস্পষ্টভাবে একটা কথাই আমার মনে পড়ে। শুনেছি আপনার ভাই মৃত্যুর কিছু আগে একটা বইয়ের প্রচণ্ড কঠিন সমালোচনা করেছিলেন। এবং খুব সম্প্রতি আমি সেই বইয়ের লেখকের সান্নিধ্যে এসে পড়েছি।
নিশ্চয় তিনি কার্সওয়েল নন?
নন কেন, তিনিই তো।
চেয়ারে হেলান দিয়ে হেনরি হ্যারিংটন বসলেন। এরপর বললেন, এতক্ষণে সব ব্যাপারটাই পরিষ্কার হয়ে গেল। এবার শুনুন আমি সব বোঝাই। আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম জনের একটা কথা থেকেই যে কার্সওয়েলই যত কিছু অস্বস্তির মূলে। একটা ঘটনার কথা জানাই যার সাথে এই ব্যাপারের একটা যোগাযোগ আছে। সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে বিখ্যাত ছিল আমার ভাই, শহরে গিয়ে কনসার্টে যোগ দিত। মৃত্যুর মাস তিনেক আগে কনসার্ট পার্টি থেকে সে ফিরে আমাকে প্রোগ্রামটা দেখতে দেয়। সে সবসময় প্রোগ্রামগুলো কাছেই রাখত। প্রোগ্রামটা যে আমি কোথায় রেখেছিলাম খুঁজে পাইনি; অনেক খুঁজেছিলাম, শেষে পাশের একটি লোক তাঁর প্রোগ্রামটা আমাকে দেন। বলেন আমি সেটা নিতে পারি, তার আর সেটার কোনো প্রয়োজন নেই। ভদ্রলোক এই বলে চলে যান। আমি ভদ্রলোককে চিনি না। চেহারাটি যেন শক্তসমর্থ, গোঁফ দাড়ি কামানো। এরপরে জন একদিন আমাকে বলল সে বড় অস্বস্তি বোধ করে, হোটেলে যাওয়ার সময় আর রাতে। এখন সব চিন্তা করে আমি একটা যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছি। এর কিছুদিন পরের কাহিনী, গুছিয়ে রাখার জন্যে জন প্রোগ্রামগুলো একসাথে গেঁথে রাখছে, ঠিক সেই সময় সে লক্ষ্য করে, বিশেষ ঐ প্রোগ্রামটির (সেটা আমি ভালো করে দেখিনি) শুরু যেখানে ঠিক তার ওপরে একটু করে কাগজ রয়েছে। লাল আর কালো কালিতে তার মধ্যে কিছু লেখা আছে। যত্ন সহকারে তা লেখা,রনিকের মতো দেখতে মনে হয়। জন তা দেখে বলল, নিশ্চয় আমার পার্শ্ববর্তীর এটা, এটার তার কাছে হয়ত গুরুত্ব আছে। একটা কিছুর নকল হয়ত, যত্নের সাথেই কাজটা করা হয়েছে। তবে ভদ্রলোকের ঠিকানা কোথায় পাব? খানিকক্ষণ আলোচনার পর স্থির হলো ভাই যেন পরের কনসার্টে ভদ্রলোকের সন্ধান করে, দেখা হয়ত পেতেও পারে।
আগুনের কাছেই আমরা বসেছিলাম। ঐ কাগজটা বইয়ের ওপর রাখা ছিল। সেদিন খুবই শীত ছিল। আচমকা দরজা খুলে যেতে গরম হাওয়ায় এক লহমাতে উড়ে গিয়ে কাগজটা আগুনের কাছে পড়ে আর সাথে সাথে পুড়ে ছাই। আমি বললাম, হায় হায় আর ফেরত দেওয়া গেল না এটা। নিশ্চুপ হয়ে কিছুক্ষণ থাকার পর বিরক্ত কণ্ঠে ভাই বলল, তা তো গেলই না। তা, কথাটা বার বার বলছ কেন? আমি বললাম, মাত্র একবারই তো বললাম, বার বার তো নয়। ভাই বলল, উঁহু, কম করে চারবার বলেছ। আমার এ সব কিছুই স্পষ্ট মনে আছে।
আসল কথায় এবার আমরা আসছি। কার্সওয়েলের সেই বই আপনি পড়েছেন কিনা জানি না। তবে আমি পড়েছি,তার মৃত্যুর আগে এবং পরেও। বাঁধুনি বলে কিছুই নেই লেখার মধ্যে, এছাড়াও কোনো বিষয়কেই বইতে স্থান দেননি তা নয়–পৌরাণিক কাহিনী আছে, সোনালী কাহিনী–বর্তমানের অসভ্য মানুষদের আচার ব্যবহারের কাহিনীও আছে। সঠিক হত সবই; যদি লেখক তার সবকিছুই সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে পারতেন কিন্তু তিনি অক্ষম। দুর্ঘটনার পরেও বইটা আমি পড়লাম। তবে এবার প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনাকে বলেছি আমার ভাইয়ের ওপর কার্সওয়েল বিরূপ ছিলেন। এছাড়াও তিনি এই দুর্ঘটনার জন্যে কিছুটা দায়ীও আর এবার বইটাকে আমার অনিষ্টকর মনে হলো। বইয়ের একটা অংশই আমার খুব দৃষ্টি আর্কষণ করেছিল রুশ অক্ষরে? ভাষাকে যেখানে তিনি সাধারণের কাছে আনতে চেয়েছিলেন, লক্ষ্য ছিল তাদের ভালোবাসা পাওয়া অথবা তাদের পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া–আর মনে হয় দ্বিতীয় উদ্দেশ্যটাই তাঁর মাথায় ছিল। তাছাড়া তিনি এই বিষয়ে এমন করে লিখেছেন যেন তার এ সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান। সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিষয়ে যাওয়ার সময় নেই, কিন্তু ফলাফল এই যে, সংবাদ সংগ্রহ করে জেনেছিলাম আমি– যে, কনসার্টের মাঝখানে অসামরিক লোকটি কার্সওয়েল, সন্দেহ হয় শুধু সন্দেহ না, বিশ্বাস করি যদি আমার ভাই কাগজটা দিয়ে দিতে পারত; হয়ত তার মৃত্যু হত না। সেইজন্য আপনাকে প্রশ্ন করছি, যা আমি বললাম আপনি এর অতিরিক্ত কিছু শুনেছেন কিনা?
উত্তরে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের পাণ্ডুলিপি কক্ষের ঘটনার কথা ডানিং জানালেন।
সত্যিই তাহলে আপনাকেও একটা কাগজ দিয়েছিলেন। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখেছেন?–দেখেননি যদি আপনি আপত্তি না করেন তাহলে সেগুলো স্বযত্নে এক্ষুনি দেখতে হবে।
দুজনে মিলে ডানিং-এর বাড়িতে গেলেন। ভৃত্য দুটি ছিল না বলেই বাড়িটা তখনও খালি।