কী সর্বনাশ! কী হয়েছে?
বিষক্রিয়া ধরনের কিছু হয়েছে। যাইহোক দেখছি তুমি সুস্থই আছ, তা না হলে হেঁটে আসতে পারতে না। তবে ওরা সেরে উঠবে।
কি বিপদ! রোগটা কি করে এসেছে?
তারা বলেছে, একজন মাছওয়ালার কাছ থেকে তারা ডিনারের সময় ভোলা কিছু মাছ কিনেছিল। কিন্তু এই রাস্তার আর কোনো বাড়িতে হকার যায়নি বলেই শুনেছি। ওরা তো এখনই আসতে পারবে না। চল আমার বাড়িতে আমার সঙ্গে ডিনার খাবে, এ নিয়ে আর ব্যস্ত হতে হবে না।
সন্ধ্যেবেলাটা ডানিংকে আর একা একা থাকতে হলো না, ডাক্তারের সাথে ভালোই কাটলো। জনমানবহীন বাড়িতে ফিরতে ফিরতে সাড়ে এগারোটা বাজলো। তবে রাত্রিটা তার খুব একটা ভালো কাটল না। আলো বন্ধ করে শুলেন, মনে মনে ভাবলেন ঠিকে দাসী ভোরবেলা গরম জল দেবে তো–ঠিক তখনই তার পড়ার ঘরের দরজা খোলার আওয়াজ শুনলেন–তার শোনায় কোনো ভুল হয়নি। কোনো পায়ের আওয়াজ গলিতে শোনা গেলো না, কিন্তু তবুও কেউ কোনো বাজে মতলবেই এসেছে, কারণ তিনি জানেন তিনি সন্ধ্যেবেলা ডেস্কের ভেতরে কাগজগুলো রেখে দরজা বন্ধ করেছেন। গলির পথে এগোতে ভালো করে কান পাতলেন। তবে কোনো আলো বা আওয়াজ কিছুই শুনতে পেলেন না, শুধুমাত্র তার হাঁটু আর গোড়ালির মধ্যে একঝলক গরম হওয়ার স্পর্শ পেলেন। ফিরে এলেন ঘরে সিদ্ধান্ত নিলেন ভেতর থেকেই ঘরের চাবি দেবেন। এটাই শুধু না, আরও কিছু অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটল তার বাড়ির ইলেকট্রিক কারেন্ট কোনো কারণে বন্ধ হয়েছে, ঘড়ি দেখতে গেলে এখন তাকে দেশলাই জোগাড় করতে হবে, তবেই জানতে পারবেন আর কতক্ষণ তাকে এই অবস্থায় থাকতে হবে। তিনি তা ভেবেই বালিশের নিচের খোপে হাত দিতে গেলেন। হাতটা কিন্তু ততটা গেলো না, একটা দাঁত বার করা মুখ আর তার ওপরে চুল তার নিজের হাতে ধরলেন আর সে মুখটি মানুষের না। তখন তিনি কি বললেন আর করলেন তা অনুমান করার প্রয়োজন নেই, একটা খালি ঘরের ভেতরে দরজায় চাবি বন্ধ করেও চাবির ফুটোতে কান রেখে তিনি রইলেন, তার সংবিৎ যতক্ষণ না পূর্ণমাত্রায় ফিরে এলো। বীভৎস দুর্দশার মধ্যে তাঁর রাত কেটে গেলো। অবশ্য আর কিছু ঘটেনি সেই রাতে।
সকালে যখন তিনি নিজের ঘরে ফিরলেন, সবকিছুই ঠিকঠাক দেখলেন, কোনো সাড়াশব্দ নেই। সন্দেহজনক কোনো কিছুই বাড়ির অন্য কোথাও চোখে পড়লো না।
নির্বিঘ্নে দিনটা শুরু হলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঠিকভাবে সবকিছু এগোলো না। সাহস হলো না মিউজিয়ামে যাওয়ার, কার্সওয়েল যে সেখানে খুব একটা যায় না সেটা যদিও কর্মচারিটি জানিয়েছিল তবে বলা যায় না এসেও যেতে পারে, শত্রুভাবাপন্ন ঐ অপরিচিত লোকটির সাথে তিনি পারবেন না বলেই তার মনে হলো। বাড়িতে থাকতেও তার ভালো লাগছে না, আবার ডাক্তারকে বাড়িতে গিয়ে ব্যতিব্যস্ত করতেও মন থেকে চাইলেন না। নার্সিংহোমে পৌঁছে দাসীদের ভালো থাকার কথা শুনে মন কিছুটা ভালোই হলো। ক্লাবে পৌঁছলেন লাঞ্চের সময়। সেখানে সেক্রেটারীর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াতে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো তার। লাঞ্চে বসে তিনি সেক্রেটারীকে তার যেসব অভিজ্ঞতা তার মনে বিশেষ দাগ কেটেছিল সেগুলো অবশ্য চেপে গেলেন। সব শুনে সেক্রেটারী বলেন, কী কাণ্ড। শুনুন বাড়িতে আমরা দুজন ছাড়া কেউ নেই, আসুন আসুন আমাদের সঙ্গে থাকবেন। না না, কোনো অজুহাতই শুনবো না। আজই বিকেলে জিনিষপত্র সব পাঠিয়ে দিন।
সত্যি সত্যি সবকিছু সহ্যের বাইরে চলে গেছিলো ডানিং-এর। আর ভাবতে ভাবতে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন আবার না, কি ঘটে যায় সেই রাতে। সেই কারণে এই প্রস্তাবে প্রচণ্ড খুশী হলেন, জিনিসপত্র গোছানোর জন্য বাড়ি ফিরলেন।
বন্ধুবান্ধবরা অবসর মত যখন তার চেহারার দিকে লক্ষ্য করল, তারা প্রচণ্ড দুঃখ পেলেন এবং অস্বাভাবিকতা কাটিয়ে তোলার চেষ্টাও করলেন। এই কাজে তারা যে কৃতকার্য হলেন না তা নয়। কিন্তু পরক্ষণেই ধূমপান করার জন্য যখন দুই বন্ধু বসলেন তখন ডানিং পুনরায় চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। আচমকা বললেন, জানেন, আমার ধারণা সেই অপরসায়নবি জানেন যে আমিই তার লেখা বাতিল করেছি।
কথাটা বলেই তিনি মিউজিয়ামের কর্মচারীর সঙ্গে তার কথোপকথনের সমস্ত কিছুই জানালেন। সব শুনে সেক্রেটারি বলেন হয়ত তার ধারণা সত্যি।
ডানিং বললেন, অবশ্য এ নিয়ে আমি বিশেষ মাথা ঘামাই না তাহলেও তাঁর সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমি আদৌ পছন্দ করি না। মনে হচ্ছে ভদ্রলোক বদমেজাজী। তাদের কথার মাঝখানে আবার বিরতি ঘটল। হতাশগ্রস্ত ভাব পুনরায় ডানিং-এর চোখে মুখে ফুটে উঠল। অবশেষে সেক্রেটারি আচমকা প্রশ্ন করলেন–কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে কিনা। অস্বস্তিকর ভাব কাটিয়ে ডানিং বললেন, কী জানেন কথাটা বলার জন্যে আমি রীতিমত ছটফট করছিলাম, কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছিলাম না। আচ্ছা জন হ্যারিংটন নামে এক ব্যক্তি সম্বন্ধে কি আপনি কিছু বলতে পারেন।
সেক্রেটারি খুবই চমকে ওঠেন। তবে তখন শুধু জিজ্ঞাসা করেন যে কেন ডানিং তার কথা বলছে।
শুনে ডানিং সব বৃত্তান্ত খুলে বলেন, ট্রামে কি হয়েছে, রাস্তা অথবা বাড়িতেও কি হয়েছে সমস্ত কিছু। পরক্ষণেই পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন। কি যে উত্তর দেবেন তা সেক্রেটারি খুঁজে পেলেন না। হ্যাঁরিংটনের সমস্ত কথা শোনানই হয়ত ঠিক হবে, কিন্তু ডানিং-এর এই নার্ভাস অবস্থা দেখে তাকে সেই কাহিনী শোনান উচিত কিনা বুঝে উঠতে পারলেন না। তাছাড়া কার্সওয়েলের সাথে ডানিং আর হ্যাঁরিংটনের কাহিনীর সম্পর্ক আছে কি না সে সম্পর্কে সন্দেহ রয়েই গেল। শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন স্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা করেই এই কথা জানাবেন। শুধু বললেন তিনি যখন কেমব্রিজে ছিলেন তখন তাকে চিনতেন আর তার মনে হয় ১৮৮৯ সালে হ্যাঁরিংটনের মৃত্যু হয়। পরে স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললেন। তিনি যা ঠিক করেছিলেন তার স্ত্রীও সেই একই কথা বললেন স্ত্রী তাকে মৃত জন হ্যাঁরিংটনের ভাই হেনরি হ্যাঁরিংটনের সাথে যোগাযোগ করার কথা বললেন। আরও জানালেন তাদের আগের দিন যেখানে নেমন্তন্ন ছিল সেখানে বললেই হেনরি হ্যাঁরিংটনের সাথে দেখা হতে পারে। কথা হলো, মিঃ বেনেট–যিনি তাদের বন্ধু তার সঙ্গে সেক্রেটারির স্ত্রী দেখা করবেন। হেনরি হ্যারিংটন ও ডানিং-এর মধ্যে কিভাবে দেখা হলো তা বলার দরকার নেই। উভয়ের মধ্যে এই কথাই হল যে–হ্যারিংটনকে ডানিং জানালেন কি করে মৃত জন হ্যাঁরিংটনের নাম তিনি দেখেন এমনকি পরে আর দুটো ঘটনার কথা জানান। এরপর তিনি হেনরিকে প্রশ্ন করেন তার ভাইয়ের মৃত্যুর সাথে সম্পর্ক আছে এরকম কোনো কাহিনী মনে পড়ছে কি না। ডানিং-এর এই কথায় হেনরি কিরকম আশ্চর্য হয়েছিল তা চিন্তা না করেই বলা যায়, তবুও তিনি কিছু জানাতেই আপত্তি করলেন না।