এ সব কোম্পানি অফিসের ব্যাপার, বোধহয় এর দায়িত্বে আছেন মিঃ টিমস। ঠিক আছে আজ রাতেই সন্ধান করব। কাল দেখা হলে জানাতে পারব।
এ সবকিছুই সেদিনের সন্ধ্যেবেলার ঘটনা। সন্ধান করে ডানিং জানতে পারলেন অ্যালব্রুক হলো ওয়ারউইকশায়ারে।
তারপরের দিনও তিনি শহরে গেলেন–সেই ট্রামেই। প্রণ্ড ভিড় থাকায় কণ্ডাক্টরের সাথে তিনি কোনো কথা বলতে পারলেন না। তবে দেখলেন যে বিজ্ঞাপনটা যথাস্থানে নেই। পড়ন্তবেলায় আবার এক রহস্য। তার পড়াশুনার সময় এক দাসী এসে সংবাদ দিল, ট্রাম কোম্পানির দুজন লোক তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়।
আসলে লোকদুটো ট্রামের কণ্ডাক্টর ও ড্রাইভার। মিঃ টিমস-এর কথা জানতে চাইলে কণ্ডাক্টর বলল, আজ্ঞে সেই কথাই বলতে এসেছি। মিঃ টিমস উইলিয়ামকে দুচারটে কথা শোনালো এবং বললেন–এধরনের কোনো বিজ্ঞাপন কেউ দেয়নি এবং পয়সাও এর জন্যেও দেয়নি- বা–তা ছাপেওনি, আমরা শুধু শুধু সময়ের অপব্যবহার করছি। তাতে আমি বললাম, বেশ তো, আপনি চলুন না, নিজের চোখেই দেখে নেবেন। যদি না থাকে তবে যাচ্ছেতাই বলতে পারেন।
তিনি বললেন, ঠিক আছে, তাই যাচ্ছি। তবে আমাদের সাথে তিনি যখন গেলেন তখন কোনো বিজ্ঞাপনই চোখে পড়লো না। হলুদের ওপর নীল অক্ষরে যেভাবে লেখা ঝাড়ন দিয়েও যা মোছা অসাধ্য তা অবশেষে উধাও মিঃ টিমস আমাকে তো যা নয় তাই বকাবকি করলেন।
তা, কি চাও তোমরা যে আমি মিঃ টিমস-এর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করি?
আজ্ঞে হ্যাঁ, অনুগ্রহ করে যদি তাই করেন তো আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো। সকল কোম্পানি অফিসে তাকে পাবেন।
মি. টিমস ডানিং-এর কথা বিশ্বাস করলেন আর কণ্ডাক্টর ও ড্রাইভারের বিরুদ্ধে কোনো রিপোর্ট তিনি করলেন না তবে রহস্য সেই রহস্যেই ঘেরা রইলো।
পরের দিন বিকেলে কিন্তু অপর একটা ঘটনা ঘটে যাওয়াতে ঘটনাটার উপর যবনিকা পড়ল না। ট্রেন ধরবে বলে ক্লাব থেকে হাঁটাপথ ধরলে ডানিং দেখলেন এক ব্যক্তি তার থেকে কিছু দূরে কিছু হ্যাণ্ডবিল বিলি করছে। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে হ্যাণ্ডবিল বিলি করছিল সে সেখানে খুব একটা ভিড় ছিল না, সেজন্যে তার হ্যাণ্ডবিল কেউ নেয়নি বলেই মিঃ ডানিং-এর মনে হলো। লোকটা কেটা হ্যাণ্ডবিল তার হাতে তুলে দিলো। লোকটার হাতের স্পর্শ ডানিং এর হাতে লাগতে তিনি চমকে উঠলেন, তার মনে হলো হাতটা যেরকম রুক্ষ সেইরকমই গরম,–ব্যাপারটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। প্রচুর ভাবনা চিন্তা করেও তিনি এর কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না। তিনি তাড়াতাড়ি হেঁটে চললেন এবং কাগজটার দিকে তার নজর পড়ে গেলো। কাগজটা নীল রংয়ের, তার ওপরে বড় বড় অক্ষরে ছাপা হ্যারিংটন চোখে পড়লো কথাটা তার। চমকে উঠে থেমে গেলেন। চশমা বের করবার উদ্দেশ্যে ঠিক সেই সময় আচম্বিতে তার পেছন দিক থেকে একজন এসে সেই জিনিষটা ছিনিয়ে নিয়ে চটজলদি চলে গেল। তার ফলে সেটা তিনি পেলেন না। কয়েক পা দৌড়লেন কিন্তু লোকটাকে কোথাও চোখে পড়লো না, এমনকি বিজ্ঞাপন বিলির লোকটাকেও আর দেখা গেলো না।
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের বাছাই পাণ্ডুলিপির ঘরে পরের দিনই ডানিং ৩৫৮৫ নং হার্লির এবং অন্যান্য কটি বইয়ের জন্য টিকিট কাটলেন। কিছুক্ষণ বাদে যখন বই এলো তিনি তখন সবচেয়ে জরুরি বইটা নিয়ে ডেস্কে বসার জন্যে উদ্যোগ করলেন। তক্ষুনি শুনতে পেলেন তিনি–কে যেন ফিসফিস করে তার নামটি ধরে ডাকলো। চকিতেই ফিরে তাকালেন। কিন্তু তার সব কাগজপত্র মাটিতে পড়ে গেলো। লাইব্রেরীর একজন কর্মচারীর ছাড়া তিনি পরিচিত কাউকেই দেখতে পেলেন না। তাঁকে দেখা মাত্র সে ইতিবাচক ভঙ্গীতে মাথা নাড়ল। তিনি কাগজগুলো তুলে নিলেন। ডানিং-এর মনে হলো সব কাগজই তোলা হয়ে গেছে এবং তিনি নিজস্ব কাজ করতে বসলেন। তৎক্ষণাৎ গাট্টাগোট্টা ধরনের ভদ্রলোক তার পেছনেই ছিলেন, তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, এটা ধরুন, এটাও আপনারই হবে। কথাটা বলেই একটা কাগজ ডানিং-এর হাতে তুলে দিলেন। ডানিং বললেন, ধন্যবাদ, এটা সত্যিই আমার। পরক্ষণেই ব্যক্তিটি ঘর থেকে চলে গেলেন।
বিকেলের কাজ শেষ হলে ডানিং লাইব্রেরীর একজন কর্মচারীর সঙ্গে টুকটাক কথা বললেন, এছাড়া সেই গাট্টাগোট্টা ব্যক্তিটির পরিচয় জানতে চাইলেন। তার প্রশ্নের জবাবে কর্মচারিটি জানান, ভদ্রলোকের নাম কার্সওয়েল, গত সপ্তাহে ভদ্রলোক অপরসায়ন সম্বন্ধে কারা বিশেষজ্ঞ জানতে চেয়েছিলেন এবং অবশ্যই উত্তরে দেশের অন্যতম একমাত্র বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনার নাম করেছিলাম। দেখা যাক তাকে ধরতে পারলে হয়, তিনি অবশ্যই আপনার সঙ্গে দেখা করতে ইচ্ছাপ্রকাশ করবে।
ডানিং বলেন, না না, মোটেই না–আরে আমি তো ওকেই বিশেষ ভাবে এড়িয়ে যেতে চাই যে।
ও ঠিক আছে। রোজই যে উনি এখানে আসেন তা নয়। আপনার সঙ্গে হয়তো তার দেখাও হবে না।
ডানিং-এর পক্ষে ঐদিনও উৎফুল্ল মনে বাড়িতে আসা সম্ভব হলো না। মানে আশঙ্কা হলো যে অন্যান্য সব মানুষদের সাথে কোনো না কোনো কারণে তার সদভাব আর নেই। তার একান্ত ইচ্ছে হলো ট্রেনে ও ট্রামে সবার সঙ্গে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসবে কিন্তু সে দুটোতেই সেরকম লোকজনের ভিড় না থাকায় তা সম্ভব হলো না। বাড়িতে এসেই তার ডাক্তার ডঃ ওয়াটসনকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। ডাক্তার বললেন, তোমার বাড়িতে ডানিং আমি বিপদ ডেকে এনেছি। দুজন দাসীকেই নার্সিংহোমে পাঠিয়েছি।