গৃহস্বামীর অভিমত, যা দেখা যাচ্ছে তাতে হয়তো-বা কার্সওয়েল বড় ধরনের অপরাধীতে রূপান্তরিত হবেন কোনদিন।
সম্পাদক মলাট বলেন, আচ্ছা তিনিই দশ বছর আগে কি ডাকিনীতন্ত্রের ইতিহাস গ্রন্থটি রচনা করেন।
হা। সেই বইখানি কেমন সমালোচিত হয়েছিল মনে আছে।
অবশ্যই আছে। এমনকি যে ব্যক্তি সবথেকে বেশি সমালোচনা করেছিলেন তিনি আমার পরিচিত, জন হ্যারিংটন। অবশ্যই মনে আছে তাকে।
ভালো রকমেই মনে পড়ে। অবশ্য পুলিশ যখন তদন্ত করছিল সেই সময়ে আমি তার সম্পর্কে কিছু শুনিনি বা তাকে চাক্ষুষ দেখিনি।
পুলিশী তদন্ত! সেকি? বিস্ময় বিমুগ্ধ ভাবে এক মহিলার জিজ্ঞাসা।
মানে, গাছের থেকে পড়ে তার ঘাড় ভেঙে যায়। এখানেই প্রশ্ন হলো, তিনি গাছে চড়েছিলেন কেন? ঘটনাটা ভীষণই রহস্যময়। ভদ্রলোক খেলোয়াড়ও নয় আবার তার মধ্যে পাগলামির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। সন্ধ্যের সময় একদিন তিনি গ্রাম্য পথে ধরে গৃহে ফিরছিলেন, কোথাও জনপ্রাণী নেই, অকস্মাৎ ভদ্রলোক দিশাহারা হয়ে দৌড় শুরু করলেন, হ্যাট, ছড়ি কোথায় হারিয়ে গেল। অবশেষে তিনি গাছে চড়ে বসলেন– সেই গাছে ওঠা সহজ কথা না। একটা মরা ডালে তিনি উঠে পড়েছিলেন সেইকারণেই ডালটা তাকে সহ নিচে ভেঙে পড়ে। পরের দিন সকালে যখন মানুষজন তার খোঁজ পায় তখন ভয়ে তার চোখমুখের কি অবস্থা হয়েছিল তা কল্পনা করা যায় না। বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, কোনোকিছু তাঁকে তাড়া করেছিল, বীভৎস কোনো কুকুরের দল হয়তো-বা কোনো পশুশালা থেকে পলাতক কোনো প্রাণী।
এর খানিক বাদে ডাকিনী বিদ্যার ইতিহাস-এর কথা উঠল। গৃহস্বামী প্রশ্ন করলেন, হ্যাঁ বইখানি দেখেছি বৈকি। এমনকি পড়েছি পর্যন্ত।
সত্যি সত্যি কি গ্রন্থটির দুর্নাম যেভাবে ছড়িয়ে আছে সেরকমই খারাপ?
বইটার লেখার স্টাইল ভীষণ খারাপ তাই সমালোচনা যা করা হয়েছে তা ঠিকই আছে। এছাড়াও গ্রন্থটি অশুভ প্রভাব একালটা। ভদ্রলোক বইটির সমস্ত কিছুর ওপর পুরোপুরি বিশ্বাসী ছিলেন তাছাড়া তিনি তার কথাই পরীক্ষা করে দেখেছেন।
আমি হ্যারিংটনের সমালোচনা পড়েছি এমনকি যদি আমি ঐ গ্রন্থটি লিখতাম তাহলে সারাজীবনের মতো লেখা ত্যাগ করতাম আর সারা জীবনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না।-আচ্ছা তাহলে ওঠা যাক। কাজ আছে, সাড়ে তিনটে বাজে।
আসার সময় সেক্রেটারির স্ত্রী বললেন, আশাকরি এই ভয়ঙ্কর মানুষটি কখনও জানবেও না যে তার লেখা নাকচ করার ব্যাপারে ডানিংই দায়ী।
আমিও এটাই আশাকরি। ডানিং অবশ্য নিজেই তা প্রকাশ করবেন না আর যেহেতু ঘটনাটা গোপন রাখার কথা তাই আমরা প্রকাশ করব না। অবশ্য ভয় শুধু; যদি কার্সওয়েল ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সন্ধান করে জেনে নেয়।
অপরসায়ন সম্পর্কে তিনি মধ্যে মধ্যে পাণ্ডুলিপির সাহায্য নেন। কিন্তু তাদেরকে ডানিং এর নাম না জানানোর কথাটা বলা যায় না, তবে আশা করা যেতে পারে ঘটনাটা অতটা যাবে না। কিন্তু কার্সওয়েল ভদ্রলোকটি খুবই বুদ্ধিমান।
যতটা লেখা হয়েছে এই অবধি সেটা ভূমিকা বলা যেতে পারে। ঐ সপ্তাহেই একদিন সন্ধ্যের সময় এডোয়ার্ড ডানিং ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে গবেষণার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন, বাড়িতে দুজন সুন্দরী মেয়ে আছে যারা বহুদিন ধরে ডানিং-এর সঙ্গে কাজ করছে। চলুন আমরাও তাঁর সঙ্গী হই।
তিনি তার বাড়ির দু-এক মাইল পর্যন্ত ট্রেনেই চলে গেলেন, পরে একটা ট্রামে চড়লেন যা তাঁর বাড়ির থেকে তিনশ গজ দূরত্বে। তিনি সারাদিন ধরে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। ট্রামের সামনে দিকের কাছে একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া ছিল–যা অল্প আলোয় তার পড়া অসম্ভব ছিল, কিন্তু বিজ্ঞাপনটা যে বিষয়ের ওপর তা নিয়ে তিনি সবসময় চিন্তা করতেন। কিন্তু গাড়ির দূরের কোণের একটা লেখা তার কাছে একেবারেই নতুন। হলুদের ওপর নীল অক্ষরের লেখা। লেখার একটা মাত্র নাম তিনি পড়তে পারলেন, জন হ্যারিংটন আর সম্ভবত একটা তারিখ তবে অতটা দূর থেকে তিনি আর কিছুই পড়তে পারলেন না, ট্রামের ভিড় হালকা হয়ে গেলে কৌতূহলবশতঃ এগিয়ে গিয়ে তিনি পড়লেন। দেখলেন অদ্ভুত ধরনের একটা বিজ্ঞাপন। লেখাটা হল : অ্যালব্রকের লরেল-এর জন্য হ্যারিংটন, এফ. এস.-এর স্মৃতিতে। মৃত্যু ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৮৮৯। তিন মাস সময় দেওয়া হলো।
গাড়ি থামলো কিন্তু ডানিং তখনও চিন্তায় মগ্ন। কণ্ডাক্টরের কথায় বাস্তবে ফিরে এলেন। বললেন, ঐ বিজ্ঞাপনটা দেখছিলাম–একটু অদ্ভুত নয় কি? আস্তে আস্তে কণ্ডাক্টরও পড়লো। এবং বলল, আরে এটা তো আগে কখনও দেখিনি। নিশ্চয় কেউ রসিকতা করে লিখেছে। কথাটা বলেই সে বিজ্ঞাপনটা মুছে ফেলার চেষ্টা করলো। কিন্তু সফল হলো না, জানালো, লেখাটা কাঁচের উপরেই। একই কথা ডানিং-এর মনে হয়েছিল। বললেন, এইসব বিজ্ঞাপনের দায়িত্বে কে আছে? খোঁজ করে দেখো তো–কথাগুলো আমি লিখে নিচ্ছি।
তখনই ড্রাইভার কণ্ডাক্টরকে ডেকে বলল, তাড়াতাড়ি কর জর্জ, সময় হয়ে গেছে।
ঠিক আছে, ঠিক আছে। এখানে একটা অদ্ভুত লেখা কাঁচের মধ্যে দেখবে এসো।
এগিয়ে আসে ড্রাইভার। প্রশ্ন করে, কাঁচে কী লেখা আছে? হ্যারিংটন? এই হ্যারিংটন কে? কী ব্যাপার?
জিজ্ঞাসা করছি এই বিজ্ঞাপনের জন্যে কে দায়ী। খোঁজখবর নিলে হয় এ নিয়ে।