বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠল হিউজি-কী বলছ তুমি?
ট্রেভর বলল–আমি বলতে চাই আজ সকালে আমার স্টুডিওতে যে ভিক্ষুকটিকে তুমি। দেখছিলে তিনি হচ্ছেন ব্যারন হাউসবার্ড। তিনি আমার খুব বড়ো বন্ধ, আমার সব ছবিই তিনি কেনেন; তার ওপরে একটা ভাগ কমিশন হিসাবে আমাকে তিনি দেন। মাসখানেক আগে ভিকের বেশে তাঁর একটা ছবি আঁকার কথা তিনি আমাকে বলেছিলেন। লাখপতির একটা খেয়াল বলতে পার। তাঁর ওই ছিন্ন পোশাকে তাঁকে বেশ চমৎকারই দেখাচ্ছিল, অথবা, বলতে পার আমারই দেওয়া ছিন্ন পোশাক। ওগুলো আমি সেপন থেকে সংগ্রহ করেছিলাম।
চিৎকার করে উঠল হিউজি–ব্যারন হাউসবার্ড! হায় ভগবান! তাঁকেই আমি একটা সভারেন দিযেছি?
এই বলেই হতাশায় সে চোরের উপরে ঢলে পড়ল।
চিৎকার করেই হো-হো হেসে উঠল ট্রেভরবল কী হে! তাঁকে দিয়ে সভারেন! ওটিকে তুমি আর দেখতে পাবে না। তাঁর কাডই অন্য মানুষের টাকা নিয়ে কারবার করা।
একটু বিমর্ষ হয়ে হিউজি বলল–একথা আমাকে তোমার আগেই বলা উচিত ছিল অ্যালেন। তাহলে এরকম বোকা বনতে হত না আমাকে।
ট্রেভর বলল–প্রথমত আমি জানতাম না এইভাবে বেপরোয়া তুমি অর্থনষ্ট করা একটি সুন্দরী মডেলকে তুমি চুমু খাও-এর অর্থআমি বুঝতে পারি; কিন্তু তাই বলে একটা কুৎসিত ভিক্ষুককে তুমি একটা সভারেন দান করবে! ছি ছি! তাছাড়া, আজকে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করুক তা আমি চাই নো তুমি আসার পরে হাউসবার্ড তাঁর নাম তোমার কাছে প্রকাশ করতে চান কিনা তাও আমি জানতাম না।
হিউজি বলল–আমাকে তিনি কী মনে করলেন বল তো?
কিছুই মনে করেননি। তুমি চলে যাওয়ার পরে তাঁকে বেশ স্ফুর্তি করতে দেখলাম। তিনি তোমার সম্বন্ধে এত কথা জানতে চাইলেন কেন তা আমি বুঝতে পারলাম না; কিন্তু এখন আমি সব বুঝতে পারছি। তিনি তোমার ওই সভারেলটি ব্যবসায় খাঁটিয়ে প্রতি দু’মাস অন্তুর তোমাকে তার সুদ দিয়ে যাবেন; আবার ডিনারের পরে এই নিয়ে বেশ মুখরোচক গল্প বলতে বসবেন।
হিউজি গড়গড় করে বলল–হা হতোস্মি! এখন সবচেয়ে বড়ো কাজ হচ্ছে বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া। কিন্তু ভাই, একথা তুমি যেন আর কাউকে বলো না। তাহলে আমি লজ্জায় একেবারে মারা যাব।
বোকা কোথাকার! পরোপকার করার সহ যে তোমার কত বড়ো এই থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। পালিযো না। আর একটা সিগারেট ধরাও। সিগারেট খেতে-খেতে লরার সম্বন্ধে যত ইচ্ছা বলে যাও।
কিন্তু হিউজিকে ধরে রাখা গেল না। ট্রেভর হো-হো করে হাসতে লাগল। তাকে সেই অবস্থায় হোটেলে ফেলে রেখে সে দুঃখিত মনে বাড়ি গেল।
পরের দিন সকালে সে ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসেছিল এমন সময় চাকর একটা কার্ড নিয়ে। হাজির হল। কার্ডের ওপরে চোখ বুলিয়ে সে বুঝতে পারল ব্যারন হাউসবার্ডের কাছ থেকে একটি ভদ্রলোক তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
সোনার চশমা পরা শ্বেত মস্তকের একটি বৃদ্ধ ভদ্রলোক তার ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন–আমি কি মুসিয়ে আর্কসিলের সঙ্গে কথা বলছি?
হিউজি তার মাথা নোযাল।
আমি ব্যারন হাউসবার্ডের কাছ থেকে এসেছি। ব্যারন…
হিউজিম আমতা আমতা করে বলল–আপনি দয়া করে ব্যারনকে বলবেন যে আমি অত্যন্ত দুঃখিত…
বৃদ্ধ ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন–ব্যারন আমাকে এই চিঠিটি দিযে আপনার কাছে। পাঠিযেছেন–এই বলে বন্ধ করা খামখানা তার দিকে এগিয়ে দিলেন।
খামের বাইরে লেখা ছিল–”একটি বৃদ্ধ ভিক্ষুকের কাছ থেকে হিউজি আকর্মিন আর লরা। মার্টনের বিবাহের যৌতুক”। ভেতরে ছিল দশ হাজার পাউন্ড-এর একটি চেক।
তাদের বিয়েতে অ্যালেন ট্রেভর-এরই জয়জয়কার; আর সেইখানে বক্তৃতা ব্যারন হাউসবার্জ। ট্রেভর অ্যালেন বলল–লাখপতি মডেল পাওয়া কষ্টকর। কিন্তু মডেল লাখপতি খুঁজে পাওয়া আরও কষ্টকর।
সুখী রাজকুমার
The Happy Prince
শহরের মাথা ছাড়িয়ে উঁচু বেদীর ওপরে সুখী রাজকুমারের প্রতিমূর্তি দাঁড় করানো ছিল। মূর্তিটার সারা গায়ে পাতলা সোনার পাত দিয়ে মোড়া। তার চোখ দুটি ছিল নীলকান্ত মণিরা তার তরোয়ালের বাঁটের ওপরে জ্বলজ্বল করছিল একটা বেশ বুড়ো লাল রঙ-এর রুবি।
সবাই এই মূর্তিটি দেখে খুব প্রশংসা করত। চারুশিল্পের সমঝদার হিসাবে নাম কিনতে চাইতেন এমন একজন শহরের কাউনসিলার বললেন–মূর্তিটা ঠিক বায়ু-নিশানের মতোই সুন্দর। পাছে লোকে তাঁকে অবাস্তব বলে মনে করে, আর অবাস্তব প্রকৃতির নুষ তিনি। সত্যিই ছিলেন না, এই ভযে তিনি যোগ করলেন–তবে ততটা প্রযোজনীয় নয়।
একটা বাচ্চা ছেলে চাঁদ ধরার জন্যে কাঁদছিল। তাকে তার বিজ্ঞ মা বললেন–তুমি সুখী রাজকুমারের মতো হতে পার না কেন? কোনো কিছু পাওয়ার জন্যে কান্নাকাটি তিনি করতেন না।
জীবনে হতাশ হয়েছে এইরকম কোনো মানুষ এই অদুত সন্দর মর্তিটির দিকে তাকিয়ে বলত–জগতে যে একজন মানুষও সুখী হতে পেরেছে এটা জেনে আমি আনন্দিত।
চকচকে পরিষ্কার পোশাক পরে গির্জা থেকে বেরিয়ে এসে ছেলেরা বলত–দেখতে একেবারে দেবদূতের মতো।
অঙ্কের শিক্ষক জিজ্ঞাসা করতেন–তোমরা কী করে জানলে? দেবদূত তো তোমরা কোনোদিন দেখনি?
ছেলেরা বলত–স্বপ্নে দেখেছি–
এই কথা শুনে গম্ভীর হয়ে শিক্ষক মশাই ভ্রু কুঞ্চিত করতেন; কারণ, ছেলেদের স্বপ্ন দেখাটা তিনি বেশ পছন্দ করতেন না।
একদিন রাত্রিতে একটা ছোটো দোয়েল পাখি শহরের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। প্রায় ছ’সপ্তাহ আগে তার বন্ধুরা ইজিপ্টে উড়ে গিয়েছে। কিন্তু সে পেছনে পড়েছিল। তার কারণ, সে একটি সুন্দর শরগাছের সঙ্গে প্রেমে পড়েছিল। বেশ বড়ো একটা বেগনে প্রজাপতির পেছনে ধাওয়া করার উদ্দেশ্যে সে একদিন যখন নদীর জলের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল এমন সময় একটি প্রথম বসন্তে তার সঙ্গে শরগাছটির দেখা হয়। শরগাছের সরু কোমর দেখে সে এতই মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল যে তার সঙ্গে আলাপ করার জন্যে সে থেমে গেল।