হোটেলে ঢুকতেই হোটেলের মালিক একখানা টেলিগ্রাম নিয়ে এগিয়ে এল। লর্ড আর্থার টেলিগ্রামটি তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দেখলেন তাঁর পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে। সতেরোই রাত্রিতে লেডি ক্লেমেন্টিনা হঠাৎ মারা গিয়েছেন।
প্রথমেই যাঁর কথা তাঁর মনে হল তিনি হচ্ছেন সাইবিল। তিনি তাঁকে একটা টেলিগ্রাম করে দিলেন যে এখনই তিনি লন্ডনে ফিরে আসছেন। তাড়াতাড়ি জিনিসপত্র গোছানোর জন্যে নির্দেশ দিলেন চাকরকে। তারপরে হোটেলে ফিরে এসেই দেখলেন তিনটি চিঠি তাঁর জন্যে অপেক্ষা করছে একটি এসেছে সাইবিলের কাছ থেকে। চিঠিটিতে রয়েছে সহানুভূতি আর শোক প্রকাশ। দ্বিতীয়টি এসেছে মায়ের কাছ থেকে তৃতীয়টি এসেছে লেডি ক্লেমেন্টিনার সলিসিটরের কাছ থেকে চিঠিটি পড়ে বোঝা গেল ভদ্রমহিলা সেদিন ডাচেসের সঙ্গে ডিনার খেয়েছেন। তাঁকে সেদিন বেশ প্রফুল্লই দেখা যায়; কিন্তু বুকে ব্যথা লাগছে এই বলে একটু তাড়াতাড়িই তিনি বাড়ি ফিরে যান। পরের দিন সকালে বিছানার ওপরে মৃত অবস্থায় তাঁকে দেখা যায়। মনে হচ্ছে মৃত্যুর সময় কোনো যন্ত্রণাই তিনি ভোগ করেননি। স্যার ম্যাথু বিড়কে তখনই ডেকে পাঠানো হয়। তবে তখন আর করার কিছু ছিল না। বাইশ তারিখে বিক্যাম্প। ক্যালকোটিতে তাঁকে কবরস্থ করা হবে। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি একটি উইল করেছেন। সেই উইলে তিনি আর্থারকে তাঁর কার্ডন স্ট্রিটের বাড়ি-আসবাবপত্র, ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, ছবি-সবই দিয়ে গিয়েছেন। কেবল ছোটো ছোটো কতগুলি ছবি দিয়েছেন তাঁর বোনকে; আর পদ্মরাগমণির হারটা দিয়ে গিয়েছেন সাইবিলকে। সম্পত্তির মূল্য এমন কিছু বেশি ছিল না। তবে সম্ভব হলে লর্ড আর্থার যাতে অনতিবিলম্বে ফিরে আসেন সেই জন্যে সলিসিটর মিঃ স্যালফিলড বিশেষ উদ্বিগ্ন রয়েছেন। কারণ অনেকগুলি পাওনাদারদের টাকা মেটাতে হবে; আর লেডি ক্লেমেন্টিনা কোনোদিনই বিশেষ হিসাবপত্র রাখতেন না।
লেডি ক্লেমেন্টিনা যে তাঁকে মনে রেখেছেন এই কথা ভেবে তিনি বেশ অভিভূত হয়েই পড়লেন। তাঁর মনে হল এই মৃত্যুর জন্যে মিঃ পডগারসকে কৈফিয়ৎ দিতে হবে। কিন্তু সাইবিলের ওপরে ভালোবাসা তাঁর অন্য সব অনুভূতিগুলিকে ছাপিয়ে গেল এবং তিনি যে তাঁর কর্তব্য করেছেন এই ভেবে তিনি একটা শান্তি আর আত্মপ্রসাদত লাভ করলেন। তিনি যখন চারিংক্ৰশে হাজির হলেন তখন তাঁকে বেশ খুশি খুশি দেখা গেল।
মার্টনরা তাঁকে বেশ হৃদ্যতার সঙ্গেই অভ্যর্থনা জানালেন। সাইবিল তাঁকে প্রতিজ্ঞা করালেন যে তার কিছুই তাঁদের বিয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। সাতই জুন বিয়ের দিন ঠিক হল। হঠাৎ তাঁর মনে হল জীবনটা বড়ো সুন্দর, বড়ো উজ্জ্বল। পুরনো আনন্দ আবার ফিরে এল তাঁর জীবনে।
এরই মধ্যে একদিন সলিসিটর আর সাইবিলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কার্ডন স্ট্রিটের বাড়িতে হাজির হলেন। তারপরে সেখানে কাগজপত্র ঘাঁটতে লাগলেন। ঠিক এমনি সময় সাইবিল আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন।
মুখ তুলে হেসে লর্ড আর্থার জিজ্ঞাসা করলেন-ব্যাপার কী সাইবিল!
সাইবিল বলল–আর্থার, এই ছোটো চকোলেটের বাক্সটা কী সুন্দর দেখা এটা আমাকে দাও। আমি জানি আশি বছর বয়স হওয়ার আগে পদ্মরাগমণি আমাকে মানাবে না।
এটা সেই বাক্স যার ভেতরে অ্যাকোনিটিন ছিল।
চমকে উঠলেন লর্ড আর্থার। গালের ওপরে লজ্জার সামান্য একটা আভাও দেখা গেল। এসব কথা তিনি একেবারে ভুলেই গিয়েছিলেন, আর যার জন্যে তিনি সেই ভয়ঙ্কর অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছিলেন–এমনই ভাগ্যের পরিহাস যে–সেই সাইবিল-ই সেই কথাটা তাঁকে প্রথণ স্মরণ করিয়ে দিল।
বেশ তো, নাও না। লেডি ক্লেমকে আমিই এটা দিয়েছিলাম।
ধন্যবাদ আর্থার। চিনির মেঠাইটাও নিই? লেডি ক্লেম যে মিষ্টি এত ভালোবাসতেন তা আমি জানতাম না। আমার ধারণা ছিল তিনি একটু বেশি মাত্রায় বুদ্ধিজীবিনী ছিলেন।
হঠাৎ কেমন ভয়ঙ্কর রকমের বিবর্ণ হয়ে গেলেন লর্ড আর্থার, কী বললে-চিনির মেঠাই?
হা এর ভেতরে একটা রয়েছে দেখছি। বেশ পরনো বলেই মনে হচ্ছে এটা খাবার এতটক ইচ্ছেও অবশ্য আমার নেই। তোমার কী হল, আর্থার? অত ফ্যাকাশে হয়ে গেলে কেন?
দৌড়ে গিয়ে লর্ড আর্থার বাক্সটা তুলে নিলেন। তার ভেতরে বিষভরা সেই ক্যাপসুল। সেটাকে তিনি আগুনের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে হতাশভাবে চিৎকার করে সোফার ওপরে বসে পড়লেন।
.
০৫.
বিয়েটা দ্বিতীয়বার স্থগিত হওয়ার ফলে মিঃ মার্টন খুবই দুঃখিত হলেন। লেডি জুলিয়া মেয়ের বিয়েকে উপলক্ষ করে নিজের জন্যে পোশাক তৈরি করতে দিয়েছিলেন। বিয়েটা সাময়িকভাবে বন্ধ হল দেখে এ-বিয়ে ভেঙে দেওয়ার জন্যে মেয়েরে তিনি অনেক বোঝালেন। সাইবিল মাকে ভালোবাসতেন সত্যি কথা; কিন্তু আর্থারের কাছেই তিনি তাঁর জীবন-যৌবন সমর্পণ করেছিলেন। সুতরাং মায়ের প্রস্তাবে তিনি রাজি হলেন না। আর লর্ড আর্থার! দিল। কয়েক এই অভাবনীয় কাণ্ডে তাঁর স্নায়ুগুলি একেবারে বিকল হয়ে গেল। তারপরেই কিন্তু তাঁর অদ্ভুত কমনসেনস অথবা বাস্তব জ্ঞনটি ফিরে এল। এবং কী করতে হবে সেদিক থেকে কোনোরকম সন্দেহ রইল না তাঁল, বিষ ব্যর্থ হওয়ায় এখন তাঁকে ডিনামাইট অথবা অন্য কোনো বিস্ফোরক বস্তুর সাহায্য নিতে হবে।