আমার দিকে চেয়ে রইল নার্স।
রেকর্ডের লোককে এক্স-রেতে দরকার? এমন কথা কখনও শুনিনি। কেন দরকার?
জানি না। হয়তো এক্স-রের রেকর্ড নেয়ার জন্যে কাউকে তাদের দরকার, বললাম, নিজেও জানি না কী বলছি।
মহিলা মুহূর্তের জন্য ভ্রূ কুঁচকে শ্রাগ করল। রিসিভার তুলে ডায়াল করল কোন নম্বরে।
হ্যালো, মিস্টার বিন? ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে বলছি। আপনাকে এক্সরেতে ডেকেছে। জানি না কেন। মনে হয় গেলেই জানতে পারবেন।
রিসিভার রেখে দিল সে। চারপাশে চোখ বুলিয়ে আমাকে খুঁজল। কিন্তু আমাকে পাবে কোথায়। আমি তখন এলিভেটরে চড়ে পাঁচতলার দিকে উঠে যাচ্ছি।
রেকর্ড রুমের দরজায় তালা মারা নেই, কাজেই ভিতরে ঢুকতে কষ্ট হলো না।
আমার জানা নেই কতক্ষণ সময় পাব। ডিরেক্টরীতে দেখেছি সাততলায় এক্স-রে। বিন এলিভেটরে করে ওখানে যাবে, কাউকে জিজ্ঞেস করবে কে ডেকেছে, জানবে কেউ ডাকেনি, এবং তারপর এলিভেটরে করে নেমে আসবে।
বড়জোর তিন কি চার মিনিট সময় পাব, উপলব্ধি করলাম।
বিনকে রেকর্ডস রুম ত্যাগ করতে দেখে এক দরজার আড়াল নিলাম।
এলিভেটরের জন্য অপেক্ষা করল বিন। সে ভিতরে ঢুকতেই, আমি রেকর্ডস রুমে সেঁধিয়ে পড়লাম। বিনের ডেস্কের পাশ দিয়ে গেলাম। ফাইল ক্যাবিনেটগুলো বছরওয়ারি সাজানো। আমার জন্মসাল খুঁজে নিতে কয়েক সেকেণ্ড মাত্র লাগল। ফাইল হ্যাণ্ডল ধরে টানলাম। খুলল না!
ক্যাবিনেটে এক কি-হোল দেখতে পেলাম। চাবি দরকার! চারধারে নজর বুলিয়ে নিলাম, দস্তুরমত হাঁফাচ্ছি। চাবি, চাবি চাই। চাবি কোথায়? নিশ্চয়ই বিনের কাছে আছে!
ওর ডেস্কের কাছে ফিরে গেলাম। ডেস্কের ড্রয়ারে কয়েকটা কিচেইন। প্রথমটা খপ করে চেপে ধরলাম। প্রতিটা চাবিতে একটা করে বছর।
বুক ধড়ফড় করছে, চাবি হাতড়াতে লাগলাম। অল্প-অল্প কাঁপছে আঙুল। এক ফোঁটা ঘাম টপ করে পড়ল শার্টে। আমার জন্মসাল পাওয়া গেছে! ঘুরেই এক দৌড়ে ফিরে এলাম পিছনের কামরায়।
জ্ঞান হারানো চলবে না-অনুভব করলাম আমি দুবেলা খাইনি-সুটে ঢুকিয়ে দিলাম চাবিটা। ঘুরালাম। ফাইলটা খুলে গেল।
অক্ষর অনুযায়ী সাজানো হয়েছে রেকর্ডগুলো। ঝটপট ফাইলের মাঝখানে চলে গেলাম, খুঁজে পেলাম কে, কিশোর পাব যেখানে।
সামনে একটা শব্দ হলো! গলার কাছে উঠে এল যেন হৃৎপিণ্ড। বিন কি এত তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে? ধীরে ধীরে মাথা ঘুরিয়ে চাইলাম। ডাক্তাররা হলওয়েতে কথা বলার জন্য থেমেছিলেন। এবার আবার হাঁটা ধরেছেন। চেপে রাখা খাসটা ছেড়ে, ফাইলে ফের মন দিলাম।
হুড়োহুড়ি করে কে অক্ষরটা দেখে নিলাম। প্রতিটা ফাইলে বাবামার নাম, এবং শিশুর নাম, ওজন, লিঙ্গ এবং জন্মের সময় দেয়া রয়েছে।
আমার ফাইলটা এখুনি দেখতে পাব। আপন মনে কথা বলতে লাগলাম।
কেনি… কেভিন…কেনেথ…
আমার নাম কোথায়? আবারও প্রথম থেকে দেখলাম। হাত কাঁপছে এখন। বিন যে কোন মুহূর্তে ফিরে আসবে। আমাকে আমার ফাইল খুঁজে পেতে হবে। এবং ওটা এখানেই থাকবে, হাসপাতাল বার্থ রেকর্ড হারিয়ে ফেলে না।
কে অক্ষরের আদ্যোপান্ত আবারও দেখে নিলাম। কোন কিশোরের নাম নেই। কিন্তু আমার তো এই হাসপাতালে জন্ম! রেকর্ড
এখানে থাকতেই হবে। নেই কেন?
তুমি যা খুঁজছ তা মনে হয় এক্স-রেতে পাবে,বলল একটি কণ্ঠ।
মুখ তুলে চাইলাম। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বিন। আমার দিকে হেঁটে আসছে।
৭
দ্রুত চিন্তা করতে হবে। বিন কমবয়সী এবং চটপটে ধরনের। এবং নিঃসন্দেহে আমার চাইতে শক্তিশালী।
ফাইল চাবিগুলো তুলে ধরলাম।
বিন, এগুলো ধরুন! চেঁচিয়ে উঠলাম। চাবিগুলো হঠাৎই ছুঁড়ে দিলাম ভােলা এক জানালা লক্ষ্য করে।
না! চিৎকার ছাড়ল বিন। জোরে চুঁড়িনি, এমনভাবে ছুঁড়েছি বিন যাতে জানালা দিয়ে পড়ে যাওয়ার আগেই লুফে নিতে পারে।
বিন চাবিগুলো ধরার জন্য ঝাপ দিতেই, ডেস্কের উপর দিয়ে লাফিয়ে এক দৌড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলাম আমি। আমি জানি মুহূর্তের মধ্যেই নীচে ফোন করে ওদেরকে সতর্ক করে দেবে সে, জানাবে আমি কী করেছি।
কারও চোখে ধরা না পড়ে হাসপাতাল ত্যাগ করতে হবে আমাকে। হলের ওপাশে একটা সাপ্লাই ক্লজিট দেখতে পেলাম। দরজা খুলতেই ভিতরে অ্যাটেনডেন্টের সাদা উর্দি চোখে পড়ল। ওটা হুক থেকে তুলে নিয়ে পরে ফেললাম।
এলিভেটরে চেপে নেমে এলাম মেইন ফ্লোরে, বেরিয়ে আসার পর মেইন ডেস্কের পাশে লোকজনের ছোটাছুটি লক্ষ করলাম। নার্স লরি কথা বলছে সার্জেন্ট কলিরে সঙ্গে।
ও টীনএজার, কালো চুল, কালো চোখ, পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি মত লম্বা, আমি তাকে বলতে শুনলাম। আমার বর্ণনা দিচ্ছে কলিন্সের কাছে।
কলিন্সকে মাথা ঝাকাতে দেখলাম। তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে চিহ্নিত করার আগেই এক্সিটের দিকে দ্রুতপায়ে এগোলাম আমি। একটা পত্রিকা তুলে নিয়ে খুলে মুখের কাছে ধরলাম, আমার মুখ যাতে লোকেরা দেখতে না পায়।
এবার সদর দরজা দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে এলাম। মেইন স্ট্রীটে পৌঁছনোর পর উর্দি খুলে ফেললাম। ওটা আর পত্রিকাটা ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ফ্রন্ট লনে। তারপর শশব্যস্ত রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম।
এখন কোথায় যাব? হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এসেছি আমি, কিন্তু আমার সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। হাসপাতালে আমার জন্ম রেকর্ড নেই কেন? চাচা-চাচী কি এত বছর ধরে আমাকে মিথ্যে বলে এসেছে? আমি কি অন্য কোথাও জন্মেছিলাম? যদি তাই হয়, তা হলে আমাকে বলেনি কেন?