ভিতরে ঢুকলাম। মি. জেসাপ কাউন্টারের পিছনে বসা। চোখে চশমা। কোলের উপর সকালের খবরের কাগজ।
মুখ তুলে আমার দিকে চেয়ে হাসলেন।
হ্যালো, ইয়াং ফেলো, বললেন। এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। উনি সব সময়ই এটা বলেন।
আমরা পরস্পরের দিকে চেয়ে রইলাম। পেটের ভিতরে কেমন জানি গুলিয়ে উঠল। উনি আমাকে চেনেন না! আমার ইচ্ছে হলো এক দোকান প্রায় ফাঁকা কিতে ভিতরে এগোলাম। এটা দৌড়ে দোকান থেকে বেরিয়ে, মেইন স্ট্রীট ধরে ছুটতে ছুটতে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি: বন্ধ করুন.এসব। আপনারা আমাকে এভাবে। কষ্ট দিচ্ছেন কেন?
যেটা সব সময় নাও সেটাই নেবে তো? চওড়া, বন্ধুত্বপূর্ণ হেসে প্রশ্ন করলেন।
মনটা খুশি হয়ে উঠল। উনি আমাকে চেনেন! ওরা মি. জেসাপকে নিজেদের ষড়যন্ত্রে জড়াতে পারেনি। দ্রলোক সাধারণ এক ক্যারি দোকানদার, কিন্তু আমাকে তিনি সাহায্য করতে পারবেন। আমাকে উনি চেনেন!
হ্যাঁ, মিস্টার জেসাপ, যেটা সব সময় নিই, বলে পকেটে হাত ভরে দিলাম পঞ্চাশ সেন্টের জন্য।
দিচ্ছি, বললেন তিনি। তার আগে বলো সবসময় কোটা নাও।
জমে গেলাম আমি। উনি আমাকে চেনেন না! ঘুরেই দৌড় দিলাম।
৬
হাসপাতালে পৌঁছনোর আগ পর্যন্ত ছুটে চললাম আমি। এখানে কয়েকটা এন্ট্রান্স। একটায় লেখা: ইমার্জেন্সি। অনুভব করলাম এটাও একটা ইমার্জেন্সি, কিন্তু জানি এখন মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে।
মেইন এন্ট্রান্স দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। ওয়েটিং এরিয়ায় বেশ কিছু মানুষ-জন বসা। জনাকয় ডাক্তার আর নার্স চলাফেরা করছে। ইনফর্মেশন ডেস্ক দেখে এগিয়ে গেলাম।
এক ইউনিফর্ম পরা নার্স বইতে কী সব টুকছে।
মাফ করবেন, বললাম। রেকর্ড ডিপার্টমেন্টটা কোথায় বলতে পারেন?
পাঁচতলায়, ডান দিকে এলিভেটর, আমার দিকে মুখ তুলে চেয়ে বলল।
এলিভেটরের জন্য অপেক্ষা করছি, নানা চিন্তা ঘুরতে লাগল মাথার মধ্যে।
এলিভেটরের দরজা খুলে গেল। মুখোমুখি পড়ে গেলাম সার্জেন্ট কলিন্সের। এক লোককে সাহায্য করছেন তিনি। লোকটির বাহুতে কাস্ট করা।
আপনাকে ধন্যবাদ, সার্জেন্ট, লোকটি বলল। আপনি না থাকলে কে আমাকে হাসপাতালে আনত আর ওই ছিনতাইকারীগুলোকে শায়েস্তা করত!
এটাই তো আমাদের কাজ, মিস্টার লেন, আইনকে উপরে তুলে ধরা, কলিন্স জবাবে বললেন। লোকটিকে কথাগুলো বললেও পুরোটা সময় তার দৃষ্টি স্থির রইল আমার উপরে।
মাফ করবেন, বলে, তার পাশ ঘেঁষে এলিভেটরে উঠলাম।
শরীর খারাপ? কলিন্স আমাকে প্রশ্ন করলেন। এলিভেটর থেকে ঝটপট বেরিয়ে গেলেন।
না, ঠাণ্ডা স্বরে জবাব দিলাম। এক অসুস্থ বন্ধুকে দেখতে এসেছি।
কলিন্স একদৃষ্টে চেয়ে রইলেন আমার দিকে।
চব্বিশ ঘণ্টা, বললেন তিনি। এলিভেটরের দরজা লেগে গেল। এলিভেটর পাচতলায় উঠে এলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। রকি বীচ পুলিস ডিপার্টমেন্টকে আমি বন্ধু মনে করতাম। নিজেকে অপরাধী ভাবতে ভাল লাগছে না!
দরজা খুলে গেল। বেরিয়ে এলাম আমি। চারধারে নজর বুলালাম। বড্ড চুপচাপ এখানে। লম্বা হলগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আর উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। দেয়ালে এক ডিরেক্টরি দেখলাম।
ওতে নির্দেশ করছে হাসপাতাল রেকর্ড, রুম ৪৩৬। কামরাটা খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত হেঁটে চললাম। বন্ধ এক দরজা দেখলাম। নক করতেই ভিতর থেকে শোনা গেল, কাম ইন।
প্রবেশ করলাম। কাউন্টার ডেস্কের পিছনে সাদা কোট পরা এক লোক বসা।
বিরক্তির ছাপ তার চোখে-মুখে। এক স্পোর্টস ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছে।
হ্যাঁ, তোমার জন্যে কী করতে পারি? প্রশ্ন করল।
আমি কিছু রেকর্ড খুঁজছি, বললাম।
কী ধরনের রেকর্ড?
উম, বার্থ রেকর্ড।
কার? প্রশ্ন করল। এই প্রথম তাকে আগ্রহী মনে হলো। আমার অস্বস্তি লাগছে, কেননা লোকটা গভীর মনোযোগে আমাকে দেখছে।
আমার নিজের, বললাম। আমি আমার বার্থ রেকর্ড জানতে চাই। এই হাসপাতালে আমার জন্ম।
আমার নাম এবং জন্মতারিখ বললাম।
ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই, বলল লোকটা।
স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। ভয় হচ্ছিল কোন সমস্যা হবে।
দেখানো যাবে,যোগ করল লোকটা। একুশ বছরের বেশি বয়সী কাউকে নিয়ে এসো আমরা তোমার ফাইল দেখিয়ে দেব। পত্রিকার পাতায় আবারও ডুব দিল সে।
কী? বলে উঠলাম, কেন?
কারণ এটা স্টেট ল, জানাল লোকটা। একুশ বছরের কম বয়সী কেউ অফিশিয়াল বার্থ রেকর্ড দেখতে কিংবা কপি করতে পারে না। কথা শেষ।
লোকটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। লোকটা অহঙ্কারী এবং রূঢ়, এ দুটো স্বভাবই অপছন্দ করি আমি। কিন্তু তারচাইতেও বড় কথা ও আমাকে তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।
ওর নেম ট্যাগ দেখলাম।
বিন, জে, পড়লাম।
আপনার সাহায্যের জন্যে ধন্যবাদ, বললাম। বিন ঘোত করে উঠল। আমার দিকে তাকাল না পর্যন্ত।
আমি ঘুরে দাঁড়িয়ে ঘর ছাড়লাম। এলিভেটরে চড়ে নেমে এলাম রিসেপশন ডেস্কে। অন্য এক নার্স এখন ডিউটিতে। আত্মবিশ্বাসী অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করলাম মুখের চেহারায়। ভিতরে ভিতরে পাতার মতন কাপছি।
মাফ করবেন, বললাম।
ইয়েস, মহিলা বলে আমার দিকে চাইল।
আপনাদের রেকর্ড সেকশনে মিস্টার বিন নামে একজন আছে, তাই না?
এক মিনিট, বলে কম্পিউটার অন করল মহিলা, কটা বাটন টিপে পর্দায় চোখ রাখল। হ্যাঁ, জেমস বিন। রেকর্ডস, পাঁচ তলা। কেন?
এক ডাক্তার আপনাকে বলতে বললেন তাকে এখুনি এক্স-রে রূমে দরকার।