আমার জন্য নিশ্চয়ই সবার খারাপ লাগবে। ফলে কেউ আর তামাশা করবে না। আমি নিশ্চিত চাচা-চাচী আর ডন আমার জন্য উদ্বেগ বোধ করছে।
এসব ভেবে মনটা একটু ভাল হলো। প্যান্টের ধুলো ঝেড়ে স্কুলের দিকে রওনা হলাম।
কিশোর পাশা! পিছন থেকে কে যেন ডাকল।
আগে কখনও নিজের নামটা এত মধুর শোনায়নি আমার কানে! দুঃস্বপ্নটা তারমানে কেটে গেছে। সব কিছু আবার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঘুরে দাঁড়ালাম কে ডেকেছে দেখার জন্য।
আমার পুলিস ডিপার্টমেন্টের বন্ধু, সার্জেন্ট কলিন্স। স্কুটারে চেপে আমার পিছনে এসে থেমেছে।
হাই, সার্জেন্ট কল–শুরু করতে গেছিলাম, কিন্তু উনি ত্বরিত আমাকে থামিয়ে দিলেন।
গাছে হাত দিয়ে দাঁড়াও। একদম নড়বে না! গর্জে উঠলেন তিনি। এবং হঠাত্র আমি আমার অসহায় বিভ্রান্তির মধ্যে ফিরে এলাম।
৫
সার্জেন্ট কলিন্স যখন নিশ্চিত হলেন আমার কাছে বিপজ্জনক কোন অস্ত্র নেই, তখন আমাকে ঘুরিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড় করালেন।
সার্জেন্ট কলিন্স, এমন করছেন কেন? প্রশ্ন করলাম।
আমার দিকে চাইলেন তিনি।
তুমি আমার নাম জানলে কীভাবে?
একদৃষ্টে তাঁর দিকে চেয়ে রইলাম। ওঁর নাম জানলাম কীভাবে!
গত টার্মে আমরা একসাথে স্টুডেন্ট সেফটি ক্যামপেইনে কাজ করেছি। সার্জেন্ট, আমি কিশোর পাশা। একটু আগেই আপনি আমাকে নাম ধরে ডেকেছেন!
নাম ধরে ডেকেছি কারণ তোমার সাথে এক ছেলের বর্ণনা মিলে যাচ্ছে। আজ সকালে রকি বীচ স্কুলে গিয়ে অদ্ভুত আচরণ করে এসেছে সে।
বর্ণনা মিলে যাচ্ছে? মিলবেই, কারণ ওটাই আমি। আর আমি মোটই অদ্ভুত আচরণ করিনি, করেছে অন্যরা!
তাই বুঝি? বললেন কলিন্স। তুমি বলছ আমরা স্কুল সেফটি প্রোগ্রামে একসাথে কাজ করেছি? সত্যি কথাটা হচ্ছে আমি এই একটু আগে প্রথম তোমাকে দেখলাম। এর আগে জীবনেও দেখিনি।
হাঁটুজোড়া কাঁপতে লাগল আমার। বিশ্বাস হচ্ছে না এমনকী পুলিসও এর সঙ্গে জড়িত!
সার্জেন্ট কলিন্স, আস্তে আস্তে বললাম। প্রোগ্রামে ছিল বাইক চালানোর সময় ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে কিছু সেফটি রুল মেনে চলে। রাস্তা পার হওয়ার সময়, কিংবা অচেনা লোকের সাথে কথা বলার সময়। এবার মনে পড়েছে?
হ্যাঁ, প্রোগ্রামটা এমনই ছিল। কিন্তু প্রোগ্রামে আমাকে সাহায্য করেছিল মুসা আমান আর জোয়ান জেনসেন।
মুসা আমান কখনোই এটার সাথে ছিল না! প্রায় আর্তচিঙ্কার ছাড়লাম। জোয়ান আর আমি আপনার সাথে কাজ করেছি।
কলিন্স চোখ সরু করে আমার দিকে চেয়ে রইলেন।
তোমার কোন আইডেন্টিফিকেশন আছে?
নেই। আমি স্কুলে কখনও ওয়ালেট নিয়ে যাই না, নিই শুধু বইয়ের ব্যাগ আর লাঞ্চের টাকা। আর আজকে তো এমনকী বইয়ের ব্যাগও নেই!
সঙ্গে নেই, তবে বাসায় আছে।
হ্যাঁ, মিসেস পোর্টার বলেছেন তোমার বাসার ঠিকানা। ওখানে পাশা পরিবার থাকে, কিন্তু কিশোর নামে কাউকে তারা চেনে না।
রাশেদ পাশা আমার চাচা, আর মেরি পাশা চাচী।
দেখো, ছেলে, তুমি কোন আইন ভাঙনি। তাই আমি তোমাকে ধরছি না, কলিন্স বাধা দিয়ে বললেন, ধৈর্য হারাচ্ছেন পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাকে সাবধান করছি। তোমার কোন আইডি নেই, অস্তিত্ব নেই এমন একজন বলে নিজেকে দাবি করছ, এবং তোমার ব্যাপারে রিপোর্ট এসেছে তুমি পাবলিক নুইসেন্স, বললেন তিনি। কাজেই পরিষ্কার করে একটা কথা বলে দিই। তোমাকে যদি চব্বিশ ঘণ্টা পর রকি বীচে দেখি, তা হলে তোমার প্রমাণ করতে হবে তুমি কে। বোঝা গেছে?
জি; সার, গোমড়া মুখে বললাম। এরচেয়ে অসহায় আর কখনও লাগেনি।
ভাল, বললেন তিনি। কথাটা মনে থাকে যেন। আমার কিন্তু মনে থাকবে।
ঘুরে দাঁড়িয়ে থপথপ করে স্কুটারের কাছে ফিরে গেলেন। কমুহূর্তের মধ্যেই মেইন স্ট্রীটের দিকে রওনা হলেন।
কলিন্সের অপসৃয়মাণ দেহের দিকে চেয়ে রইলাম। এখন কী করব আমি? এটা কি সম্ভব…যে কোনভাবে…আজ সকালে জেগে ওঠার পর থেকে…মিস লি যা বলেছিলেন আমাকে? আমি এক নতুন মানুষ?
এমন কিছু কি ঘটতে পারে?! অসম্ভব। আমি রকি বীচের কিশোর পাশা। সার্জেন্ট কলিন্স কিংবা অন্য কেউ যদি আমার আইডেন্টিফিকেশন দেখতে চায়, আমি জানি কোথায় পাওয়া যাবে। রকি বীচ জেনারেল হাসপাতালে, আমার যেখানে জন্ম, এবং যেখানে আমার বার্থ রেকর্ড রয়েছে।
শশব্যস্তে গাছ-পালা ভেদ করে ফিরে চললাম। শীঘ্রি বেরিয়ে এলাম মেইন স্ট্রীটে। হাসপাতালটা তিন ব্লক পরে।
ঘড়ি দেখলাম। প্রায় দুপুর। আমি একটার মধ্যে আমার পরিচয়ের প্রমাণ দিতে পারব, এই ফালতু তামাশাটার ইতি টেনে, শেষ কটা ক্লাস করে, সাড়ে তিনটায় ফুটবল প্র্যাকটিসে ঠিকই যোগ দিতে পারব।
মেইন স্ট্রীট ধরে সাবধানে হাঁটছি। কারও সন্দেহ জাগাতে চাই। কিছু ক্রেতা বেরিয়েছে। বেশিরভাগই মহিলা এবং বাকিরা রকি বীচের বয়স্ক বাসিন্দা।
বয়স্ক বাসিন্দা! মি. জেসাপের কথা মনে পড়ল। কোনার দিকে তার দোকান। ওখান থেকে আমি প্রায় প্রতিদিন ক্যাণ্ডি কিনি।
উনি আমাদের নাম জানেন না, কিন্তু কে কোন্ ক্যাণ্ডি খাই তা জানেন। তাকে বলে দিতে হয় না। ভিতরে ঢুকলেই কাউন্টারে পছন্দের ক্যাণ্ডি রেখে দেন। উনি জানেন আমার পছন্দ চকোলেটে মোড়া রেইসিন। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন তাঁর কাছ থেকে এগুলো কিনি।
জেসাপের ক্যাণ্ডি স্টোরের দিকে এগোলাম। এটা হাসপাতালের এক ব্লক আগে। চকিতে ভিতরে উঁকি দিলাম। দিনের এসময়টায় দোকান প্রায় ফাঁকা।