আমার নাম কিশোর পাশা, মিসেস ফিশার। মিসেস ফিশার ডেস্কে বসলেন, কিছু কাগজ-পত্র পরীক্ষা করলেন তিনি। এবার মুখ তুলে আমার দিকে চাইলেন।
এই হোমরুমে নতুন কোন স্টুডেন্ট নেয়া হয়েছে এমন কোন ননাটিশ দেয়নি হেড অফিস। তুমি বরং মেইন ফ্লোরে গিয়ে ব্যাপারটা তাদেরকে চেক করে দেখতে বলল, বললেন মিসেস ফিশার।
ইয়েস, ম্যাম, বললাম। দরজার দিকে এগোলাম। রব মিশেলের পাশ কাটাতে হলো। সামনের দিকে বসা সে। আমাদের ফুটবল টিমের সেন্টার। আজকে প্র্যাকটিসে দেখা হবে, রব, বললাম। রব এমনভাবে আমার দিকে চাইল, আমি যেন মঙ্গলগ্রহ থেকে এসেছি।।
হলওয়ে এখন নির্জন, ছেলে-মেয়েরা সব তাদের হোমরুমে। সিঁড়ি ভেঙে নেমে যাওয়ার সময় মাথায় খেলে গেল এক ঘণ্টা আগে আমি ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে কী কী ঘটেছে।
আমি যাদেরকে চিনি তারা সবাই নাটক করছে। তারা আমাকে কেন বেছে নিয়েছে বুঝলাম না। এর শেষ কোথায় তাও জানা নেই আমার। কিন্তু আমাকে ব্যাপারটা জানতে হবে। স্কুল ফ্রন্ট অফিসটা আমার ঠিক সামনে।
অফিসে প্রবেশ করে দেখি মিসেস পোর্টার তাঁর সেক্রেটারি ডেস্কে বসা, কম্পিউটারে কাজ করছেন। মিসেস পোর্টার আমাকে ছোটকাল থেকেই চেনেন।
হাই, মিসেস পোর্টার, বললাম। তিনি মুখ তুলে চেয়ে মৃদু হাসলেন। আমি অনেকখানি স্বস্তি বোধ করলাম।
গুড মর্নিং, বললেন তিনি। আমি তোমার জন্যে কী করতে পারি?
ঠিক জানি না…ব্যাপারটা বেশ মজার। আমার প্রথমে প্রশ্ন করা উচিত-আপনিও কি এই জোকটার সাথে জড়িত?
আমার দিকে চেয়ে রইলেন তিনি।
জোক? কীসের জোক?
ভাল! ওরা মিসেস পোর্টারকে এরমধ্যে জড়াতে পারেনি। মিসেস পোর্টার আমাকে এই রহস্যের সমাধানে সাহায্য করতে পারবেন।
মানে আজ সকাল থেকে দেখছি চাচা-চাচী থেকে শুরু করে যার সাথেই দেখা হচ্ছে তারা সবাই আমাকে না চেনার ভান করছে। মিসেস ফিশার এমনকী আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন ব্যাপারটার জট খোলার জন্য। হাসির ব্যাপার না?
মাথা ঝাঁকালেন মিসেস পোর্টার, আমার দিকে চাইলেন।
তোমার নাম কী?
আমি একদৃষ্টে চেয়ে রইলাম তার দিকে। ঠিক শুনেছি তো?
আহ, মিসেস পোর্টার, আমি ভেবেছিলাম আপনি এই তামাশাটার সঙ্গে নেই, বললাম।
আমি কোন তামাশা করছি না, বললেন মিসেস পোর্টার। কিন্তু তুমি তোমার নাম না বললে আমি তোমাকে কোন সাহায্য করতে পারব না–
আমি কিশোর পাশা, মিসেস পোর্টার, আপনি কে মনে করেছেন? আমি সেভেন্থ গ্রেডার, হোমরুম ২০৩-এ আছি, ফুটবল টিমের প্লেয়ার–
চেঁচাচ্ছ কেন? বললেন মিসেস পোর্টার, কম্পিউটারের কি টিপতে লাগলেন।
আমি একটু আপসেট হয়ে পড়েছি, বললাম, প্রথমে বললেন আপনি জোকটার মধ্যে নেই, কিন্তু এখন দেখছি আছেন।
জোক হচ্ছে এখানে, বললেন মিসেস পোর্টার, কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে। কিন্তু জোকটা করছ তুমি।
তার মানে? প্রশ্ন করলাম। কম্পিউটার ফাইলে কিশোর পাশা নামে কারও রেকর্ড নেই। এখন তো নেইই, আগেও ছিল না।
৩
এই প্রথমবারের মত সামান্য আতঙ্ক বোধ করলাম।
কম্পিউটার পারফেক্ট নয়, ভুল করে, বললাম। ঘুরে তাঁর চেয়ারের কাছে এলাম। কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে দৃষ্টি আমার।
নিজেই দেখো, বললেন মিসেস পোর্টার। এখানে K অক্ষরের মধ্যে কোথাও তোমার নাম নেই।
কম্পিউটারের কথা বাদ দিন, মিসেস পোর্টার। আমার দিকে তাকান-আমি কিশোর পাশা, আমাকে আপনি ছোটকাল থেকে দেখছেন! ঠাট্টাটা অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে না, আপনিই বলুন? আমি ক্লাসে ফিরে যেতে চাই, আমার বইগুলো ফিরে পেতে চাই, এবং চাই এই ননসেন্স বন্ধ হোক!
ঘন-ঘন শ্বাস নিচ্ছি এবং আমার কাঁধ এখন রীতিমত টাটাচ্ছে। ইতিকর্তব্য ঠিক করতে পারছি না। কাউকে বিশ্বাস করার উপায় নেই। সবাই আমার সঙ্গে তামাশা করছে। এর চাইতেও খারাপ ব্যাপার…আমার সন্দেহ হচ্ছে এটা আসলেই তামাশা কিনা। কিন্তু এ ছাড়া আর কীই বা হবে। আমি এক সকালে ঘুম থেকে উঠলাম আর তারপর কেউ আমাকে চিনতে পারছে না এটা কীভাবে সম্ভব!
আহ, কিশোর… পিছন থেকে কে যেন বলল।
ঘুরে দাঁড়ালাম। গভীর ভাবনায় এতটাই ডুবে ছিলাম, টেরই পাইনি মিসেস পোর্টার কখন বেরিয়ে গিয়েছিলেন কামরা ছেড়ে এবং এখন ফিরেছেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে মিস্টার লাউয়ি, স্কুলের সাইকোলজিস্ট। সব ছাত্রের সাধারণ পরীক্ষা নেন তিনি, এবং কারও বিশেষ কাউন্সেলিঙের দরকার পড়লে তাও করেন।
মি. লাউয়ি আমার নাম ধরে ডেকেছেন।
বলুন, মিস্টার লাউয়ি? বললাম। অনুভব করলাম বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হতে পারি। স্কুলের সাইকোলজিস্টকে ডেকে এনেছেন কেন মিসেস পোর্টার?
তুমি আমার নাম জানো? বিস্মিত শোনাল মি. লাউয়ির কণ্ঠ।
অবশ্যই জানি, জবাব দিলাম। আপনি স্কুলের সাইকোলজিস্ট, ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টেলিজেন্স টেস্ট নেন।
ঠিক বলেছ, বললেন মি. লাউয়ি। তা ছাড়া যে সব ছেলে-মেয়ে সামান্য…আপসেট ফীল করে আমি তাদেরকেও হেল্প করি। তুমি কি আপসেট, কিশোর?
ভীষণ আপসেট, মিস্টার লাউয়ি। সবাই বলছে তারা আমাকে চেনে না। আপনি হলেও আপসেট হতেন।
মি. লাঙলিঙের মরবের সাধারণীড়িয়ে মন মরালাম, স্ট্রেই
হ্যাঁ, হ্যাঁ, জানি। কিন্তু, আহ্, মিসেস পোর্টার বলছেন তুমি নাকি নিজেকে এ স্কুলের ছাত্র হিসেবে দাবি করছ। কিশোর, আমরা দুজনই জানি সেটা সত্যি নয়।