আমি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম। ভ্যানটা রাস্তা ধরে দূরে স্কুলের দিকে চলে গেল।
আমি কমিনিট দেরি করে স্কুলের মাঠে পৌঁছলাম। ছেলে-মেয়েরা সামনের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে, প্রথম ঘণ্টা পড়ার অপেক্ষা করছে। রকি বীচে এখনই সম্ভবত আমি সেরা সময় কাটাচ্ছি। আবহাওয়া, ফুটবল মৌসুম, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গ-অসাধারণ।
মুসাকে দেখলাম উপরের ধাপে। ও স্কুল টিমের কোয়ার্টারব্যাক।
আমাদের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছে ও, তাদের মধ্যে জোয়ান জেনসেনও রয়েছে, সে প্রধান চীয়ারলিডার। মুসা নিশ্চয়ই মজার কিছু বলেছে, কারণ সবাই হাসছে।
অ্যাই! চেঁচিয়ে উঠে সিড়ি ভেঙে দৌড়ে উঠতে লাগলাম। কী খবর তোমাদের?
কেউ আমার দিকে চাইল না। মুসা কথা চালিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার হ্যামিল্টনদের মজা দেখাব, বলল মুসা। আমাদের পাস রিসিভাররা ওদের মত ভাল না হলেও আমরা ওদেরকে হারাতে পারব।
পাস রিসিভাররা ওদের মত নয়? মুসা আমাকে ছোট করছে কেন? আমি হ্যামিল্টনদের যে কোন পাস রিসিভারের চাইতে কোন অংশে কম নই।
মুসা, আমি এবছর আটবার টাচডাউন করেছি। সেটা নিশ্চয়ই খুব খারাপ নয়, বললাম।
এই প্রথমবারের মত দলটা ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে চাইল।
অপেক্ষা করলাম মুসা কিছু একটা বলবে। দলের সবাই আমার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে। একটু নার্ভাস বোধ করতে লাগলাম আমি।
কেউ কিছু বলছ না কেন? বললাম।
আমি বলছি, বলল মুসা। এক কদম আগে বেড়ে সরাসরি আমার চোখে চোখে চাইল। ওর চোখের দৃষ্টি দেখে মেরুদণ্ড বেয়ে হিমস্রোত নেমে গেল আমার। তুমি আমাদের চেনো দেখা যাচ্ছে, বলল ও। কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব দাও তো…তুমি কে?
২
হাসিতে ফেটে পড়লাম। ঠেকাতে পারলাম না।
তোমরা সবাই মিলে মজা করছ! বললাম।
কীসের মজা? প্রশ্ন করল জোয়ান। কে এ?
ওর এবং অন্যদের মুখের চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ওরা আমাকে চেনে না।
মুসার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম।
শোনো, মুসা, বাসাতেও মশকরা করে আমার বইয়ের ব্যাগ লুকিয়ে ক্লান্ত হয়েছে। কাজেই ইংরেজি আর বায়োলজি ক্লাসে তোমার বইগুলো আমাকে ধার দিয়ো, কেমন?
মুসারমুখের চেহারায় ব্যঙ্গ ফুটল। এক পা পিছু হটল ও।
কী বলতে শুরু করেছিল, কিন্তু এসময় স্কুলের ঘণ্টা বাজল।
মুহূর্তে সবাই স্কুল বিল্ডিঙের দিকে পা বাড়াল। আমি প্রথমে যাব তিনতলার হোমরুম ক্লাসে। সিঁড়ির দিকে এগোচ্ছি, দেখা হয়ে গেল রবিনের সঙ্গে।
অ্যাই, রবিন, পাশ কাটানোর সময় বললাম। ও আমার দিকে চেয়ে ভ্ৰ কুঁচকাল, কিন্তু চলা থামাল না। কী ব্যাপার, রবিন? কিছু হয়েছে?
রবিন পিছু ফিরে আমার দিকে চাউনি বুলাল। ভ্রূ কুঁচকানো এখনও।
কী আবার হবে? পাল্টা বলল ও। তোমাকে চিনতে পারলাম। সিঁড়ি ভেঙে নেমে গেল ও।
চিনতে পারল না মানে? আজব তো। সিঁড়ির মাথায় থেমে দাঁড়ালাম। মনে হচ্ছে সেভেন্থ গ্রেডের সবাই আমার সঙ্গে তামাশা করছে।
ছেলে-মেয়েরা দ্রুতবেগে আমার পাশ কাটাচ্ছে, শেষ ঘণ্টা পড়ার আগেই পৌঁছতে চাইছে হোমরুমে। উপলব্ধি করলাম আমারও তাই করা উচিত।
রুম নম্বর ২০৩-এ প্রবেশ করলাম। জানালার পাশে, আমার ডেস্কের উদ্দেশে পা বাড়ালাম। ওখানে পৌছে দেখি জো লেমন আমার সিটে বসা।
তুমি মনে হয় ভুল সিটে বসেছ, ডেস্কের পাশে দাড়িয়ে বললাম। জো বিশালদেহী ছেলে, মোটেই বন্ধুভাবাপন্ন নয়। নোটবইতে কী সব টুকছিল।
জো মুখ তুলল। কয়েক মুহূর্তের জন্য আমার দিকে চোখ পিটপিট করে চাইল। এবার ধীরে সুস্থে উঠে দাঁড়াল। ও আমার চাইতে পাক্কা চার ইঞ্চি লম্বা। আমার মুখের উপর আস্তে আস্তে গর্জন ছাড়ল, তুমি…আমাকে…কী…বললে?
গলাটা কেমন শুকনো ঠেকল। কাঁধের ব্যথাটা আবারও শুরু হলো।
বললাম তুমি আমার সিটে বসেছ। তুমি সবসময় আমার এক সিট পিছনে বসো। এটা কোন ব্যাপার না, কিন্তু তুমি সরে গেলে আমি আমার সিটে বসতে পারতাম।
কে এ? বলে চারধারে নজর বুলাল জো। অন্যান্য ছেলে-মেয়েরা আমাদের দিকে চেয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ শ্রাগ করল। কেউ কেউ হেসে উঠল।
বিরক্ত লাগতে শুরু করেছে আমার। বাসায় আর ক্লাসের বাইরে ঠাট্টা-ইয়ার্কি মেনে নেয়া যায়। কিন্তু ক্লাস বসতে চলেছে, এখন এসব ভাল লাগছে না। তা ছাড়া জো লেমন আমার বন্ধু নয়। ও কেন মশকরা করবে আমার সঙ্গে? আমি এমনকী ওকে পছন্দও করি না।
দেখো, জো, মশকরা করছ বুঝতে পারছি, কিন্তু আমি এখন আমার সিটে বসতে চাই। তুমি পিছনে গিয়ে-
এসময় শেষ ঘণ্টা পড়ল। মিসেস ফিশার, আমাদের হোমরুম টিচার সবাইকে চুপ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বললেন।
সবাই যার যার সিটে বসে পড়ো, বললেন তিনি। পিছনের দিকে চাইলেন। জো আমার সিটে বসা। আমি ডেস্কের পাশে বোকার মত দাঁড়িয়ে। ওখানে কী হচ্ছে? মিসেস ফিশার প্রশ্ন করলেন।
মিসেস ফিশার, জো লেমন আমার সিটে বসে আছে, ছাড়তে চাইছে না, বললাম।
মিসেস ফিশার করিৎকর্মা মানুষ। আমি জানি এ সমস্যার সমাধান এখুনি হয়ে যাবে।
কিন্তু তুমি কে, ইয়াং ম্যান? প্রশ্ন করলেন তিনি।
চারপাশে নজর বুলিয়ে নিলাম। কমুহূর্ত লেগে গেল উনি কী বলছেন বুঝতে।
আমি কে? বলতে গিয়ে গলা চড়ে গেল সামান্য। মিসেস ফিশার ফিফথ গ্রেড থেকে আমার হোমরুম টিচার।
হ্যাঁ, তোমার নামটা প্লিজ, সাড়া দিলেন তিনি।
মিসেস ফিশারও তামাশায় যোগ দিয়েছেন! ভাল ফ্যাসাদেই পড়া গেছে। কিন্তু মিসেস ফিশার তো কখনও ঠাট্টা করেন না। ঠিক করলাম আমিও খেলে যাব।