ব্যথা দিচ্ছি না; মা! জবাব দিল ও। আদর করছি।
পুশিকে ছেড়ে কিচেনের দিকে ছুটল ও। ডাইনিং টেবিলে সবাইকে দেখে খুশিতে ঝম করে উঠল ওর চেহারা। বাবা, মা, ফারিহা, তানজিয়া, শাওনি ভাই–সবাই আছে।
সবাইকে ফিরে পেয়ে খুশিতে দম আটকে এল ওর। ধেই-ধেই করে নাচার ইচ্ছেটা দমন করল বহু কষ্টে।
বোনের গলা জড়িয়ে ধরল আহ্লাদী ভঙ্গিতে। বলল, ফারিহা! আমার ছোট্ট ফারিহা!
অ্যাই! বিস্মিত কণ্ঠে বলল ফারিহা। ছাড়ো, ছাড়ো তো আমাকে!
বোনকে ছেড়ে ছুটে গেল ও শাওনির দিকে। একইভঙ্গিতে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, শাওনি ভাই, তুমি ভাল আছ তো?
কী হয়েছে তোমার, মুসা? কপাল কুঁচকে উঠল তানজিয়ার। আমি জানি কাল রাতে ভূতেরা তোমাকে কিডন্যাপ করেছিল। ওরা তোমার ব্রেন ওয়াশ করে দিয়েছে।
খেয়াল করল না মুসা। এগিয়ে এসে বোনের বেণী ধরে টান দিল।
উহ! চেঁচিয়ে উঠল তানজিয়া। ব্যথা পাচ্ছি তো!
এবার, মার দিকে এগোল মুসা। জড়িয়ে ধরে তার গালের সঙ্গে গাল ঘষতে লাগল।
দুষ্ট ছেলে কোথাকার! হেসে বললেন উনি। আদর করার ভঙ্গিতে চাপড় মারলেন পিঠে। বোসো, নাস্তা খেয়ে নাও।
বাবা বাদ থাকেন কেন?
বাবা, বলে হাত বাড়াল মুসা।
অবাক হলেও আপত্তি করলেন না তিনি। হ্যাণ্ডশেক সেরে বললেন, লক্ষ্মী ছেলের মত জলদি খেয়ে নাও। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের।
বসে পড়ল মুসা। খাওয়ায় মন দিল। সব আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ও যে হারিয়ে গিয়েছিল, কেউ খেয়াল করেনি।
আর কখনও ওই গেস্ট রুমে ঘুমাচ্ছি না আমি, মনে মনে শপথ করল ও। কক্ষনো না। নিজের ছোট্ট ঘর নিয়ে আর কোনও অভিযোগ নেই, ক্ষোভও নেই। সারাজীবন ওই ঘরে থাকতেও আর আপত্তি নেই।
.
স্কুল জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা দিন কেটেছে আজ মসার। প্রতিটি ক্লাসে পড়া পেরেছে। কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় কঠিন বিষয়গুলোও সহজ মনে হয়েছে আজ। অন্তত কলেজের আনা কারেনিনার চেয়ে অনেক সহজ ছিল।
রবিন আর কিশোরকে সব খুলে বলেছে মুসা। রবিন বিশ্বাস করেনি। কিশোর বিশ্বাস করবে কি করবে না ভাবছে এখনও। যাদের নিজেদের অদ্ভুত
সব অভিজ্ঞতা আছে, সেই তিন গোয়েন্দা সদস্যরা কেন বিশ্বাস করবে না। ভেবে ওদের উপর খেপে আছে মুসা।
টিফিন পিরিয়ডে ফুটবল খেলতে নেমে মুসা দেখল, আজ দারুণ খেলছে ও। গোলও করতে পেরেছে একটা।
ছুটির পর ক্লাস থেকে বেরোতেই থমকে দাঁড়াল মুসা কিছু একটা চোখে পড়তে।
একটা মেয়ে! এদিকেই আসছে। ওরই বয়সী হবে বোধ হয়। মাঝ পিঠ পর্যন্ত ঘন চুল বেণী করে বাঁধা। ধূসর চোখে ওর দিকে চেয়ে আছে মেয়েটা।
কে ও?
সানজানা!
জায়গায় জমে গেল মুসা। হাত-পা হিম হয়ে এল। ভাগবে না দাঁড়িয়ে থাকবে, বুঝে উঠতে পারছে না।
তার মানে রিয়্যালিটি পুলিশ এখনও আমার পেছনে লেগে আছে? ভাবল ও। নিজের চেষ্টায় স্বাভাবিক জগতে ফিরে এসেছে মুসা। ওকে চিরতরে ঘুম পাড়ানোর আর কোনও অধিকার নেই ওদের। তারপরও..
পালাতে হবে, ভাবল মুসা। ঝেড়ে দৌড় দেবে বলে রেডি হলো।
এরমধ্যে একেবারে কাছে চলে এসেছে মেয়েটা। হাসছে ওকে দেখে।
নাহ! সানজানা নয় ও। ওদের ক্লাসেরই মেয়ে, অন্য সেকশনে পড়ে অবশ্য। কী যেন নাম! মনে পড়ছে না।
যাক বাবা! তা-ও ভাল। হাঁপ ছাড়তে ছাড়তে ভাবল ও। বাঁচা গেল! ও যে-ই হোক, সানজানা যে নয়, তাতেই মুসা মহাখুশি।
কিশোর আর রবিন কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি মুসা।
কী হলো, মুসা! ওর কাঁধে হাত রাখল রবিন।
কিশোর ভারিক্কি.ঢঙে পকেট থেকে একটা গাম বের করে মুখে পুরল। অমন হাঁ করে ওই মেয়েটাকে গিলছিলে যে, ব্যাপারটা কী!
হেসে ফেলল মুসা। দুই বন্ধুর কাঁধে হাত রাখল। চলো, যে যার বাসায় যাই।
.
ড্রইং রুমে ঢুকে মাকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো মুসা। টিভি দেখছেন একা একা। এসময় তার বাসায় থাকার কথা না। ব্যাপার কী?
মা, তুমি তো বলেছিলে বিকেলে বাজারে যাবে!
হাসলেন উনি। আজ যাব না। বাসায় বিশেষ একটা কাজ আছে।
বিশেষ কাজ!
জানতে ইচ্ছে করছে, তা-ই না? টিভির সুইচ অফ করলেন মা।
হ্যাঁ, তা…
ঘরের চারদিকে নজর বোলাল মুসা। সবকিছু স্বাভাবিকই আছে মনে হচ্ছে। ওদেরই ড্রইং রুম এটা।
বিশেষ কাজটা কী, মা?
আবার হাসলেন উনি। উত্তেজিত মনে হচ্ছে।
ভুলে গেলে? আর তিনদিন পর না তোমার জন্মদিন!
আসলেই ভুলে গিয়েছিল মুসা। এতবড় বিপদে পড়লে মানুষ বাবার নাম। পর্যন্ত ভুলে যায়, জন্মদিন তো কোন ছার।
তোমার জন্যে বিশেষ একটা সারপ্রাইজ আছে, মুসা, রহস্য ঝরল মার কণ্ঠে। এসো আমার সাথে।
মার পিছন পিছন ওর ঘরের বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়াল মুসা। কীসের সারপ্রাইজ? ভাবছে মনে মনে।
সারপ্রাইজটা কি আমার রুমে? জিজ্ঞেস করল ও।
জবাব দিলেন না মা। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে বললেন, দেখো।
ভিতরে উঁকি দিল মুসা। মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত অনেকগুলো কার্টন দেখে কোঁচকাল। ওদের স্টোর রুমে ছিল এগুলো।
দারুণ!
এগুলোর মধ্যে কী মা, আমার জন্যে গিফট? খুশি হয়ে উঠল ও।
গিফট? এত গিফট কেউ পায় নাকি?
ঠিক বলেছেন মা। তবু যা আশা করেছিল মুসা, সেটাই যদি হতো, দারুণ হতো! দেখে শেষ করা যেত না।
তা হলে… কীসের সারপ্রাইজ? অনিশ্চয়তা ফুটল মুসার চেহারায়।
মুসা, শুরু করলেন মা। বিষয়টা নিয়ে আমি অনেক ভেবে দেখেছি। আসলে তুমিই ঠিক। তোমার ঘরটা সত্যিই খুব ছোট। তা-ই এটাকে স্টোর। রুম বানানো হয়েছে।